বিএনপি-জামায়াতের প্রস্তাবে ছিল নতুন সিইসির নাম

0
6

নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের নাম সার্চ কমিটির কাছে শুধু বিএনপি নয়, প্রস্তাব করেছিল জামায়াতে ইসলামীও। এবি পার্টি, লেবার পার্টিসহ আরও কয়েক দলের প্রস্তাবে ছিল সাবেক এই সচিবের নাম। সূত্রের খবর, দলগুলোর আলোচনায় নাসির উদ্দীনের নাম ঠিক হয়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও দলটির সমর্থকরা রাজনীতিতে না থাকায়, তাদের প্রস্তাবে কেউ আসেনি নতুন নির্বাচন কমিশনে।

নির্বাচন কমিশনার হিসেবে শপথ নিতে যাওয়া সাবেক যুগ্ম সচিব তহমিদা আহমদের নাম ছিল বিএনপির প্রস্তাবে। আর জামায়াতের প্রস্তাবে ছিল নবনিযুক্ত আরেক কমিশনার তথা সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ারুল ইসলামের নাম। দল দুটির সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

গত আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সমর্থন জানিয়েছিলেন যে সেনা কর্মকর্তারা, তাদের একজন ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) ইকবাল করিম ভূঁইয়ার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তিনি। সংশ্লিষ্টরা জানান, সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের প্রস্তাবে আবুল ফজল কমিশনার নিযুক্ত হয়েছেন।

আরেক কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদের নাম কোনো রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবেই ছিল না। জানা গেছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের দিক থেকে এসেছে সাবেক এই জেলা জজের নাম।

গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সিইসি এবং চার নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

আগামী পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্ব পাওয়া এই কমিশনের অধীনেই পরবর্তী সংসদ নির্বাচন হবে। দেশের সব সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদেরও নির্বাচন করবে আগামীকাল রোববার শপথ নিতে যাওয়া নাসির কমিশন।

গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের অধীনে গত তিন জাতীয় নির্বাচনসহ স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে চরম অনিয়ম ও জালিয়াতির ঘটনায় পুরো ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। কাজী রকিব, নুরুল হুদা ও কাজী আউয়াল কমিশনকে বিতর্কিত নির্বাচনের সহযোগী মনে করা হয়। ২০১৪ সালে হয় একতরফা নির্বাচন, যাতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের ১৫৩ এমপি বিনাভোটে সংসদে যান। রাতের ভোট হিসেবে খ্যাত ২০১৮ সালের নির্বাচনে অস্বাভাবিক ফল হয়, দুই শতাধিক আসনে ৯০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জয়ী দেখানো হয় নৌকার প্রার্থীদের। গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ডামি ভোট হিসেবে খ্যাত। বিরোধী দলগুলোর বর্জনের কারণে নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন আওয়ামী লীগ নেতারাই।

শেখ হাসিনার পতনের এক মাস পর কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন পদত্যাগ করে। ড. ইউনূসের সরকার আওয়ামী লীগের করা আইনে নির্বাচন কমিশন গঠনে গত ৩১ অক্টোবর সার্চ কমিটি করে। এতে ১৭টি দল এবং জোট নির্বাচন কমিশনার পদে নাম প্রস্তাব করে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল এবং ক্ষমতাচ্যুতদের দোসর তকমা পাওয়া জাতীয় পার্টির কাছে নামের তালিকা চেয়ে চিঠি দেয়নি সার্চ কমিটি।

বিএনপি যে ১০ জনের নাম দিয়েছিল, তাতে সিইসি হিসেবে নাসির উদ্দীন ও সাবেক সচিব শহিদুল ইসলামের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার সংগঠনে জাতীয়তাবাদী ঘরানার কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত এহসানুল হকের স্ত্রী তহমিদা আহমদের নাম ছিল। ১১ ব্যাচের কর্মকর্তা এহসানুল হককে ‘উত্তরা ষড়যন্ত্র’-এ জড়িত অভিযোগে ক্ষমতায় এসে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছিল আওয়ামী লীগ। একই ব্যাচের কর্মকর্তা তহমিদা আহমদ আওয়ামী লীগের আমলে একাধিক মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালনের পর পাট অধিদপ্তরের পরিচালক হন।

আটজনের নাম প্রস্তাব করেছিল সার্চ কমিটিতে জামায়াত। দলটির সূত্র গতকাল শুক্রবার সমকালকে নিশ্চিত করেছে, তারা নাসির উদ্দীনের নাম প্রস্তাব করেছিল সিইসি পদের জন্য। বাকি সাতজনের মধ্যে শুধু আনোয়ারুল ইসলাম নির্বাচন কমিশনে স্থান পেয়েছেন।

এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু জানিয়েছেন, তাঁর দলও সিইসি পদে নাসির উদ্দীনের নাম প্রস্তাব করেছিল।

গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, গণঅধিকার পরিষদের তালিকা থেকে কেউ নতুন কমিশনে দায়িত্ব পাননি বলে জানা গেছে। ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট ও এলডিপির প্রস্তাবিত কেউ আসতে পারেননি কমিশনে।

নতুন কমিশনের পাঁচজনই শেখ হাসিনার শাসনামলে সরকারি চাকরি করেছেন। অবসরের পর তাদের কেউ সরাসরি রাজনীতিতে না জড়ালেও বিভিন্ন অরাজনৈতিক সংগঠনে যুক্ত ছিলেন। বিগত সরকারের শাসনের সমালোচনায় সরব না থাকলেও তারা ছিলেন নিভৃত জীবনে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.