বাংলাদেশ ইস্যু কতটুকু গুরুত্ব পাবে

মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর

0
159
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

দ্বিপক্ষীয় সফরে আগামী বুধবার যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বৈঠক করবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে। বৈঠকটি দ্বিপক্ষীয় হলেও আলোচনায় আঞ্চলিক ও ভূরাজনীতি নিয়ে কথা বলবেন দুই শীর্ষ নেতা। এখানে প্রশ্ন থেকে যায়, ঠিক কতটুকু গুরুত্ব পাবে বাংলাদেশ ইস্যু?

এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা জল্পনাকল্পনা। বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন ইস্যুতে মার্কিন নতুন ভিসা নীতির পর ভারতের নীরবতায় রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয়েছে বেশ কৌতূহল। মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরে সেই নীরবতার অবসান হবে কিনা, তা নিয়েই এখন চলছে নানা বিশ্লেষণ।

ভারতের গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ২১ জুন নরেন্দ্র মোদি নিউইয়র্ক পৌঁছাচ্ছেন। পরের দিন হোয়াইট হাউসে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানাবেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। দুই নেতার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনাও ওই দিনই। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সঙ্গে গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে বৈঠক করেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। বৈঠকে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। ভারতের পক্ষ থেকেবলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র যাতে এমন কোনো ব্যবস্থা না নেয়, যা ভারতের স্বার্থকে আঘাত করে এবং আঞ্চলিক ভারসাম্য নষ্ট করে।

তবে এর পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র কী জবাব দিয়েছে, তা কোনো ভারতীয় গণমাধ্যম প্রকাশ করেনি। ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলো থেকে এতটুকু বোঝা যায়, আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় প্রতিবেশী অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আসবে। তবে সেটি কতটুকু গুরুত্ব পাবে– প্রশ্ন থেকে যায় সেটাই। কারণ, জ্যাক সুলিভানের বৈঠকে বিষয়টি এরই মধ্যে আলোচিত হয়েছে।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ ইস্যু বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে মনে করেন না সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির। তিনি বলেন, এখানে দুটি বিষয় রয়েছে– একটি ভূরাজনৈতিক আরেকটি নৈতিক দিক। সাধারণত এ ধরনের বৈঠকে চুক্তিভিত্তিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। অগ্রহণযোগ্য কথাবার্তা হয় না। এখন ভারতের ওপর নির্ভর করবে নৈতিকভাবে নাকি ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বৈঠকে বসবে। বাংলাদেশ ইস্যুতে দুটি রাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি ও অগ্রাধিকার ভিন্ন। এ ভিন্নতা কোন জায়গায় যাবে এবং কোনটি অগ্রাধিকার পাবে– তা বলা মুশকিল। বেশ কিছু দিন ধরে বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান পরিষ্কার করেছে। সে অবস্থান থেকে ভারত কতটা বোঝাতে পারবে বা কতটা বোঝাবে, তা বৈঠকেই নির্ধারণ হবে।

ভারতের গণমাধ্যম অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র সফর দুই দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। সই হতে চলেছে অন্তত দুটি বড় চুক্তি। যার একটি ৩০০ কোটি ডলারের অত্যাধুনিক ‘এমকিউ-৯বিসি গার্ডিয়ান’ সশস্ত্র ড্রোনসংক্রান্ত, অন্যটি ভারতে তৈরি ‘তেজস’ যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন নিয়ে; যা প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে জেনারেল ইলেকট্রিকের সহায়তায় তৈরি হবে কর্ণাটকের রাষ্ট্রায়ত্ত হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেডে।

বাংলাদেশে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দীর্ঘ সময় ধরে সমর্থন দিয়ে আসছে দিল্লি। নিরাপত্তার দিক থেকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, সেই সঙ্গে ভূরাজনীতি বিশেষ করে চীন প্রসঙ্গে বাংলাদেশকে পাশে দরকার ভারতের। এ অবস্থায় বাংলাদেশে অন্য কোনো দল ক্ষমতায় এলে পরবর্তী সমীকরণ কী হবে– তার হিসাব কষতে ব্যস্ত দিল্লি। এর মধ্যে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও এর সাবেক কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের চাপে রাখা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র ইস্যুতে ঢাকাকে আস্থায় না নেওয়া এবং সর্বশেষ বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন নতুন ভিসা নীতি আওয়ামী লীগকে বেশ চাপে রেখেছে। এসব পরিস্থিতিতে ভারতের দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি। বরং দেশটি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মধ্যে কাটিয়েছে। কারণ, ভারত নিজেই মানবাধিকার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নেতিবাচক তালিকায় রয়েছে। আর সীমান্ত নিয়ে চীনের সঙ্গে বিরোধ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর ওপর রয়েছে রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব।

ফলে ভারতের নিজ স্বার্থসংশ্লিষ্টতার পাশাপাশি মোদি-বাইডেন আলোচনায় বাংলাদেশ কতটুকু জায়গা করে নেবে, তা ধারণা করা কঠিন বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও রাষ্ট্রদূত মো. তৌহিদ হোসেন। সমকালকে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ইস্যুতে কথা বলার জন্য তো আর নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন না। ভারতের নিজস্ব স্বার্থসংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দুই দেশের স্বার্থ ও অগ্রাধিকার ভিন্ন। ভারতের এ বিষয়ে উদ্বেগ রয়েছে। বৈঠকে হয়তো আলোচনায় উঠবে। তবে এ বৈঠকে ভাগ্য নির্ধারণ হবে কিনা, তা বলা যাবে না। আর আলোচনায় কতটুকু গুরুত্ব পাবে, তা ধারণা করা কঠিন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.