‘বালুখেকো’ চেয়ারম্যান সেলিম খানকে ২৬৭ কোটি টাকা দিতে ডিসির চিঠি

0
147
লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সেলিম খান, ছবি:সংগৃহীত

‘বালুখেকো’ চেয়ারম্যান সেলিম খানকে সরকারি কোষাগারে ২৬৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা জমা দিতে বলেছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন। ৪ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে অনতিবিলম্বে এই টাকা জমা দিতে বলা হলেও আজ বুধবার পর্যন্ত কোনো টাকা জমা দেননি তিনি।
উচ্চ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনার ডুবোচর থেকে ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বালু তোলার বিপরীতে (র‌য়্যালটি আদায়) ওই টাকা দিতে বলা হয়। জেলা প্রশাসনের চিঠিতে বলা হয়, সরকারি কোষাগারে টাকা জমা না দিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সেলিম খান সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দিয়েছেন কি না, জানতে সন্ধ্যায় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রথম আলো। জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, ‘এখনো টাকা জমা দেননি তিনি (সেলিম খান)।’

সেলিম খান চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজের মালিক। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি পদ্মা ও মেঘনার ডুবোচর থেকে বালু তুলেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করার অভিযোগ রয়েছে। সেলিম খানের এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে গত বছরের ২ মার্চ ‘বালুখেকো’ চেয়ারম্যান তিনি শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

সেলিম খানকে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ২০২২ সালের আগস্ট মাসে জেলা বালুমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় চার বছরে সেলিম খানের প্রতিষ্ঠান মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজ কী পরিমাণ বালু তুলেছে, এর বিপরীতে সরকারি কোষাগারে কত টাকা জমা দিতে হবে, তা নির্ধারণ করতে একটি উপকমিটি গঠন করা হয়। বিভিন্ন জরিপ ও প্রযুক্তির মাধ্যমে উপকমিটি চার বছরে সেলিম খান কী পরিমাণ বালু তুলেছেন, তা নির্ধারণ করে।

চিঠিতে বলা হয়, ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ২১টি মৌজা থেকে সেলিম খান ৬৬৮ কোটি ৩৩ লাখ ২৯ হাজার ৫৮৫ ঘনফুট বালু তুলেছেন। হাইকোর্ট বিভাগের একটি রিট আবেদনের রায়ের ভিত্তিতে প্রতি ঘনফুট বালুর বিপরীতে ৪০ পয়সা রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়। এই হিসাবে ২৬৭ কোটি ৩৩ লাখ ৩১ হাজার ৮৩৪ টাকা জমা দিতে বলেছে জেলা প্রশাসন।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সেলিম খানের মুঠোফোনে কল করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সেলিম খানকে নিয়ে গত বছর প্রকাশিত প্রথম আলোর প্রতিবেদনে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা ও বালু ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বরাত দিয়ে বলা হয়, জনস্বার্থে নৌপথ সচল করার কথা বলে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বালু তুলছেন সেলিম খান। তিনি এ ক্ষেত্রে সরকারি বিধিনিষেধও উপেক্ষা করেন। তিনি উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন দেখিয়ে নদী থেকে বালু তুলেছেন। তিনি ছোট-বড় ২০০ ড্রেজার দিয়ে প্রতিদিন বালু উঠিয়েছিলেন।

অনুসন্ধানকালে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছিলেন, সেলিম খান একসময় জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। জোট সরকারের আমলে তিনি বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে ওঠাবসা করতেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য (চাঁদপুর-৩) ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির ঘনিষ্ঠ হিসেবে এলাকায় পরিচিতি পান। এর পর থেকে এলাকায় বালু তোলার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন সেলিম খান। তিনি সিনেমায়ও টাকা লগ্নি করেন। তাঁর প্রযোজিত একাধিক সিনেমা মুক্তি পেয়েছে।

সেলিম খান ব্যাপক আলোচনায় আসেন চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে। অভিযোগ উঠেছে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাব করা জায়গার বড় অংশ নামে-বেনামে কিনে নেন তিনি। এসব জমির দলিল করতে গিয়ে মৌজা দরের চেয়ে ২০ গুণ বেশি মূল্য দেখানো হয়। সরকারের কাছ থেকে কৌশলে বিপুল টাকা নিতে এমন কারসাজি করা হয়। এ নিয়েও গত বছরের ২৭ জানুয়ারি ‘মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠদের দুর্নীতির জাল’ শিরোনামে প্রথম আলোতে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

২০১৯ সালে দেশব্যাপী ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানকালেও সেলিমের নাম আলোচনায় আসে। যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সেলিম তখন কিছুদিন আত্মগোপনে ছিলেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।

মোহাম্মদ মোস্তফা

ঢাকা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.