বিজ্ঞাপনের আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের অর্জন

0
182
কিশওয়ার ও সাফানাত

পাতায়া শহরে তখন সবে অন্ধকার নেমেছে, থাইল্যান্ডের সময় অনুযায়ী সন্ধ্যা সাতটা। এর মধ্যেই লোকে গমগম করছে পাতায়া এক্সিবিশন অ্যান্ড কনভেনশন হল। উপলক্ষ—অ্যাডফেস্ট-২০২৩-এর সমাপনী পর্ব।

ঘোষণা হবে বিজয়ীদের নাম। উপস্থিত দর্শকদের মধ্যে তাই চাপা গুঞ্জন। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিজ্ঞাপন জগতের সেরাদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন সবাই।

কলাগাছের আঁশ থেকে স্যানিটারি প্যাড?

অনুষ্ঠানের প্রথম ভাগেই মর্যাদাপূর্ণ ইয়াং লোটাস অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী দলের নাম ঘোষণা করেন উপস্থাপিকা। উল্লাস, করতালি আর চড়া মিউজিক ছাপিয়ে শোনা যায়—টিম ঢাকা! মঞ্চের পেছনের বিশাল পর্দায় তখন দেখা যাচ্ছে দুই বাংলাদেশি তরুণীর ছবি—সাফানাত হুসেইন ও কিশওয়ার কানিজ।

সাফানাত ও কিশওয়ার দুজনই এশিয়াটিক মার্কেটিং কমিউনিকেশনস লিমিটেডের কর্মী। সাফানাত স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক এবং কিশওয়ার ক্রিয়েটিভ বিভাগের জ্যেষ্ঠ ভিজুয়ালাইজার হিসেবে যুক্ত আছেন। দুজনের কাজের ক্ষেত্র ভিন্ন। অ্যাডফেস্টে যাওয়ার আগে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগও কখনো হয়নি। তাহলে এই দুজন জুটি হলেন কী করে?

ইংরেজিভীতি জয় করে যেভাবে ব্র্যাকের সনদ পেলেন অফিস সহকারী মোবারক

এশিয়াটিক এমসিএল-এর চিফ স্ট্র্যাটেজি অফিসার ফারুক শামস জানান, আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিযোগিতা বা উৎসবে অফিস থেকে প্রতিযোগীদের নাম চাওয়া হলে প্রথমেই তাঁরা অফিসে অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করেন। সেখান থেকে সেরা প্রতিযোগীকে বাছাই করা হয়। অ্যাডফেস্ট কর্তৃপক্ষ যখন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং কর্মশালায় অংশগ্রহণের জন্য দুজন প্রার্থীর নাম চায়, তখন এশিয়াটিক থেকে বাছাইপ্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য দুই ধাপের একটি প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়। প্রায় ৪০ জনের মধ্য থেকে ইয়াং লোটাস কর্মশালার জন্য সাফানাত হুসেইন ও কিশওয়ার কানিজকে নির্বাচিত করা হয়। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়ার জন্য কিশওয়ার ও সাফানাত পেয়েছিলেন সর্বসাকল্যে দেড় সপ্তাহ! জাপান, কোরিয়া, লাওস, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ভারতসহ ১৫টি দেশ থেকে মোট ৩০ প্রতিযোগী ইয়াং লোটাস কর্মশালার জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত এই জুটিই বাংলাদেশের হয়ে জিতে নিয়েছে ইয়াং লোটাস পুরস্কার।

‘বিজয়ী হিসেবে যখন আমাদের নাম উচ্চারিত হলো, তখন আমরা একে অপরের হাত ধরে বসে ছিলাম। কিছুক্ষণের জন্য দুজনই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। শুধু এটুকু বুঝেছিলাম যে আশপাশ থেকে সবাই আমাদের মঞ্চে যেতে বলছে। মঞ্চে ওঠার পর আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। আমাদের নিজের জন্য শুধু নয়, বাংলাদেশের জন্যও অ্যাডফেস্টে এটা বড় অর্জন’, পুরস্কার প্রাপ্তির মুহূর্তটা এভাবেই বর্ণনা করলেন কিশওয়ার। সাফানাত জানালেন, ‘আমরা পুরস্কারটা পাই ২৫ মার্চ। পরদিন ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। সে মুহূর্তে মনে হচ্ছিল দেশকে সত্যি কিছু দিতে পারলাম।’ ফারুক শামস মনে করেন, এই অর্জন বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর জন্য বড় অনুপ্রেরণা। সৃজনশীল খাতে বিশ্বমানের অন্যান্য সংস্থাকেও বাংলাদেশ টেক্কা দিতে পারে, সেই আত্মবিশ্বাস গড়ে দেয় এসব সম্মাননা।

ইয়াং লোটাস অ্যাওয়ার্ড মূলত অ্যাডফেস্টের একটি বিশেষ আয়োজন। এখানে বিজ্ঞাপনী খাতের সঙ্গে যুক্ত অনূর্ধ্ব ৩০ বছর বয়সীদের একাধিক দলের মধ্য থেকে সবচেয়ে সৃজনশীল ও প্রতিভাবান দলটিকে সম্মাননা দেওয়া হয়। প্রায় আড়াই দিনের কর্মশালা শেষে প্রতিযোগীদের একটি ক্যাম্পেইন তৈরি করতে বলা হয়, সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় ২৪ ঘণ্টা। প্রতিযোগীদের তৈরি ক্যাম্পেইন যাচাই–বাছাইয়ের জন্য থাকে জুরিবোর্ড। এ কর্মশালার মধ্য দিয়ে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের তরুণ কর্মীদের বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি করা হয়। এ ছাড়াও নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ তো থাকেই। ২১ মার্চে শুরু হওয়া এ উৎসবের সমাপ্তি হয় ২৫ মার্চ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.