রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি হিসেবে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে একটি সাময়িক বিশ্রাম শিবির (ট্রানজিট ক্যাম্প) ও একটি প্রত্যাবাসন শিবির (রিপ্যাট্রিয়েশন ক্যাম্প) নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রত্যাবাসন শুরু হলে মংডু জেলার উত্তর-পশ্চিমের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সীমান্তসংলগ্ন এলাকা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠানো হবে। পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে সাময়িক বিশ্রাম ও প্রত্যাবাসন শিবির করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) কর্মকর্তারা।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোমেন শর্মা এ বিষয়ে বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নে সাময়িক বিশ্রাম ও প্রত্যাবাসন শিবিরের জন্য আরআরআরসি থেকে সাড়ে তিন একর জায়গা চাওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর সময় সাময়িক অবস্থানের জন্য ঘুমধুমে ২০ শতক জমির ওপর সাময়িক বিশ্রাম শিবির করা হবে। সীমান্তসংলগ্ন তুমব্রুতে ৩ দশমিক ২০ একর জমির প্রত্যাবাসন শিবির হবে। সেখানে সীমান্তের তুমব্রু খালের ওপর বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সেতুর অবস্থান। খালের বাংলাদেশ অংশে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশের (বিজিবি) তুমব্রু সীমান্তচৌকি ও পূর্ব পাশে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড অব পুলিশের (বিজিপি) ঢেঁকিবনিয়া সীমান্তচৌকি রয়েছে।
কক্সবাজারের আরআরআরসি কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সুজিত কুমার চন্দ বলেন, প্রত্যাবাসন শুরু হলে রোহিঙ্গাদের প্রথমে ঘুমধুমের সাময়িক বিশ্রাম শিবিরে নেওয়া হবে। সেখান থেকে প্রত্যাবাসন শিবিরে নিয়ে দুই দেশের দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন করে মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
আরআরআরসির দপ্তরের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রত্যাবাসন শুরু হলে রাখাইনের মংডু জেলার উত্তর-পশ্চিম এলাকার বাসিন্দাদের ওই পথে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হবে। আগেভাগে প্রস্তুতি হিসেবে দুটি অস্থায়ী শিবির নির্মাণ করে রাখা হচ্ছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে দুটি অস্থায়ী শিবির নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে শিবির দুটি নির্মাণে দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়িতে দুটি প্রত্যাবাসন অবকাঠামোর জন্য মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের শরণার্থী সেলের সিনিয়র সহকারী সচিব শামীম রহমান। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, নির্মাণকাজের সবটাই তদারক করছে কক্সবাজারের শরণার্থী, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশন।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বর্বরতার শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গারা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। তাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে সম্প্রতি আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। আরআরআরসির দপ্তরের হিসাবমতে, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরে বর্তমানে ৯ লাখ ৬১ হাজার ৭২৯ জন রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে রয়েছে।