লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া সীমান্তে আবারও শূন্যরেখা বরাবর জোর করে কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গত শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) সকালে বিপুল সংখ্যক ভারতীয় শ্রমিক দিয়ে দেড় কিলোমিটারের কাঁটাতারের বেড়াটি নির্মাণ করে বিএসএফ। যদিও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা সীমান্ত আইন লঙ্ঘন করে বেড়া নির্মাণের প্রতিবাদ জানালে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় বিএসএফ সদস্যরা। এরপর থেকেই ওই ইউনিয়নের জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) সরেজমিনে সীমান্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইউনুস আলীর ওয়ার্ডে এই বেড়া নির্মাণ হয়েছে। সীমান্ত এলাকা একেবারেই সুনসান নীরব। নিজেদের জমি চাষে নামতেও ভয় পাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইউনুস আলী বলেন, ‘বেড়া নির্মাণের পর স্থানীয়রা বেশ আতঙ্কিত। কিছু কিছু স্থানে ওপারে বিএসএফ বাঙ্কার নির্মাণ করেছে। বিজিবিরও টহল বেড়েছে। সব মিলিয়ে আতঙ্কে আছি আমরা।’
স্থানীয়রা বলছেন, পিলার থেকে পিলার বেড়া দিতে গিয়ে কোথাও কোথাও সীমান্ত পার করেছে বিএসএফ। বেড়া নির্মাণকে ঘিরে চলমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কৃষকরা তাদের জমিতে নামতে ভয় পাচ্ছেন। সীমান্ত সড়কটি চলাফেরা একেবারে কমেছে। স্থানীয়রা এতে বিপাকে পড়েছেন। তাদের দাবি, বিষয়টি সরকারকে দ্রুত দেখা উচিত।
লালমনিরহাট ৫১ বিজিবি সহকারী পরিচালক (এডি) আমির খসরু বলেন, ‘আমরা চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। বিজিবির জনবল বৃদ্ধি করেছি। বিএসএফ সরে গেছে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। একটি ক্রস মিটিং হয়েছে। কোনো পক্ষই কোনো ধরনের স্থাপনার কাজ করবে না।’
৫১ বিজিবির পানবাড়ি কোম্পানি কমান্ডার জামিল আহমেদ বলেন, বিজিবি টহল দলের সদস্যরা সার্বক্ষণিকভাবে সীমান্তে অবস্থানের পাশাপাশি নজরদারি বৃদ্ধি করেছেন।
সেদিন যা ঘটেছিল
১০ জানুয়ারি ওই সীমান্তের প্রধান পিলার (ডিএএমপি) ৮ নম্বরের উপপিলার ২৩ থেকে ২৮ নম্বরের শূন্য রেখা সীমান্তে বেড়া নির্মাণ করতে থাকে। এতে আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন অনুযায়ী শূন্য রেখা হতে দেড়শ গজের মধ্যে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করার নিয়ম না থাকলেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সেটি না মেনে আকস্মিকভাবে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকাজ শুরু করে। পরে এ নির্মাণ কাজে বিজিবি বাঁধা দিলে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় বিএসএফ।
পরে বিএসএফের সদস্যরা বিপুল পরিমাণ ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সীমান্তে অবস্থান নেয়। এতে কিছু সময় নির্মাণকাজ বন্ধ রাখলেও পরে কয়েক শ’ বিএসএফ সদস্য আরও লোকজন নিয়ে আবারও বেড়া স্থাপনের কাজ করতে থাকে।
পরিস্থিতি থমথমে
সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই সীমান্তে বিএসএফ অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করেছে। দহগ্রাম ইউনিয়ন সীমান্তে বিজিবিকেও সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে। এপারে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।