টিনের আবরণ দিয়ে ঢাকা কাঠের বাক্স মাথায় নিয়ে ছুটে চলেছেন তিনি। মাঝেমধ্যে হাঁক দিচ্ছেন ‘বরফ, মালাই বরফ’। এই শুনে তাঁর কাছে আসে শিশুসহ নানা বয়সীরা, আইসক্রিম কেনে। প্রায় ৫১ বছর ধরে তিনি এভাবে আইসক্রিম বিক্রি করছেন। তাঁর নাম আবুল কাশেম (৭০), বাড়ি রাজশাহীর বাগমারার চানপাড়া গ্রামে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরের বছর থেকে আইসক্রিম বিক্রি শুরু করেন আবুল কাশেম। এখন পর্যন্ত এ পেশাতেই আছেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন সকালে কারখানা থেকে বাক্সে করে আইসক্রিম কিনে আনেন তিনি। এরপর গ্রামে ঘুরে বিক্রি করেন। শুরুর দিকে ১০ পয়সায় একটি আইসক্রিম বিক্রি করেছেন। পর্যায়ক্রমে ২৫ পয়সা, ৫০ পয়সা, ১ টাকা, ৫ টাকা করে এখন ১০ টাকায় আইসক্রিম বিক্রি করেন। ডিম, চাল, গম, আলু, পেঁয়াজ, মৌসুমি ফসলের বিনিময়েও একসময় আইসক্রিম বিক্রি করতেন তিনি।
সম্প্রতি বাগমারা উপজেলা পরিষদের সামনের রাস্তায় আবুল কাশেমের সঙ্গে দেখা হয়। তাঁর হাঁক শুনে ছুটে আসেন বিভিন্ন বয়সের কয়েকজন ক্রেতা। আইসক্রিম কিনে খেতে শুরু করেন তাঁরা। সাদোপাড়া গ্রামের মোজাফফর হোসেন বলেন, তিনি ছাড়াও ছেলে ও নাতিরা কাশেমের আইসক্রিমের ক্রেতা। এত দিন ধরে একজন মানুষ একই পেশায় আছেন, এটা অবাক করার মতো ঘটনা।
কাশেম বলেন, নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কারখানায় আইসক্রিম তৈরি করান তিনি। দুধ, চিনি, নারিকেল, বিস্কুট দিয়ে তৈরি হয় এসব আইসক্রিম। এগুলোর চাহিদা বেশি। আগে এক বাক্সে ৫০০ থেকে ৬০০ আইসক্রিম নিয়ে গোটা দিন গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করতেন। বয়সের কারণে এখন ওজন বহন করতে সমস্যা হয়। এখন ২০০ থেকে ৩০০টি আইসক্রিম বাক্সে নিয়ে বিক্রি করে থাকেন। এখনো গ্রামাঞ্চলে গেলে দাদা, ছেলে, নাতি-নাতনি একসঙ্গে চলে আসেন আইসক্রিম খেতে। প্রবীণ প্রজন্ম নবীন প্রজন্মের কাছে তাঁর গল্প করেন। তাঁর ভালোই লাগে।
গ্রামে গ্রামে ঘুরে আইসক্রিম বিক্রির টাকায় আবুল কাশেমের সংসার চলে। এই টাকায় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। এক ছেলেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়িয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বয়সের কারণে এখন তাঁর মনে হয়, একটা চার্জার ভ্যান থাকলে তাঁর কষ্ট কম হতো। পরিমাণে আরও বেশি আইসক্রিম বিক্রি করতে পারতেন।
ভবানীগঞ্জ বণিক সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আবুল কাশেমকে তিনি দীর্ঘদিন ধরে আইসক্রিম বিক্রি করতে দেখে আসছেন। নিজের পেশার প্রতি ভালোলাগা থাকার কারণেই মনে হয় তিনি এটা করে যেতে পারছেন।