বসন্তবরণে প্রস্তুত বাঙালি, দেশজুড়ে নানান আয়োজন

0
6
বসন্তবরণ

পহেলা ফাল্গুন, বাঙালির হৃদয়ে এক আনন্দঘন উৎসব। শীতের বিদায় ও বসন্তের আগমনকে চিহ্নিত করে এই দিন, যা প্রকৃতির এক অপূর্ব রঙিন রূপ প্রকাশ করে। বাংলার শহর, গ্রাম, পথঘাট ও উদ্যান হয়ে ওঠে ফুলের সৌরভে মোড়ানো এক স্বপ্নিল দুনিয়া।

প্রকৃতিতে পহেলা ফাল্গুন মানেই নতুন রঙের ছোঁয়া। গাছের শুকনো ডালপালায় ফোটে নতুন পাতা, কোকিলের কুহুতান জানান দেয় বসন্তের আগমন। শিমুল-পলাশ-করবীর লাল, কৃষ্ণচূড়ার উজ্জ্বলতা আর আমের মুকুলের মিষ্টি গন্ধে মন ভরে ওঠে। ঋতুরাজ বসন্ত যেন প্রকৃতিকে নতুন করে সাজিয়ে তোলে।

ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদ, উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরে মুক্তমঞ্চ, পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কসহ রাজধানীতে একাধিক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়েছে জাতীয় বসন্ত উৎসব আয়োজক কমিটি।

কমিটির সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট বলেন, চলতি বছর পহেলা ফাল্গুন এবং পবিত্র শবেবরাত একইসঙ্গে হওয়ায় উৎসবটি অর্ধদিবস পালিত হবে। আমরা ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রা বাদ দিয়ে সকাল ৭টা থেকে দুপুর পর্যন্ত উৎসব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রাজধানীর তিনটি স্থানে সাংস্কৃতিক কর্মসূচি পালিত হবে।’

পহেলা ফাল্গুনের সঙ্গে ভালোবাসা দিবসের সংযোগে এক অনন্য আবহ তৈরি হয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং তার আগের দিন পহেলা ফাল্গুন উদযাপন প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য বিশেষ রোমাঞ্চ সৃষ্টি করে। প্রিয়জনকে ফুল, উপহার দেওয়া, একসঙ্গে বসন্তের সৌন্দর্য উপভোগ করা যেন এক নতুন ভালোবাসার অভিব্যক্তি হয়ে ওঠে।

এ দিনে ফুলের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ফলে ফুল ব্যবসাতেও যথেষ্ট চাঙ্গা ভাব দেখা যায়। তবে ব্যবসায়ীরা ফুল বেচাকেনায় স্বাভাবিক প্রবাহের আশা করলেও শাহবাগ ফুল বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আবুল কালাম কিছুটা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এবারের চিত্র ভিন্ন। নানা কারণে মানুষ শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখছে। এ অবস্থায় রাস্তা বন্ধ থাকলে কেউ ফুল কিনতে আসবে না।

দেশজুড়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বসন্তবরণ উপলক্ষে আয়োজন করবে সংগীত, নৃত্য ও কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান। রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি ও লোকসংগীতের সুরে মেতে উঠবে সবাই।

সময়ের সাথে সাথে পহেলা ফাল্গুনের উদযাপন আরও বিস্তৃত হয়েছে। শুধুমাত্র শহরাঞ্চলে নয়, গ্রামাঞ্চলেও এখন বসন্তবরণে নানা আয়োজন লক্ষ করা যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বসন্তের ছবি, কবিতা, অভিব্যক্তি প্রকাশের মাধ্যমে এ উৎসবের ব্যাপ্তি বেড়েছে।

পহেলা ফাল্গুন কেবল বসন্তের সূচনা নয়, এটি আনন্দ, ভালোবাসা ও সংস্কৃতির এক অনন্য মেলবন্ধন। প্রকৃতির রঙিন আয়োজনের সঙ্গে মানুষের মনও রঙিন হয়ে ওঠে এই দিনে। নতুন সম্ভাবনা, নতুন আনন্দ ও নতুন প্রেমের বার্তা নিয়ে আসে বসন্তের প্রথম দিন। তাই, যুগে যুগে এই দিন বাঙালির জীবনে এক অনন্য উৎসব হিসেবে রয়ে যাবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.