বালু উত্তোলনে ঝুঁকিতে সেতু

0
102
ফুলজোড় নদ থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। গত শনিবার নলকা এলাকায়

আইন লঙ্ঘন করে দুই সেতুর কাছ থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করছে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া ও রায়গঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ফুলজোড় নদ থেকে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু। খননযন্ত্র দিয়ে তোলা সেই বালু লম্বা পাইপের মাধ্যমে ফেলা হচ্ছে উল্লাপাড়া উপজেলার পাঁচলিয়া এলাকায় মহাসড়কের পাশে সাসেক প্রকল্প-২–এর নির্মাণাধীন সার্ভিস সেন্টারে। এতে ঝুঁকিতে পড়ছে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কের নলকা এলাকায় ফুলজোড় নদের ওপর নির্মিত দুটি সেতু।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রভাবশালীদের সহায়তায় আইন লঙ্ঘন করে ওই দুই সেতুর কাছ থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জে কে কনস্ট্রাকশন।

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০–এর ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ।

তবে এই আইন অমান্য করে ফুলজোড় নদ থেকে তোলা হচ্ছে বালু। সেই সঙ্গে ভরাট করা হচ্ছে মহাসড়কের পাশে সাসেক প্রকল্পের নির্মিতব্য সার্ভিস সেন্টার তৈরির এলাকা। জে কে কনস্ট্রাকশন নামে সহযোগী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি খননযন্ত্র বসিয়ে এই দুই সেতুর দক্ষিণে প্রায় ৫০ মিটারের মধ্যে নদ থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু তুলছে।

গত শনিবার বিকেলে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর নিচে দক্ষিণ পাশে ফুলজোড় নদে চারটি বাল্কহেড ভাসছে। এর ওপর দুটি বালু তোলার যন্ত্র (ডিজেলচালিত অগভীর নলকূপের মোটর) বসানো হয়েছে। একটি যন্ত্র থেকে পাইপ নদে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই পাইপ দিয়ে নদ থেকে বালু তোলা হচ্ছে। অপর যন্ত্রটি পানির সঙ্গে সেই বালু মোটা লোহার পাইপের মাধ্যমে সামনে ঠেলে দিচ্ছে। আরও বেশি শক্তি দিয়ে পানি ও বালু সামনে ঠেলে নিতে মহাসড়কের পাশে আলোকদিয়া গ্রামে বসানো হয়েছে শক্তিশালী সেচযন্ত্র। মহাসড়কের পাশ দিয়ে প্রায় ৫০০-৬০০ মিটার দূরে বালু গিয়ে পড়ছে সাসেক প্রকল্পের নির্মাণাধীন সার্ভিস সেন্টারে। নদ থেকে বালু তোলার কাজ তদারকি করছিলেন ছয় শ্রমিক। চারপাশে পাহারা দিচ্ছেন আরও চার-পাঁচজন কর্মী।

তাঁদের মধ্যে মুকুল হোসেন নামের এক কর্মী বলেন, ‘সিরাজগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জে কে কনস্ট্রাকশন খননকাজ বাস্তবায়ন করছে। আমরা কজন এই এলাকা দেখভাল করি।’

মহাসড়কের পাশে আলোকদিয়া গ্রামে বসানো সেচযন্ত্রটির চালক বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মোকলেছুর রহমান। তিনি বলেন, এখানে প্রায় দুই মাস ধরে এই বালু তোলার কাজ চলছে। তিনি চুক্তিতে বালু তোলার কাজ করতে এখানে এসেছেন।

নলকা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক অভিযোগ করে বলেন, ‘এই চক্র নদ খননের নাম করে নলকা সেতুর ৫০-১০০ মিটারের মধ্যে বালু তুলছে। পাইপে করে সেই বালু ৫০০-৬০০ মিটার দূরে নিয়ে বিক্রি করছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলে কোনো লাভ হয় না। প্রশাসন এসব অবৈধ কার্যক্রম দেখে না। এই কাজ অব্যাহত থাকলে নলকা সেতু রক্ষা করা যাবে না।’

ফুলজোড় নদতীরবর্তী আলোকদিয়া গ্রামের বাসিন্দা মঞ্জুর আলম বলেন, এভাবে অপরিকল্পিতভাবে নদ খনন ও চুরি করে বালু বিক্রির ফলে নলকা সেতু ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। এ ছাড়া আলোকদিয়া গ্রাম, নদপাড়ের ফসলি জমি ভাঙনের শিকার হতে পারে। তাঁরা বালু তোলার প্রতিবাদ করেছিলেন। তিনিসহ চারজনকে আসামিকে করে চাঁদাবাজির মামলা দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

এসব অভিযোগ সম্পর্কে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জে কে কনস্ট্রাকশনের পরিচালক তানভির ইসলাম বলেন, ‘এই নদী খনন প্রকল্পের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করে আমরা এসব বালু ব্যবহার করছি। বিষয়টিতে স্থানীয় প্রশাসন জানে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সিরাজগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, ফুলজোড় নদ খননের জন্য এখানে একটি খনন প্রকল্প চলমান। তবে নদ খনন করে সেই বালু বা মাটি নদতীরে জমা রাখতে হবে। নিয়মবহির্ভূতভাবে এখান থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।

সিরাজগঞ্জের জেলা নদী রক্ষা কমিশন ও মাটি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মাদ মাহবুবুর রহমান বলেন, নদ থেকে বালু তুলে সেগুলো দিয়ে কোনো প্রকল্প ভরাটের সুযোগ নেই। অনুমোদিত বালুমহাল ছাড়া নদ থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা যাবে না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.