বাজেট কাটছাঁটের প্রক্রিয়া শুরু

0
5

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট সংশোধনের কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। গত বৃহস্পতিবার এক পরিপত্র জারি করে অর্থ বিভাগ বলেছে, কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ চাইতে পারবে না এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন করতে হবে। সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও এদের অধীন বিভিন্ন দপ্তর স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাকে সংশোধিত বাজেটের প্রাক্কলন আগামী ২৮ নভেম্বরের মধ্যে অর্থ বিভাগে পাঠাতে বলা হয়েছে।
‘২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন (পরিচালন ও উন্নয়ন) প্রণয়ন’ শীর্ষক পরিপত্রে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, সরকারের অগ্রাধিকার খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং চলতি অর্থবছরের বাজেট সুষ্ঠু ও সময়মতো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। পরিচালন এবং উন্নয়ন বাজেটে বিদ্যুৎ, পেট্রোল, অয়েল ও লুব্রিকেন্ট এবং গ্যাস ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ করা অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে।

পরিপত্রে বলা হয়, উন্নয়ন ও পরিচালন বাজেটের আওতায় মোটরযান, জলযান, আকাশযানসহ সব ধরনের যানবাহন কেনা বন্ধ থাকবে। তবে পরিচালন বাজেটের আওতায় ১০ বছরের বেশি পুরোনো যানবাহন প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিয়ে অর্থ ব্যয় করা যাবে। পরিচালন বাজেটের আওতায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ছাড়া নতুন আবাসিক ভবন, অনাবাসিক ভবন এবং অন্যান্য ভবন ও স্থাপনা খাতে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। তবে চলমান নির্মাণকাজ ন্যূনতম ৭০ শতাংশ শেষ হয়ে থাকলে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় নির্বাহ করা যাবে।
ভূমি অধিগ্রহণ খাতে পরিচালন বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারের নিজস্ব অর্থে সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ, কর্মশালা ও সেমিনারে অংশগ্রহণও বন্ধ থাকবে। তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এ সংক্রান্ত গত ৪ জুলাই অর্থ বিভাগের জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে।
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার অবশ্যই মূল বাজেটে উল্লিখিত মোট ব্যয়সীমার (পরিচালন ও উন্নয়ন) মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। উন্নয়ন ব্যয়ের বাজেটের মধ্যে কোনো অর্থ অব্যয়িত থাকবে বলে মনে হলে ওই অর্থ কোনোভাবেই পরিচালন বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না।
মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংশোধিত পরিচালন ব্যয়ের জন্য কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বেতন-ভাতা খাতে ব্যয়ের হিসাব প্রণয়নে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের প্রকৃত ব্যয়ের হিসাব বিবেচনায় নিতে হবে। সাধারণভাবে গত দুই অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম চার-পাঁচ মাসের প্রকৃত ব্যয়ের ধারার ভিত্তিতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত প্রাক্কলন তৈরি করতে হবে। রাজস্ব প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অবলম্বন করে নতুন প্রাক্কলন তৈরি করতে হবে। চলতি অর্থবছরে অর্থ বিভাগের অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকলে সংশোধিত বাজেটে তা উল্লেখ করতে হবে।

সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নে ১৩ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্প সংখ্যা সীমিত রাখা, মূল সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দহীন কোনো প্রকল্প না রাখা, সরকারের কৌশলগত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের আলোকে অগ্রাধিকার বাছাই করে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দেওয়া এবং সংশোধিত এডিপির মূল অংশে বরাদ্দবিহীন কোনো প্রকল্প না রাখা।
পরিপত্রে আরও বলা হয়েছে, ধীরগতির প্রকল্প থেকে বরাদ্দ কমিয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন গতির গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ দিতে হবে। বরাদ্দের ক্ষেত্রে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বন্যা-উত্তর পুনর্বাসন সম্পর্কিত প্রকল্প অগ্রাধিকার পাবে। একই সংস্থার আওতায় বাস্তবায়িত একই উদ্দেশ্য একাধিক ক্ষুদ্র প্রকল্প পৃথকভাবে না করে একত্রে প্রস্তাব করতে হবে। বৈদেশিক ঋণ বা অনুদানে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প এবং চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে এমন সব প্রকল্প সংশোধিত এডিপিতে অগ্রাধিকার পাবে। অননুমোদিত কোনো কর্মসূচি বা স্কিমের জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করা যাবে না।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে ও অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে সরকারি ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের বাজেট ব্যয়ের পরিকল্পনায় প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা কাটছাঁট করা হতে পারে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.