যে কাজই করুন নিজের জানান দিন

0
123
ফটােগ্রাফার

পেট্রা কলিন্স। কানাডিয়ান আর্টিস্ট ও ফটােগ্রাফার। হাঙ্গেরির বংশোদ্ভূত ফ্যাশনসচেতন ও সাহসী এই তরুণীর বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণামূলক কথা তুলে এনেছেন মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ।

জনপ্রিয়তা বা খ্যাতি কে না চায়! আর অল্প বয়সে খ্যাতিলাভের সবচেয়ে সহজ উপায় সম্ভবত বিনোদন জগতে নাম লেখানো, অথবা খেলার মাঠে দেখানো নিজ ক্যারিশমা। রাতারাতি তারকাখ্যাতি লাভ করার এমন সহজ পথেই অধিকাংশ তরুণ-তরুণী হাঁটতে চাইলেও, কেউ কেউ নিশ্চয়ই ব্যতিক্রম থাকেন। তাঁরা নেপথ্যে থেকে নিজের সৃজনশীলতার জাদু দেখাতে থাকেন। হয়েতা আমি সেই দলেরই একজন!

রায়ানের কাছে পাঠ
তাই তো আমি নাম লেখাইনি সিনেমায়। যাইনি খেলার মাঠে। হাতে তুলে নিয়েছি ক্যামেরা। তবে সবসময় নিজের দেশকে মাথায় নিয়েই পথ চলি। আমার জন্ম কানাডার সবচেয়ে জনবহুল শহর টরন্টোয়। ২১ ডিসেম্বর ১৯৯২ সালে। বেড়ে ওঠাও এ শহরের আলো-হাওয়ায়। পড়াশোনা করেছি শিল্পভিত্তিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় রোজডেল হাইটস স্কুল অব দ্য আর্টস-এ। এ বিদ্যালয়ে পড়াকালেই, বয়স যখন উড়ু-উড়ু, মানে কৈশোরে, ফটোগ্রাফির প্রতি দুর্নিবার টান অনুভব করি আমি। শুরু করি ফটোগ্রাফি শিল্পের চর্চা। এ সময়ে ঘটনাচক্রে আমার পরিচয় ঘটে আমেরিকান বর্ষীয়ান আন্ডারগ্রাউন্ড ফিল্মমেকার, লেখক ও ফটোগ্রাফার রিচার্ড কার্নের সঙ্গে। রিচার্ডই হয়ে ওঠেন আমার ফটোগ্রাফির আদিগুরু। এ সময়ে আমেরিকার আরেক গুরুত্বপূর্ণ ফটোগ্রাফার রায়ান ম্যাকগিনলির সঙ্গেও আলাপ হয়। হয়ে উঠি রায়ানের বিশেষ শিক্ষার্থীদের একজন।

হঠাৎ দুর্ঘটনা…
দিনে দিনে শিল্পজগতে বিচরণ বাড়াতে থাকি। নানা জায়গার প্রদর্শিত হতে থাকে আমার তোলা ছবি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও আমার সৃজনশীলতার জাদু নজর কাড়ে অনেকের। তবে ২০১৩ সালে ইনস্টাগ্রামে আমার একটি একান্ত ব্যক্তিগত ফটোগ্রাফি কেউ একজন ফাঁস করে দিলে, প্রতিবাদে জনপ্রিয় এই যোগাযোগ মাধ্যমটির নিজ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হই। তবে আমি নিজের ওপর বিশ্বাস হারাইনি। বরং নিজেকে আরও শক্ত করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। সেই সঙ্গে আশপাশে এমন হেনস্তার শিকার নারীদের দিকে দৃষ্টি দিই।

প্রতিবাদের ভাষা
কেবল অনলাইনেই নয়, নানা মাধ্যমে, বিশেষত ফটোগ্রাফির মধ্য দিয়ে নারীকে অবমাননাকর রূপে প্রকাশ করার প্রতিবাদে, আমেরিকান প্রভাবশালী নিউজ ওয়েবসাইট– ‘দ্য হাফিংটন পোস্ট’-এ সুচিন্তিত এক প্রবন্ধ লিখি। এই প্রবন্ধ যে উদ্দেশ্যে লিখেছি তার অনেকটাই সার্থক হয়েছে বলে মনে করি। প্রবন্ধটি নজর কাড়ে সাধারণ পাঠক থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবীদের পর্যন্ত। কেবল তাই নয়; লেখাটি রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায়। পরিণামে অনেকেই আমাকে আগের চেয়েও বেশি সম্মান দিতে থাকেন এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে গণ্য করতে থাকেন।

ফের কাজে মন
এরপর আস্তে আস্তে যেন সব বদলাতে থাকে। তবে এই বদলটা হতো না, যদি আমি লেজ গুটিয়ে বসে থাকতাম। আসলে আপনি যেখানেই থাকুন, যে কাজই করুন না কেন সবসময় নিজের জানান দেওয়ার চেষ্টা করুন। তা না হলে সবচেয়ে কাছের মানুষটিও ফায়দা লুটার চেষ্টা করবে। সে যাক, আমি ফের কাজে মন দিই। ফটোগ্রাফার হিসেবে একে একে প্রদর্শনী করতে থাকি। আমার ফটোগ্রাফি শোভা পেয়েছে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, নরওয়ে ও ইতালির নানা গুরুত্বপূর্ণ শহরের বেশ কিছু মর্যাদাপূর্ণ আর্ট গ্যালারিতে। এর মধ্যে ২০১১ ও ১২ সালে টরন্টোতে; ২০১৩ সালে মায়ামি ও নিউইয়র্কে; ২০১৪ সালে মায়ামি এবং নিউইয়র্কে; ২০১৫ সালে সান ফ্রান্সিসকো ও ফ্রান্সের প্রদর্শনীগুলো উল্লেখযোগ্য। ইতোমধ্যে আমার ‘ডিসচার্জ’ ও ‘বেব’ শিরোনামে দুটি ফটোগ্রাফি গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে।

কাজের দুনিয়া
কেবল ফটোগ্রাফিই নয়; লেখালেখি ও ফিল্মমেকিংয়ের প্রতিও প্রবল আগ্রহ আমার। সেই সঙ্গে আগ্রহ আছে হাঙ্গেরির প্রতিও। কেননা আমি হাঙ্গেরির বংশোদ্ভূত। ফেলে আসা শৈশবস্মৃতি, চমৎকার গ্রামীণ ল্যান্ডস্কেপ ও হাঙ্গেরিয়ানদের বিশেষত্বের সাক্ষ্য ধারণ করে। এসব নিয়ে ‘অ্যা হাঙ্গেরিয়ান ড্রিম ফর গুচি আইওয়্যার’ শিরোনামে একটি নিরীক্ষাধর্মী শর্টফিল্মও নির্মাণ করেছি। আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি আর নিজের জানান দিয়ে যাচ্ছি। এটি অব্যাহত থাকবে আজন্ম! n

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.