গানটির কথা লিখেছেন যৌথভাবে শিবু কুমার শীল ও মেজবাউর রহমান সুমন। শিবু কুমার শীলের কম্পোজিশনে সংগীত প্রযোজনা করেছে ‘মেঘদল’। গানটির মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানকে, যিনি তাঁর চিত্রকর্মে বাংলার প্রকৃতি ও মানুষের বন্দনা করে গেছেন।
গানের ভাবনার শুরু, লেখা এবং কোক স্টুডিওতে উপস্থাপনা নিয়ে কথা হয় শিবু কুমার শীলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কোক স্টুডিও থেকে যখন আমাদের গান করার জন্য আহ্বান জানানো হলো, প্রথমেই মাথায় এল প্রকৃতি নিয়ে গান লিখব। গ্রাম, মাটি, মানুষকে যা জড়িয়ে রাখে। আমরা যাকে নিয়ে গানটি লিখেছি, সেই বনবিবি মূলত এক লৌকিক দেবী। অনেক প্রাচীন লোককাব্যে পাওয়া যায় বনবিবির নাম। বাংলাদেশ ও ভারতের সুন্দরবন অঞ্চলে বসবাস করা মৎস্যজীবী, মধুয়াল ও কাঠুরিয়া জনগোষ্ঠী পূজা করে বনবিবিকে। সুন্দরবনের মানুষরা বিশ্বাস করে, এই দেবী সুন্দরবনের বাঘের হাত থেকে তাদের রক্ষা করে। আঞ্চলিক জনজীবনের বিশ্বাসের সঙ্গে মিশে থাকা এই চরিত্রই হলো মূল ভাবনা। আবার শত শত বছর ধরে খনার বচন বাঙালিদের প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণভাবে জীবনযাপন করতে শিখিয়েছে। রক ব্যান্ডের সমৃদ্ধ ধারার সঙ্গে এখানে খুব সুন্দরভাবে মেশানো হয়েছে খনার বচনের গভীরতা। আর ভালোবাসার এস এম সুলতান তো আছেন আমাদের সর্বক্ষণ জড়িয়ে। সব ভাবনা এক করেই লেখা হয়েছে গানটি।’
বনবিবি একটি লোকগাথা ধরনের গান। পুরো গানটিতে একটি রহস্যময় ও আধ্যাত্মিক বিষয় রয়েছে, প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হলেই যা অনুভব করা যায়। মূল গায়ক মেঘদলের সঙ্গে এই গানে দেখা যায় জোহরা বাউলকে। জোহরা বাউলের পরিবেশনা গানে যুক্ত করেছে লোকসংগীতের স্বাদ। এর মাধ্যমে তৈরি হয়েছে চমৎকার একটি ফোক ফিউশন।
মুঠোফোনে কথা হয় জোহরা বাউলের সঙ্গে। তিনি তখন কুষ্টিয়ার লালন আখড়ায়। কোক স্টুডিওতে বনবিবি গানে অংশগ্রহণ তাঁর জীবনের চমৎকার অভিজ্ঞতা বলে মনে করেন তিনি। জোহরা বাউল বলেন, ‘আমি তো আসলে নিজের মনে গান গাই। যখন যা মনে আসে, বাউলদের যা হয় আরকি। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে যাই। “বনবিবি” গান সবাই এত দেখছে, শুনছে আমার তো অবাক লাগছে। সবাই আমাকে আবার নতুন করে খুঁজছে। এটা একটা সুন্দর অভিজ্ঞতা আমার জন্য।’
অল্পদিনের মধ্যেই ‘বনবিবি’ গানের এত প্রচার, ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি আনন্দিত করেছে মেঘদল এবং কোক স্টুডিও বাংলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে। শিবু কুমার শীল জানান, ‘বনবিবি এমন একটি গান, যা দর্শক-শ্রোতাদের এই পৃথিবীর নানা কোলাহল এবং জটিলতা থেকে কিছুটা সময় দূরে রাখবে। গানটি শুনে সবাই নিজেদের প্রকৃতির আরও কাছে অনুভব করবেন। এটা আমাদের জন্য চমৎকার এক অভিজ্ঞতা। কোক স্টুডিও বাংলার প্রতিভাবান শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করাও একটা দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল। এই অভিজ্ঞতা আমাদের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিল।’


















