বরিশাল মেডিকেলের হলে দুই ছাত্রীকে র‍্যাগিং, সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলা

0
176
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের হলে এক ছাত্রী র‍্যাগিংয়ের শিকার হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই ছাত্রীকে গভীর রাতে দুই দফায় হলের একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে দীর্ঘ সময় দাঁড় করিয়ে রেখে গালাগাল, হুমকি এবং মুঠোফোন তল্লাশি করা হয়েছে। একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়লে তাঁকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

গত বুধবার রাতে ছাত্রী হলের ৬০৬ নম্বর কক্ষে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। হলে অবস্থান করা ডেন্টাল ৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাহমিদা রওশন ওরফে প্রভা, ৫০তম ব্যাচের নীলিমা হোসেন ওরফে জুঁইয়ের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটে। তাঁরা নিজেদের ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে সেখানে সংগঠনটির কোনো কমিটি নেই।

কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার ছাত্রী ও ছাত্রীর মায়ের বক্তব্য নিতে যান। তখন কয়েকজন শিক্ষক সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করেন। এ সময় চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়।

এ দিকে আজ শনিবার দুপুরে র‍্যাগিংয়ের বিষয়টি নিয়ে মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল নির্যাতনের শিকার ছাত্রীদের বক্তব্য নেয়। এ সময় বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক সেখানে উপস্থিত হয়ে নির্যাতনের শিকার ছাত্রী ও ছাত্রীর মায়ের বক্তব্য নিতে যান। তখন কয়েকজন শিক্ষক সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করেন। এ সময় চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়।

ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন কলেজের উপাধ্যক্ষ নাজিমুল হক। আজ দুপুরে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের সঙ্গে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। এটা আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি।’ ছাত্রীদের নির্যাতনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি খুব সামান্য ঘটনা, বড় কিছু নয়। তবে আমরা বিষয়টি দেখছি। এটা সমাধানের চেষ্টা করছি। আমি ব্যস্ত আছি, এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে পরে কথা বলব।’

র‍্যাগিংয়ের শিকার ওই ছাত্রী আজ অভিযোগ করেন, বেশ কয়েক দিন ধরেই ছাত্রলীগের নেত্রী পরিচয় দেওয়া ওই ছাত্রীরা তাঁকে এবং তাঁর রুমমেটকে নানাভাবে গালাগাল দিয়ে মানসিক নির্যাতন করে আসছেন। এতে ভীতসন্ত্রস্ত ছিলেন তাঁরা। তাঁদের সঙ্গে যেন এ ধরনের আচরণ না করা হয়, সে জন্য নেতৃত্ব দেওয়া ওই ছাত্রীদের একজন সহপাঠীকে দিয়ে অনুরোধ করান তাঁরা। কিন্তু এতে অভিযুক্তরা ক্ষেপে যান। এর জেরে বুধবার রাত ১১টার দিকে নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রী ও তাঁর রুমমেটকে হলের ৬০৬ নম্বর কক্ষে ডেকে নেওয়া হয়। এরপর তাঁদের দুজনকে দাঁড় করিয়ে অভিযুক্তদের সহপাঠীর কাছে কেন ‘নালিশ করা হয়েছে’, এ জন্য কৈফিয়ত চান এবং অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। একপর্যায়ে তাঁদের মুঠোফোন নিয়ে তা তল্লাশি করার জন্য কয়েকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আধা ঘণ্টা নানাভাবে শাসিয়ে দুই ছাত্রীকে তাঁদের কক্ষে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কক্ষে ফিরে ভীতসন্ত্রস্ত এক ছাত্রী বিষয়টি অভিযুক্তদের ওই সহপাঠীকে জানালে তিনি ফোন করে ছাত্রলীগ পরিচয় দেওয়া নেত্রীদের কাছে উষ্মা প্রকাশ করেন। এরপর ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীকে আবার ডাকা হয়।

নির্যাতনের শিকার দুই ছাত্রীকে কলেজ প্রশাসন থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, “‘তোমরা চিকিৎসা চাও, নাকি বিচার চাও? যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে তোমাদের। বিচার চাইলে তোমাদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।” আমরা বলেছি, আমরা দুটোই চাই। নির্যাতনকারী ছাত্রীদের পক্ষে যায়, এমন প্রস্তাব কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আসায় আমরা বিস্মিত হয়েছি।নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর মায়ের অভিযোগ

র‍্যাগিংয়ের শিকার ছাত্রী আরও বলেন, রাত ১২টার দিকে দ্বিতীয় দফায় ডেকে নিয়ে দুই ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে আবারও গালাগাল করা হয় এবং ভয়ভীতি দেখানো হয় তাঁকে। এ সময় ওই ছাত্রী কান্নাকাটি করেন এবং তিনি অসুস্থতার কথা জানিয়ে তাঁকে বসতে দেওয়ার অনুরোধ করেন। তবে তাঁকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে পুনরায় তল্লাশি করা হয়। দুই ঘণ্টা ধরে এভাবে মানসিক নির্যাতনে ওই ছাত্রী অসুস্থ বোধ করলে তাঁকে কক্ষে পাঠানো হয়। এর পরপরই তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। পরে গভীর রাতে তাঁকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়া ছাত্রীর মা আজ দুপুরে বলেন, এ ঘটনায় আজ দুপুর ১২টার দিকে কলেজ প্রশাসন তাঁর মেয়ে ও অন্য এক ছাত্রীকে ডেকে ঘটনা সম্পর্কে তাঁদের বক্তব্য নেয়। প্রশাসন তাঁর মেয়েকে মানসিক রোগের চিকিৎসকের কাছে পাঠায়। ওই ছাত্রীর মা অভিযোগ করেন, নির্যাতনের শিকার দুই ছাত্রীকে কলেজ প্রশাসন থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, “‘তোমরা চিকিৎসা চাও, নাকি বিচার চাও? যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে তোমাদের। বিচার চাইলে তোমাদের শিক্ষাজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।” আমরা বলেছি, আমরা দুটোই চাই। নির্যাতনকারী ছাত্রীদের পক্ষে যায়, এমন প্রস্তাব কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আসায় আমরা বিস্মিত হয়েছি।’

নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর মা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এখন আমার মেয়েকে মানসিক ভারসাম্যহীন প্রমাণ করার চেষ্টা করছে তারা। কলেজ প্রশাসন যখন দুই ছাত্রীর বক্তব্য নিচ্ছিল, নির্যাতনকারীরা তখন বাইরে অবস্থান নিয়ে হাসাহাসি করছিল। কলেজ প্রশাসনের এমন আচরণে আমরা হতাশ হয়েছি। মেয়ের নিরাপত্তা নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন।’

অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগের নেত্রী পরিচয় দেওয়া ফাহমিদা রওশন ও নীলিমা হোসেনের বক্তব্য জানতে তাঁদের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁরা সাড়া দেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে চেষ্টা করা হলে নীলিমা হোসেনের ফোনটি রিসিভ করেন তাঁর এক সহপাঠী। তিনি বলেন, ‘নীলিমা ব্যস্ত আছে, পরে আপনার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেব।’ এরপর পুনরায় দুজনের হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা দিলেও তাঁরা সাড়া দেননি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.