-
চাল উৎপাদিত হতে পারে মোট ৩ কোটি ৬৪ লাখ টন, যা আগের পূর্বাভাসের চেয়ে ৭ লাখ টন কম।
-
কম বৃষ্টিপাতের কারণে সেচের খরচ কৃষকের উৎপাদন ব্যয় বাড়াবে।
বাংলাদেশে ২০২৩-২৪ বিপণনবর্ষে চালের উৎপাদন আগের পূর্বাভাসের চেয়ে ৭ লাখ টন কম হতে পারে। এতে বাংলাদেশকে চাল আমদানি ৩ লাখ টন বাড়িয়ে ১০ লাখ টনে উন্নীত করতে হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) এক পূর্বাভাসে এ কথা বলা হয়েছে। সংস্থাটি ২৩ আগস্ট শস্যবিষয়ক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
পূর্বাভাসে বাংলাদেশে চাল উৎপাদনের পরিমাণ কমিয়ে ধরার কারণ হিসেবে বলা হয়, এবার আউশের ভরা মৌসুমে বাংলাদেশে টানা তাপপ্রবাহ ছিল। বৃষ্টিও কম হয়েছে। গত জুলাই মাসে আমনের শুরুতে একই ধরনের আবহাওয়া ছিল। পরে আগস্টে ভারী বৃষ্টি হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) বরাত দিয়ে ইউএসডিএ বলেছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ধান আবাদের জমি কমেছে। এটাই উৎপাদন কমার কারণ হতে পারে। আবার কৃষকদের উৎপাদন খরচও বাড়বে। কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক অবশ্য মনে করেন, চাল আমদানির খুব একটা প্রয়োজন হবে না। তিনি বলেন, আগস্টে বৃষ্টি বেড়েছে। ফলে আমনে উৎপাদন বাড়তে পারে। এ কারণে সামগ্রিকভাবে চালের উৎপাদন যথেষ্ট ভালো হতে পারে।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আশা করছি, দেশে উৎপাদিত চাল দিয়েই আমরা চাহিদা মেটাতে পারব।’
বাংলাদেশে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮০ লাখ টন চাল উৎপাদিত হয়েছে। পরের অর্থবছর (২০২২-২৩) শেষ হয়ে গেলেও উৎপাদনের হিসাব এখনো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
বাংলাদেশে তিনটি মৌসুমে চাল উৎপাদিত হয়। সবচেয়ে বড় মৌসুম বোরো। এ মৌসুমে ধান আবাদ করা হয় ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে। চাল ওঠে এপ্রিল ও মে মাসে। বোরোর পরই আউশের আবাদ হয়। আর আমনের আবাদ হয় ভরা বর্ষায়। আউশ ও আমন বৃষ্টিনির্ভর, আর বোরো সেচনির্ভর।
ইউএসডিএ গত মার্চে তাদের পূর্বাভাসে জানায়, বাংলাদেশে ২০২৩-২৪ বিপণনবর্ষে তিন মৌসুম মিলিয়ে ৩ কোটি ৭১ লাখ টন চাল উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সর্বশেষ পূর্বাভাসে তা কমিয়ে ৩ কোটি ৬৪ লাখ টন ধরা হয়েছে।
আউশে আবাদি জমির পরিমাণ পূর্বাভাসে ৫ শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ১০ লাখ হেক্টর ধরেছে ইউএসডিএ। তারা বলছে, এ মৌসুমে চালের উৎপাদন ৪ শতাংশ কমে ২৪ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে। আমনে আবাদ হওয়া জমির পরিমাণ তাদের আগের পূর্বাভাসের চেয়ে ৩ শতাংশ কমে সাড়ে ৫৭ লাখ হেক্টর এবং চালের উৎপাদন ১ কোটি ৪০ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করে ইউএসডিএ।
এর আগে গত বোরোতে ২ কোটি টন চাল উৎপাদিত হয়েছে বলে প্রাক্কলন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ। তারা বলছে, তাদের পূর্বাভাস ছিল বাংলাদেশকে ৭ লাখ টন চাল আমদানি করতে হবে। নতুন পূর্বাভাসে সেটা বাড়িয়ে ১০ লাখ টন করা হয়েছে।
অবশ্য ভারতের রপ্তানিতে বাড়তি শুল্ক, মিয়ানমারের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা ও বিশ্ববাজারে চড়া দামের কারণে চাল আমদানি নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। আবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে যথেষ্ট মার্কিন ডলার না থাকায় আমদানি ব্যয় মেটানোও কঠিন।
ব্যয় বেড়েছে
দেশে গত বছর আমনে প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে ২৮ টাকা খরচ পড়েছিল। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) পর্যবেক্ষণ বলছে, বৃষ্টি কম হওয়ায় আমনে সেচ দেওয়াসহ অন্যান্য কারণে উৎপাদন ব্যয় ৫ শতাংশ বেড়ে গেছে। এতে কেজিপ্রতি ১ টাকা বেশি ব্যয় হতে পারে।
ব্রির মহাপরিচালক শাহজাহান কবির বলেন, আউশ ও আমন মূলত ছিল বৃষ্টিনির্ভর ফসল। কিন্তু কয়েক বছর ধরে আমরা দেখছি বর্ষায় বৃষ্টি কমে আসছে। ফলে ওই সময়ের প্রধান ফসল আউশ ও আমনে বাড়তি সেচ দিতে হচ্ছে।
ইউএসডিএ বলছে, আমনে সেচের ব্যয় কৃষকভেদে ভিন্ন। তবে গড় খরচ একরপ্রতি দুই হাজার টাকা। জ্বালানি, সার, বীজ ও কীটনাশকের বাড়তি দাম ও শ্রমের বাড়তি মূল্যও উৎপাদন খরচ বাড়িয়েছে।
ইউএসডিএর প্রতিবেদন বলছে, ২০২৩-২৪ বিপণনবর্ষের শুরু থেকে চালের দাম প্রতি মাসেই কিছু কিছু বেড়েছে। জুলাই মাসে মোটা চালের গড় দাম দাঁড়িয়েছে প্রতি কেজি ৪৯ টাকা ৪০ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ের সমান।
ইউএসডিএর প্রতিবেদনে বাংলাদেশের চাল মজুতের চিত্রও তুলে ধরা হয়। বলা হয়, এখন পর্যন্ত সরকারি গুদামে ১৭ লাখ ৪০ হাজার টন চাল আছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশে এ বছর গম ও ভুট্টার উৎপাদন কিছুটা বাড়তে পারে বলে উল্লেখ করা হয় ইউএসডিএর পূর্বাভাসে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম এ সাত্তার মণ্ডল বলেন, সেচ, সারসহ নানা খাতে এবার বোরো, আউশ ও আমনে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সামনের দিনগুলোয় তা আরও বাড়তে পারে। খরচ ওঠানোর মতো দাম কৃষককে দিতে হবে। তিনি বলেন, ভালো দাম দিলে দেশেই যথেষ্ট চাল উৎপাদন সম্ভব।