ফরিদপুরে আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘ইদানীং সবার মধ্যে কেমন যেন একটা অসহনশীলতা দেখা যাচ্ছে। এ অসহিষ্ণুতা বিচার বিভাগকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হলে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে, রাষ্ট্রের অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাহলে আমরা আইনের শাসনের জন্য যে সংগ্রাম করে যাচ্ছি, তা প্রতিষ্ঠা করতে পারব না।’
আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর আইনজীবী সমিতি ভবনে আইনজীবীদের আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ওহিদুজ্জামান। সভা পরিচালনা করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ ব্যাপারী।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনাদের ভাবতে হবে, আপনারা আদালতের অংশ। আপনাদের সাহায্য ছাড়া আদালত ঠিকমতো সচল রাখা সম্ভব নয়। আমরা আইনজীবী ও বিচারকেরা মিলে একসঙ্গে চেষ্টা করতে চাই, যেন মামলার জট ছেড়ে যায়। আমি মনে করি, জুডিশিয়ালিতে বিচারক যদি হয় ডান হাত, তাহলে আইনজীবী বাম হাত। এক হাত যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে কাজ ঠিকমতো হবে না।’
প্রধান বিচারপতি ফরিদপুরের মামলার নিষ্পত্তির হার বেশি হওয়ায় বিচারক ও আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, গত এক বছরে ফরিদপুরে ২৫ হাজার ৫৫৭টি মামলা হয়েছে। নিষ্পত্তি হয়েছে ৩০ হাজারের বেশি মামলা। এসব বিষয় আশা-জাগানিয়া।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে জেলা ও দায়রা জজ আকবর আলী শেখসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিচারক এবং ফরিদপুর আইনজীবী সমিতির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রধান বিচারপতি ফরিদপুরে জজ কোর্ট প্রাঙ্গণে ন্যায়কুঞ্জ নামে একটি বিশ্রামাগার স্থাপনের জন্য ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন। বিচারসংক্রান্ত কাজে আসা ব্যক্তিরা সেখানে বিশ্রাম নিতে পারবেন। এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, দেশে ৪০ লাখ মামলা বিচারাধীন। এসব মামলায় কমপক্ষে চার কোটি লোক জড়িত। তাঁদের কথা চিন্তা করে এ বিশ্রামাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখানে পানি পান ও শৌচাগারের সুবিধা থাকবে তাঁরা। বিচার চাইতে এসে যেন কাউকে এলোমেলো ঘোরাফেরা করে দুর্ভোগে পড়তে না হয়, এ জন্য এই ব্যবস্থা।
প্রধান অতিথি আরও বলেন, এসব বিশ্রামাগার নির্মাণের জন্য আইন মন্ত্রণালয় ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রতিটি জেলা এ বিশ্রামাগার নির্মাণের জন্য ৫০ লাখ টাকা পাবে।
অনুষ্ঠান উপলক্ষে আজ সকাল ১০টার দিকে প্রধান বিচারপতি ঢাকা থেকে সড়কপথে ফরিদপুর আসেন। তাঁকে সার্কিট হাউসে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। পরে তিনি ফরিদপুরে কর্তব্যরত বিচারকদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। তিনি আদালত চত্বরে একটি গাছও রোপণ করেন। পরে বিচারক দুপুরে রাজবাড়ীর উদ্দেশে রওনা দেন।