বান্দরবানে পাহাড় ধসের শঙ্কা, প্রশাসনের মাইকিং

0
23
ভারী বর্ষণে বান্দরবানে পাহাড় ধসের আশঙ্কা

টানা দুদিনের ভারী বর্ষণে বান্দরবানে পাহাড় ধসের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে মাইকিং করছে স্থানীয় প্রশাসন।

শুক্রবার (৩০ মে) বান্দরবান শহরের ইসলামপুর, স্টেডিয়ামপাড়া ও আশপাশের পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করা বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে মাইকিং করতে দেখা যায়।

জানা যায়, বান্দরবানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। জেলার ৭টি উপজেলা ও ২টি পৌরসভা এবং ৩৪টি ইউনিয়নে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করেই পাহাড় কেটে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে ঝুঁকিতে বাস করে এসব মানুষ। অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা এবং বৃক্ষনিধনের কারণে পাহাড় ধসে ঘটছে মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা। এসবের পরও বন্ধ হচ্ছে না বান্দরবানে পাহাড় কাটাসহ অবৈধ বসতি স্থাপন। গেলো ১০বছরে বান্দরবান জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রবল বর্ষণ ও ভূমি ধসে বিভিন্ন বয়সী নারী-শিশুসহ প্রায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন সংস্থার তথ্যমতে, বান্দরবানের ৭টি উপজেলায় এবং দুটি পৌর এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের ঢালুতে (পাদদেশে) বসবাস করছেন প্রায় লক্ষাধিক পরিবার। যার মধ্যে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজারেরও বেশি পরিবার অতিঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতে, বর্ষার শুরুতেই প্রতিদিনই মাইকিং করা হচ্ছে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে। বান্দরবানের বেশিরভাগ এলাকা পাহাড় বেষ্টিত আর তাই পাহাড় কেটে অথবা পাহাড়ের আশেপাশেই প্রতিদিনই তৈরি হচ্ছে অসংখ্য নতুন নতুন স্থাপনা। তবে পাহাড় কাটা আর ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসতরোধে প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

এ দিকে গেলো কয়েকদিন ধরে টানা মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার গভীর রাত থেকে টানা বর্ষণে শহরের বনরূপা, হাফেজঘোনা, মেম্বার পাড়াসহ বেশ কিছু নিচু এলাকায় সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও ঝড় হাওয়ায় বেশ কিছু সড়কে গাছ ভেঙে পড়ে ও পাহাড়ের মাটি পড়ে যান চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। রাতভর ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় এসব এলাকা প্লাবিত হয়ে গেছে। পাহাড়ের পাদদেশের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী বাসিন্দাদের নিরাপদে সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। এ ছাড়াও জেলার সাতটি উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যারা বসবাস করছে তাদেরকে নিরাপদে সরে যেতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে। জেলা প্রশাসন, পৌর প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন ঝুকিপূর্ণ এলাকা থেকে নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।

অপরদিকে ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের মতে, পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীরা প্রায় শ্রমিক শ্রেণির মানুষ এবং যারা ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে তাদের মধ্যে হতদরিদ্র পরিবারের সংখ্যাই বেশি। জীবিকার তাগিদে পাহাড়ের ঢালুতে পাহাড় কেটে তৈরি করা আবাসস্থলগুলোতে কম ভাড়ায় বসবাস করা যায়। কিন্তু বৃষ্টি শুরু হলেই মাইকিং করে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের জন্য অন্যত্র আবাসনের ব্যবস্থা করে না দেওয়ায় নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে যেতে চান না তারা। সরকারিভাবে স্থায়ী পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করে ঝুঁকিতে বসবাসকারীরা।

বান্দরবান মৃত্তিকা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহবুবুল ইসলাম বলেন, পাহাড় ধস তাৎক্ষণিক ঘটনা মনে হলেও এটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়ার ফসল। ভূমিক্ষয়ের মাধ্যমে পাহাড়ে ফাটল তৈরি হয় এবং ধস নামে। পাহাড় ধসের অন্যতম কারণ হচ্ছে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কাটা এবং উপযুক্ত পদ্ধতি অবলম্বন না করে পাহাড়ে চাষাবাদ করায়। তবে পাহাড় ধস বন্ধে বৃক্ষ নিধণ এবং পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে। তা না হলে প্রতিনিয়ত প্রাণহানির ঘটনা আরও বাড়বে।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত বাসিন্দাদের সরে যেতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবীদের সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও জেলা সদরসহ ৭টি উপজেলায় ২শ ২০টি অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন স্কুল-কলেজকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ ছাড়াও জেলা সদরে একটি সাইক্লোন সেন্টার রয়েছে সেটাকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে,মানুষ যেন নিরাপদে থাকতে পারে।বান্দরবানের সাত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিদের্শনা প্রদান করা হয়েছে এবং যেকোন ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলো দ্রুত পরিষ্কার ও প্রস্তুত রাখা, শুকনো খাবার মজুদ করা ও দুর্যোগ মোকাবেলায় সহায়তাকারীদের প্রস্তুত রাখার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.