দেশের বিশিষ্ট শিল্পীদের চিত্রকলার প্রদর্শনী হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। ‘কালারস অব ফ্রিডম’ নামের সপ্তাহব্যাপী এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে নিউইয়র্কের ম্যানহাটন ডাউন টাউনের ‘আর্ট-১ গ্যালারি’তে।
কালারস অব ফ্রিডম প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে নিউইয়র্কভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল ‘আইবি টিভি’ এবং তাদের ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত সংবাদ সাময়িকী ‘কালারস’। প্রদর্শনী শুরু হবে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর, চলবে ১ অক্টোবর পর্যন্ত। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা ক্লাবের স্যামসন চৌধুরী লাউঞ্জে প্রদর্শনী সম্পর্কে গণমাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য জানান এবং শিল্পীদের নিয়ে এক নৈশভোজের আয়োজন করেন উদ্যোক্তারা।
গণসংযোগের এই আয়োজনে দেশের বরেণ্য এবং তরুণ শিল্পী, সংগ্রাহক ও শিল্পানুরাগী অংশ নেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন অভিনয় ও চিত্রশিল্পী আফজাল হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে দেশের শিল্পীদের শিল্পকর্মের প্রদর্শনীর আয়োজন খুব ভালো উদ্যোগ। এর মাধ্যমে বিদেশে আমাদের শিল্পসংস্কৃতির পরিচয় বিস্তৃত হবে।
একই সঙ্গে তিনি বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়া প্রসঙ্গে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে নাগরিকদের সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। বাড়ি, অফিস, নিজ এলাকায় কোথাও তিন দিনের বেশি পানি জমতে না দেওয়ার জন্য সবাইকে উদ্যোগী হতে বলেন। উদ্যোগটিকে একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেওয়ার কথা বললেন উত্তরের নগরপিতা।
ডিএনসিসির মেয়রের কথার রেশ ধরেই বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী তাঁর বক্তব্যে সরস বাক্ভঙ্গিতে বলেন, ‘মশার উৎপাত যেমন ভাবে বেড়েছে, তাতে মনে হয়, আমাদের ছবির সঙ্গে আমারও নিউইয়র্কে চলে যাই।’ প্রদর্শনী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের শিল্পচর্চার গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে এই প্রদর্শনী থেকে প্রবাসীরা একটা ধারণা পাবেন।
যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ করে নিউইয়র্কে এখন অনেক বাঙালি আছেন। তাঁদের মধ্যে শিল্পকলা সম্পর্কে আগ্রহ বাড়ছে। অনেক বাঙালি শিল্পী আছেন। অনেক সংগ্রাহক আছেন। এই প্রদর্শনী সবার সঙ্গে একটা যোগাযোগ তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।’
প্রদর্শনীর উদ্যোক্তা আইবি টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও কালারস সাময়িকীর প্রকাশক জাকারিয়া মাসুদ বলেন, ২০১২ সালে তিনি নিউইয়র্কে শিল্পী আফজাল হোসেনের একটি একক চিত্রপ্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন। তার পর থেকেই বড় পরিসরে দেশের শিল্পীদের কাজ নিয়ে প্রদর্শনী করার ইচ্ছা তাঁর ছিল। এবার সেটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
নিউইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন বলে সম্মতি দিয়েছেন। নিউইয়র্কের শিল্পকলা সমালোচক ও সংগ্রাহকেরাই প্রদর্শনী দেখতে আসবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এর পর থেকে প্রতিবছর একটি করে প্রদর্শনী করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
প্রদর্শনীর কিউরেটর চিত্রসমালোচক ও কালারস সাময়িকীর নির্বাহী সম্পাদক জিয়াউল করিম বলেন, এই প্রদর্শনীতে গত শতকের ষাট থেকে নব্বই দশকের বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিল্পীদের কাজ থাকবে। এর পাশাপাশি নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশি শিল্পীদেরও কিছু কাজ থাকবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের চিত্রকলা সম্পর্কে প্রবাসী বাঙালি ও নিউইয়র্কের কলানুরাগীরা জানতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিম এ খান প্রমুখ।
প্রদর্শনী সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন শিল্পী নিসার হোসেন বললেন, ‘বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সমকালীন আর্ট গ্যালারিগুলো যেখানে রয়েছে, তাদের মধ্যে নিউইয়র্ক অন্যতম। আধুনিক চিত্রকলা নিয়ে সেখানে নানা ধরনের কাজ হয়। এ ধরনের প্রদর্শনীর মাধ্যমে আমাদের দেশের কাজ সম্পর্কে তাঁরা জানতে পারবেন।
এ কারণে এই প্রদর্শনীর বিশেষ গুরুত্ব আছে। সরকারি উদ্যোগে আমাদের দেশের শিল্পকর্মের প্রদর্শনী মাঝেমধ্যে বিদেশ হয়ে থাকে। তবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এ-সংক্রান্ত যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, তাদের বিশেষ উদ্যোগ নেই। সেখানে যোগ্য লোকের অভাব আছে। কারণ, তাদেরই মূল দায়িত্ব বিদেশে আমাদের দেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরা। সেই কাজ তারা যথাযথ ভাবে করতে পারছে না।
ব্যক্তিগত পর্যায়ে বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে এই যে প্রদর্শনীগুলো বিদেশে হয়, তাতে ধারাবাহিকতা থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে তাদের পক্ষে সেটা সম্ভবও হয় না। এই প্রদর্শনীর উদ্যোক্তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, তাঁরা নিয়মিত এমন প্রদর্শনীর আয়োজন করবেন।’
আয়োজকেরা জানালেন, প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন মোস্তফা মনোয়ার, হাশেম খান, রফিকুন নবী, মনিরুল ইসলাম, হামিদুজ্জামান খান, আবদুস শাকুর শাহ, সৈয়দ আবুল বারক আলভী, বীরেন সোম, আবদুল মান্নান, আফজাল হোসেন, ফরিদা জামান, মোহাম্মদ ইউনুস, জামাল আহমেদ, নিসার হোসেন, শামসুদ্দোহা, রেজাউন নবী, শেখ আফজাল হোসেন, শিশির ভট্টাচার্য, কনক চাঁপা চাকমা, মোহাম্মদ ইকবাল, লায়লা শারমিন, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, মোহাম্মদ জহির উদ্দিন প্রমুখ।