বান্দরবানে পাহাড় ধসে, ঢলে ভেসে নিহত ৫

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

0
114
কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসে মাটি চলে আসে সড়কে। এতে একপাশ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আটকা পড়ে গাড়ি। গত শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর টাইগারপাস এলাকার

বান্দরবানের সঙ্গে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পূরবী বাস সাভির্সের ম্যানেজার সঞ্জয় সেন আজ বুধবার বেলা আড়াইটায় এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সারা দেশের সঙ্গে সন্ধ্যা নাগাদ সরাসরি সড়ক যোগাযোগ চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গত পাঁচদিন ধরে টানা বৃষ্টিতে বন্যার পানিতে বান্দরবান শহরসহ সাত উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ সময় পাহাড় ধসে এবং স্রোতে ভেসে পাঁচ পাচজনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন একজন।

মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে টানা বৃষ্টির কারণে বান্দরবানের সার্বিক দুর্যোগ পরিস্থিতি নিয়ে একটি লিখিত প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সদর উপজেলা কার্যালয়, ফায়ার সার্ভিস, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, চীফ জুডিশিয়াল কার্যালয়, নির্বাচন কমিশন অফিস, পাসপোর্ট অফিস ও বিআরটিএ অফিসে হাঁটু সমান পানি উঠেছে।

বন্যার পানি সড়কের ওপর ওঠায় গত রোববার সকাল থেকে বুধবার পর্যন্ত বান্দরবান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজারে দূর পাল্লা বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। এছাড়া জেলা শহর থেকে রোয়াংছড়ি, রুমা ও থানচি উপজেলায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। বিদ্যুৎ না থাকায় রোববার রাত থেকে ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে অধিকাংশ মোবাইল ফোন। ফলে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে না।

টানা বৃষ্টির কারণে বান্দরবান শহর এলাকার ৬০ ভাগ প্লাবিত হয়েছে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বান্দরবান সদরে ১৯২.৫ মিলিমিটার এবং লামায় ২২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মাতামুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার ২২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা পাঁচদিনের বৃষ্টিপাতে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পাহাড় ধসে প্রায় ৪৫০টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মোট ৯ হাজার ৫০০ জন আশ্রয় নিয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পাহাড় ধসে পৃথক ঘটনায় জেলা সদরে সন্ধ্যা রাণী শিল (৪০) ও বুলু শিল (২২) নামে দুইজন নিহত হয়েছেন। ছায়ারাণী তঞ্চঙ্গ্যা (৩৭) নামে একজন নারী নিখোঁজ রয়েছেন। অন্যদিকে, পাহাড় ধসে নাইক্ষ্যংছড়িতে ফংসা মারমা (৬০) ও মেনপয় ম্রো (৩০) নিহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দুইজন সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে তারা আশঙ্কামুক্ত। পাহাড়ি ঢলে ভেসে গিয়ে আলীকদম উপজেলার নয়াপাড়া ইউনিয়ন থেকে মো. মুছা (২২) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

জেলার বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র প্লাবিত হওয়ায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ছাড়া বাকি ছয়টি উপজেলা বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে। দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলায় মোট ২০৭টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় ইতোমধ্যে ৮৫ মেট্রিক টন এবং ৬ লক্ষ ২০ হাজার টাকা উপজেলাভিত্তিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরও ত্রাণ বরাদ্দ চেয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল রেসপন্স টিম এবং প্রত্যেক উপজেলায় কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, বান্দরবানে সপ্তম দিনের মতো টানা বৃষ্টি হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীসহ সকল বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। যেসব আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষ রয়েছে সেখানে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। কোথাও খাবার পৌঁছায়নি এখন পর্যন্ত এ ধরনের অভিযোগ আসেনি।

তিনি আরও বলেন, সবচেয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লামা উপজেলা। সেখানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পানিতে প্লাবিত হয়েছে। খাদ্যগুদামও প্লাবিত হয়েছে। চেষ্টা করা হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব ত্রাণ সামগ্রীসহ অন্যান্য সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়ার। মোবাইল এবং ইন্টারনেটসেবা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। পাহাড় ধসে এ পর্যন্ত পাঁচজন মারা গেছেন। এছাড়া এক নারী নিখোঁজ রয়েছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.