যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকে ওঠেনি দক্ষিণ এশীয় ভূরাজনীতির প্রসঙ্গ। শুক্রবার রাতে নয়াদিল্লিতে এ বৈঠকে দুই নেতা সম্পর্ক আরও গভীর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে আলোচনার বিষয় তুলে ধরা হয়।
বিবৃতিতে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, অন্তর্ভুক্তি, বহুত্ববাদ এবং সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগের মূল্যবোধের ওপর ফের জোর দিয়েছেন দুই নেতা।
তারা বলেছেন, এসব মূল্যবোধ সফলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং তা ‘আমাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে’।
হিন্দুত্ববাদী নেতা মোদির শাসনে এসব মূল্যবোধ সংকটে পড়েছে। বাইডেন প্রশাসন এসব নিয়ে ধারাবাহিক উদ্বেগ জানিয়ে আসছে।
দুই নেতার আলোচনায় মার্কিন ও ভারতীয় নেতারা চীনের উত্থানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে ‘মুক্ত, উন্মুক্ত’ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
গতকাল সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে পৌঁছান বাইডেন। বিমানবন্দর থেকেই তিনি বৈঠকের জন্য মোদির সরকারি বাসভবনে যান। সেখানে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন দুই নেতা। বৈঠকে এআই, বিজ্ঞান, প্রতিরক্ষাসহ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার নানা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়।
জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য হিসেবে ভারতকে ফের সমর্থন দিয়েছেন বাইডেন। ২০২৮-২৯ সালে অস্থায়ী আসনের জন্য ভারতের প্রার্থিতাকে আবারও স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। বাইডেন ভারতের সাম্প্রতিক চন্দ্রাভিযানের প্রশংসা করেছেন।
তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হলেন বাইডেন-মোদি। জি২০ শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে ভারতে এসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বাইডেনকে স্বাগত জানাতে ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাজির ছিলেন ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহনমন্ত্রী ভিকে সিংহ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের এটাই প্রথম ভারত সফর। বাইডেনের স্ত্রী জিল বাইডেন করোনা আক্রান্ত হওয়ায় হোয়াইট হাউসে আইসোলেশনে আছেন।
এর আগে গত জুনে হোয়াইট হাউসে রাষ্ট্রীয় সফরে মোদিকে সম্মান জানান বাইডেন। ২০২১ সাল থেকে তারা এক ডজনের বেশি ব্যক্তিগত বা ভার্চুয়াল বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। দুই নেতাই মার্কিন-ভারত অংশীদারিত্ব আরও মজবুত করতে চান। তাদের সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে চীনকে মোকাবিলা এবং জলবায়ু পরিবর্তন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনে স্থিতিশীলতাসহ অন্যান্য চ্যালেঞ্জ।
বাইডেন ভারতে পৌঁছার আগে হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান সাংবাদিকদের বলেন, এ বৈঠক মোদির বাসভবনে অনুষ্ঠিত হবে। তাই এটি সাধারণ দ্বিপক্ষীয় সফর নয়।
বাইডেন একজন মধ্য বাম ডেমোক্র্যাট এবং মোদি রক্ষণশীল হিন্দু জাতীয়তাবাদী। তারা আদর্শিক বন্ধু নন। তবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের সামরিক ও অর্থনৈতিক অবস্থানে উভয় নেতাই ক্রমে কাছাকাছি আসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন।
মোদির ৭ লোককল্যাণ মার্গের বাসভবনে বাইডেনের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। আগামী দু’দিন দিল্লির আইটিসি মৌর্য শেরাটনে বিশেষ প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুটে থাকবেন মার্কিন নেতা। বাইডেন এবং তাঁর প্রতিনিধি দলের জন্য হোটেলের প্রায় ৪০০টি রুম ভাড়া নেওয়া হয়েছে।