বিএনপি–জামায়াতের ২২ কাউন্সিলর প্রার্থীর ভোটের হিসাব–নিকাশ

0
123
সিটি করপোরেশন

বরিশাল সিটি করপোরেশনের গত দুটি নির্বাচনে বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভালো করেছিলেন। দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পরও এবারের নির্বাচনে মাঠে আছেন বিএনপির ১৮ কাউন্সিলর প্রার্থী। জামায়াতেরও প্রার্থী আছেন ৪ জন। এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের বাধাবিপত্তি ছাড়াই তাঁরা প্রচার চালাতে পেরেছেন। তবে নির্বাচনের দিনের পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কিত এসব প্রার্থী। এই কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থক ও ভোটাররা মেয়র নির্বাচনে কী ভূমিকা নেবেন, এই হিসাব–নিকাশও এখন চলছে।

বরিশাল সিটির নির্বাচনের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতা, রাজনীতি–সচেতন ব্যক্তি ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা হয়। তাঁদের মতে, বরিশাল সিটির আগের নির্বাচনগুলোর কাউন্সিলর পদে বিএনপির প্রার্থীদের অভিজ্ঞতা ভালো। এবার দলের সমর্থন না থাকলেও প্রার্থীরা নিজেদের মতো করে প্রচার চালাতে পেরেছেন। আর অধিকাংশ ওয়ার্ডেই কাউন্সিলর প্রার্থী আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি প্রার্থী রয়েছে। এই বিষয়টিও বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের সুবিধা দিতে পারে।

বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার অবস্থানে থেকে বিএনপি পাঁচ সিটির নির্বাচন বর্জন করেছে। যদিও কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয় না। এবার বিএনপি কাউন্সিলর পদেও দলীয় নেতা–কর্মীদের নির্বাচন না করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু দলের  সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ডে বিএনপির ১৫ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩ জন প্রার্থী হয়েছেন। তাঁদের সবাইকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে দলটি। তাঁদের সঙ্গে বহিষ্কার করা হয়েছে মেয়র পদপ্রার্থী সাবেক ছাত্রদল নেতা ও সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসানকেও।

তবে জামায়াতের যে চারজন নেতা বরিশালে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, দলটি তাঁদের কোনো বাধা দেয়নি এবং সাংগঠনিক কোনো ব্যবস্থাও নেয়নি।

গত ২৬ মে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার শুরু হয়। আজ রাত ১২টায় আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হবে। ভোট গ্রহণ সোমবার। প্রচারের সময়ের পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের পাঁচজন কাউন্সিলর প্রার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁরা বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে চলা এই নির্বাচনী প্রচারে সব প্রার্থী সমান সুযোগ পেয়েছেন। তাঁদের নির্বাচনী প্রচারে প্রশাসন বা ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা কোনো ধরনের বাধা দেননি। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তাঁরা এমন পরিবেশ পাননি। তাঁরা মনে করেন, ভোট সুষ্ঠু হলে বিএনপির বহিষ্কার হওয়া প্রার্থীদের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর নির্বাচিত হতে পারেন, এমন সম্ভাবনা তাঁরা দেখছেন।

১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ায় দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন নগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা এখন পর্যন্ত বেশ ভালো। এবার কোনো ধরনের চাপ নেই, হুমকি বা প্রচারে বাধা দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। কেন্দ্রের এজেন্ট তালিকা করেছি। এখন ভোটের দিন কোনো বিশৃঙ্খলা এবং অনিয়ম না হলে বলা যাবে শতভাগ সুষ্ঠু ভোট হয়েছে।’

সংরক্ষিত ২ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর জাহানারা বেগমকে মহানগর বিএনপির সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদপ্রার্থী। জাহানারা বেগম নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘ভালোয় ভালোয় ভোটটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলেই ভালো হয়।’

অতীত অভিজ্ঞতা ভালো বিএনপির

বরিশাল সিটি করপোরেশনে ২০১৩ সালের নির্বাচনে অধিকাংশ ওয়ার্ডে বিএনপি–সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন। ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৯টিতেই বিএনপির প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন। জামায়াত জিতেছিল ১টিতে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা জিতেছিলেন মাত্র ৫টি ওয়ার্ডে।

পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনে মেয়র পদের পাশাপাশি কাউন্সিলর পদগুলোতেও নিজেদের প্রার্থীদের জেতাতে মরিয়া ছিল আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে ৩০টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদের ৬টিতে বিএনপির প্রার্থীরা জয়ী হন।

এবার বিএনপির যেসব নেতা কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন, তাঁরা জয় নিশ্চিত করতে নিজেদের সমর্থক-ভোটারদের কেন্দ্রে হাজির করবেন। মেয়র পদে বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। ফলে এই ভোটারদের ভোট মেয়র পদের বিজয়ী নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা রয়েছে।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের ধারণা, বিএনপি সমর্থন করেন, এমন ভোটারদের ভোট ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ফয়জুল করিম, জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসানের (রূপণ) মধ্যে ভাগাভাগি হবে। তবে সাবেক ছাত্রদল নেতা ও সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল এই ভোটারদের প্রথম পছন্দ হয়ে উঠতে পারেন।

মাঠে আছেন জামায়াতের প্রার্থীরাও

২০১৩ সালের নির্বাচনে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে জয়ী হয়েছিলেন বরিশাল মহানগর জামায়াতের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক মো. সালাউদ্দিন। এবারও তিনি কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন। সালাউদ্দিনসহ বরিশালের চারটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জামায়াতের প্রার্থীরা। জামায়াতের প্রার্থীরাও গতকাল পর্যন্ত কোনো ধরনের বাধাবিপত্তি ছাড়াই প্রচার চালাতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন।

মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা নির্বিঘ্নে প্রচার চালাচ্ছি। কর্মী-সমর্থকদের ওপরও কোনো চাপ বা হয়রানি নেই। আশা করি, ভোটও সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবেশে  হবে।’

নির্বাচনের প্রচার পরিস্থিতি ও বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) বরিশাল নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম বলেন, বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীরা তাঁদের ভোটারদের কেন্দ্রে নিতে পারলে কাউন্সিলর পদের পাশাপাশি মেয়র পদেও নানা হিসাব–নিকাশ হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.