কারখানায় চীনা নাগরিকের মৃত্যু, ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবিতে অনড় স্বজনেরা

0
95
কারখানায় নিহত চীনা অপারেটরের মৃত্যুতে পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবিতে ফটকের সামনে স্বজনদের অবস্থান। শনিবার দুপুরে নরসিংদী সদর উপজেলার দক্ষিণ শিলমান্দী এলাকায়

নরসিংদীর শতভাগ রপ্তানিমুখী একটি ডেনিম সুতা তৈরির কারখানায় অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন চীনা নাগরিক লি রোং হোয়া (৫৭)। ৩ মে ওই কারখানার একটি মেশিন চালু অবস্থায় মেরামত করার সময় তিনি মারা যান। খবর পেয়ে চীন থেকে আসা তাঁর স্বজনেরা পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবিতে টানা তিন দিন ধরে কারখানাটির প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান করছেন।

গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় অবস্থান নেওয়ার পর থেকে আজ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিন দিনের মধ্যে তাঁরা সেখান থেকে সরেননি। এরই মধ্যে কারখানা কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা দিতে রাজি হলেও নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা এতে সন্তুষ্ট নন। তাঁরা ক্ষতিপূরণ বাবদ পাঁচ কোটি টাকা দাবি করেছেন।

ফুজিয়ান ওনান টেক্সটাইল কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড নামের ওই কারখানার অবস্থান নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের দক্ষিণ শিলমান্দী এলাকায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে। দুই বছর আগে প্রতিষ্ঠিত কারখানাটির মালিকের নাম চেন ঝং হো, তিনিও চীনের নাগরিক।

নিহত লি রোং হোয়া আট মাস ধরে কারখানাটিতে কর্মরত ছিলেন। তিনি কারখানাটির চায়না বেল্ট মেশিন পরিচালনা করতেন। তাঁর লাশ ১০ দিন ধরে রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের হিমঘরে রাখা আছে।

কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, কারখানার সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ৩ মে দিবাগত রাত ১০টা ৪০ মিনিটে লি রোং হোয়া বেল্ট মেশিনে কাজ করছিলেন। সে সময় মেশিনে ত্রুটি দেখা দিলে তিনি মেশিন বন্ধ না করে চালু অবস্থাতেই তা মেরামত করতে শুরু করেন। মেশিনের ওপর দাঁড়িয়ে মেরামত করার একপর্যায়ে লি রোং ভেতরে পড়ে যান। এতে কোমর বরাবর দ্বিখণ্ডিত হয়ে ঘটনাস্থলে তাঁর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে ৭ মে চীন থেকে আসেন তাঁর স্বজনেরা। তাঁরা পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবিতে ১১ মে থেকে কারখানাটির প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন। প্রতিষ্ঠানটি ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হলেও তাঁরা এতে সন্তুষ্ট নন।

আজ দুপুরে কারখানার ফটকে গিয়ে দেখা গেছে, লি রোংয়ের স্ত্রী ঝিং মেইলিং ও ছেলে লি রংইয়ানসহ চারজন চীনা নাগরিক ফটকের সামনে বসে আছেন। তাঁদের একজনকে পাটি বিছিয়ে শুয়ে থাকতে দেখা গেছে। জেলা পুলিশ ও নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশের ১৫–২০ জন সদস্য তাঁদের ঘিরে রেখেছেন। স্থানীয় লোকজনও সেখানে ভিড় করছেন।

প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) নওশাদ আলম বলেন, প্রতিষ্ঠানের খরচে ৭ মে চীন থেকে নিহত ব্যক্তির স্বজনদের আনা হয়। চার দিন পর তাঁরা পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির মালিক ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেন। চীনের শ্রম আইন অনুযায়ী দুর্ঘটনা ঘটলে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় সর্বোচ্চ যে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে, এর চেয়ে বেশি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও তাঁরা তিন দিন ধরে ফটকের সামনে অবস্থান করছেন। তাঁরা ঢাকা থেকে খাবার আনিয়ে খাচ্ছেন। বিষয়টি সমাধানের জন্য ঢাকায় চীনের দূতাবাসেও আলোচনা হয়েছে। দূতাবাস থেকে তাঁদের ডাকা হয়েছে, সেখানেও যাচ্ছেন না তাঁরা। তাঁরা চীন থেকে একজন আইনজীবী নিয়ে এসেছিলেন, ওই আইনজীবীর কথাও শুনছেন না তাঁরা।

জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহমেদ বলেন, গতকাল বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে একজন দোভাষীর মাধ্যমে নিহত ব্যক্তির স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। এ সময় তাঁরা বলেন, কারখানার মালিক এলে আলোচনা করবেন। পরে গাজীপুর থেকে সন্ধ্যায় মালিক কারখানায় এলেও তাঁরা কোনো আলোচনায় বসেননি। পরে তাঁদের চীনা আইনজীবীকে নিয়ে আসা হলে আলোচনায় বসবেন বললে ওই আইনজীবীকে কল দেওয়া হয়। তিনি আসতে পারবেন না জানিয়ে বলেন, ‘তাঁরা আমার কোনো কথাই শুনছেন না।’ বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেন তিনি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহমেদ আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্যই তো তাঁদের নিয়ে এসেছে। ক্ষতিপূরণ নেওয়ার তো একটি প্রক্রিয়া আছে। এভাবে ফটকের সামনে বসে থাকলে তো হবে না। তাঁরা যদি কারও সঙ্গে কথা না বলেন, তাঁরা কী করতে পারেন। যেহেতু বিদেশি নাগরিক, তাই তাঁরা কোনো ঝামেলা করতে চান না। চীনা দূতাবাস থেকে সিদ্ধান্ত আসার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান বলেন, দুর্ঘটনায় ওই চীনা অপারেটরের মৃত্যুর ঘটনায় তাঁর পরিবার অস্বাভাবিক ক্ষতিপূরণ দাবি করছেন বলে জেনেছেন। তাঁরা তিন দিন ধরে কারখানাটির ফটকে অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু কারও সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় বসছেন না। এ বিষয়ে কাল রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চীনা দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.