বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বিরল বৈঠক করছে চীনা কর্তৃপক্ষ

0
167
চীনের পতাকা

বিশ্বের বৃহত্তম বিনিয়োগকারীদের নিয়ে এক বিরল সম্মেলনের আয়োজন করছে চীনের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। এই সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে ধীরগতি ও ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেও বিনিয়োগকারীদের সে দেশে বিনিয়োগ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, আগামী শুক্রবার অনুষ্ঠেয় এই বৈঠকে চীনে মার্কিন ডলারভিত্তিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা ও তারা কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, সে বিষয়ে আলোচনা হবে। বিষয়টি সম্পর্কে সম্যকভাবে অবহিত তিনটি সূত্র রয়টার্সকে এই সংবাদ জানিয়েছে।

এমন এক সময়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন বৈশ্বিক বিনিয়োগকারী ও ব্যাংকগুলো চীনের অর্থনীতি সম্পর্কে সতর্কবাণী দিচ্ছে। চীনের কোভিড–উত্তর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম গতি হারিয়েছে। অন্যদিকে, তাইওয়ানসহ অন্যান্য জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের যেমন অবনতি হচ্ছে, তেমনই যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ প্রযুক্তি রপ্তানি বন্ধ করেছে এবং চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত শিল্পনীতি প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

 এভাবে বিনিয়োগকারীদের সমস্যা-সংকট নিয়ে চীনের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর বৈঠক করা বিরল এক ব্যাপার। এতে বোঝা যাচ্ছে, চীন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে পেতে আগ্রহী।

সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বড় বিদেশি ও দেশি তহবিল ব্যবস্থাপক যেমন বেসরকারি ইকুইটি ফার্ম, তাদের বিনিয়োগকারী ও অংশীদারেরা এই বৈঠকে অংশ নেবে, যাদের মধ্যে আরও আছে সার্বভৌম সম্পদ তহবিল ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান।

বৈশ্বিক কোম্পানিগুলোর চীনবিষয়ক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও জ্যেষ্ঠ নির্বাহীরা এই বৈঠকে অংশ নেবেন বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। তবে সূত্রগুলো নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে এই খবর দিয়েছে।

২০২২ সালের বড় একটি সময়ে চীনে কোভিডজনিত বিধিনিষেধ ছিল, যদিও বছরের শেষভাগে গণবিক্ষোভের মুখে তারা বিধিনিষেধ তুলে নেয়। এর প্রভাবে গত বছর চীনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে কয়েক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন, মাত্র ৩ শতাংশ। এরপর চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধির পালে কিছুটা হাওয়া লাগে, কিন্তু সেটি ছিল ক্ষণস্থায়ী। এর মধ্যে চীনের নীতিগত অবস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশের সঙ্গে চীনের উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।

এদিকে কোভিড মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠান চীন ছাড়তে শুরু করেছে। ভূরাজনৈতিক এই উত্তেজনার সঙ্গে আছে চীনের নীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা।

গত কয়েক বছর ধরে দেশটির সরকার বেসরকারি খাত, বিশেষ করে প্রযুক্তি খাতের রাশ যেভাবে টেনে ধরছে, তাতে ইকুইটি বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ নিয়ে অনিশ্চয়তার পড়েছেন। এতে তাদের বিনিয়োগের সুযোগও সংকুচিত হচ্ছে বলে মনে করছে তারা।

কানাডার বড় পেনশন তহবিল অন্টারিও টিচার্স পেনশন প্ল্যান গত জানুয়ারি মাসে বলেছে, তারা আর চীনের বেসরকারি সম্পদে বিনিয়োগ করবে না।

তবে সংবাদে বলা হয়েছে, এই বৈঠক আয়োজনের মধ্য দিয়ে চীনের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বার্তা দিচ্ছে যে ২০২০ সালের শেষভাগে বেসরকারি খাতের ওপর যেভাবে শৃঙ্খলামূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তা অ্যান্ট গ্রুপ ও টেনসেন্টের ওপর সম্প্রতি আরোপিত জরিমানার মধ্য দিয়ে শেষ হতে যাচ্ছে।

চীনের প্রধানমন্ত্রী লি ছিয়াং গত বুধবার আলিবাবার ক্লাউড ইউনিট ও মেইতুয়ানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে তাদের প্রতি লি ছিয়াংয়ের অনুরোধ ছিল, চীনের অর্থনীতির গতি বাড়াতে তারা যেন আরও উদ্যোগী হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.