টাকা আদায়ে জাতীয় পার্টির (জেপি) কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম বাহাদুরকে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে গত শনিবার আটকে রেখে দুই দফায় পেটান কথিত বান্ধবী ও তাঁর সহযোগীরা। পরে একটি লাল রঙের প্রাইভেট কারে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে রেখে যান তাঁরা। সেখানেই মৃত্যু হয় সালামের।
ওই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে অভিযান চালিয়ে সালামের কথিত বান্ধবী ও তাঁর মাকে গ্রেপ্তার করেছে।
আজ বুধবার শেরেবাংলা নগরে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক বলেন, শনিবার দিবাগত রাত ১১টার পর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে আবদুস সালাম বাহাদুরের (৬০) লাশ পাওয়া যায়। পরে জানা যায়, তিনি একজন ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার। লাশটি কে বা কারা ফেলে রেখে গেছে, এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও সংলগ্ন এলাকার সিসিটিভি অকার্যকর থাকায় প্রাপ্ত তথ্যগুলো পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরাও হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে তেমন কিছু জানাতে পারেননি। নিহতের ভাই আবদুল করিম খলিফা শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় মানিকগঞ্জে অভিযান চালিয়ে সালাম বাহাদুরের কথিত বান্ধবী ও তাঁর মাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
উপকমিশনার আজিমুল হক বলেন, পাঁচ-ছয় বছর আগে অভিযুক্ত মেয়েটির সঙ্গে সালামের পরিচয় হয়। মেয়েটি তখন ধানমন্ডির একটি সুপার শপে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। সালাম মেয়েটিকে (২৩) সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখান। এতে তাঁদের দুজনের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিছুদিন পর মেয়েটি বুঝতে পারেন, সালাম তাঁকে চাকরি দেবেন না। পারিবারিকভাবে জানাজানি হলে মেয়েটি সালামের সঙ্গে সম্পর্কের ছেদ টানেন। মেয়েটি ঢাকা ছেড়ে মানিকগঞ্জে তার বাড়িতে চলে যান। কিন্তু সালাম তাঁদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের করা ভিডিও মেয়েটির পরিচিতজনদের কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সম্পর্ক রাখতে মেয়েটিকে চাপ দেন। মেয়েটির সঙ্গে কথোপকথনের সূত্র ধরে সালাম ১৫ জুলাই বেলা তিনটার দিকে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে মেয়েটির বাসায় পৌঁছান। এ সময় মেয়ের মায়ের সঙ্গে সালামের কথা–কাটাকাটি হয়। টের পেয়ে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। তাঁরা একসঙ্গে সালামকে মারধর করেন। সালাম আসবেন, এই কথা মেয়ে ও তাঁর মায়ের মাধ্যমে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আগে থেকেই জানতেন। তাঁরাও সালামকে আবার মারপিট করেন। তাঁরা সালামের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে গুরতর অবস্থায় তাঁকে আটকে রাখেন। দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখার পর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। এ সময় মেয়েটির মা কয়েকজনকে নিয়ে সালামকে চিকিৎসার জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিতে লাল রঙের একটি প্রাইভেট কারে রওনা দেন। মেয়েটির মায়ের সঙ্গে আসা ব্যক্তিরা পথে নেমে যান। একপর্যায়ে মেয়েটির মা সালামকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ফেলে যান বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। প্রাইভেট কারটি জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা আজিমুল হক বলেন, মা-মেয়ের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে। ওই ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার রুবাইয়াত জামান আজ বলেন, টাকা আদায় করতে সালামকে আটকে রাখা হয়েছিল বলে তিনি শুনেছেন।
আবদুস সালাম বাহাদুর (৫৮) জেপির কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক ছিলেন। তাঁর বাড়ি পিরোজপুরের ইন্দুরকানিতে। ঢাকার ধানমন্ডিতে থাকতেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সড়ক ও জনপথ বিভাগে ঠিকাদারি করতেন।