
তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশের বেশির ভাগ এলাকা। জনজীবন অতিষ্ঠ। আজ শুক্রবার চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে। এ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। আজ রাজধানীতেও চলতি বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গতকাল বৃহস্পতিবারের চেয়ে আজ তাপপ্রবাহ দেশের আরও বেশি এলাকায় ছড়িয়েছে। আর এ অবস্থা আরও অন্তত দুই দিন থাকতে পারে। আসলে বৃষ্টি না হলে তাপপ্রবাহ কমার তেমন লক্ষণ নেই।
আজ ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও ময়মনসিংহের প্রায় সর্বত্র তাপপ্রবাহ চলছে। গতকাল চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে তাপপ্রবাহ অপেক্ষাকৃত কম ছিল। আজ এসব এলাকার বেশির ভাগ স্থানে তাপপ্রবাহ বইছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, তাপপ্রবাহের পরিধি অনেকটাই বেড়ে গেছে। আজ রাজধানীতেও তাপপ্রবাহ চলতি বছরের সর্বোচ্চ। এ অবস্থা অন্তত দুই দিন আরও চলতে পারে। তবে এমন পরিস্থিতি এ মাসের জন্য খুব অস্বাভাবিক নয়।
দেশে সবচেয়ে বেশি গরম থাকে এপ্রিল মাসে। এর গড় তাপমাত্রা ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর মে মাস হলো দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উষ্ণ মাস। এ সময় গড় তাপমাত্রা থাকে ৩২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়, ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে চলতি বছরে দুই দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২৮ মার্চ চুয়াডাঙ্গায় এবং ২৩ এপ্রিল যশোরে—৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ ছুটির দিন। রাজধানীর সড়কে মানুষজনের চলাফেরা কম, যানবাহনও কম। কিন্তু তারপরও যাঁরা কাজের সূত্রে বাইরে বের হচ্ছেন, তাঁদের হাঁসফাঁস অবস্থা।
রামপুরা থেকে হাতিরঝিল হয়ে কারওয়ান বাজারে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কর্মস্থলে আসেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সাজেদুল হাসান। তিনি বলছিলেন, ‘আমি বাইকে করে এসেছি। টি–শার্ট ছিল গায়ে। হাতের যে অংশ উন্মুক্ত ছিল, সেখানে মনে হলো জ্বলে যাচ্ছে। এ বছর এমনটি দেখিনি।’
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, আজ রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটাও এ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলে জানান আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ।
এর আগে ২৮ মার্চ রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তা মাঝারি তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ ধরা হয়। তাপমাত্রা ৪২-এর বেশি হলে তা অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে গণ্য হয়।

দেশের উষ্ণতম মাস এপ্রিল এবার ততটা উষ্ণ ছিল না। চলতি মে মাসের প্রথম সপ্তাহেও তাপমাত্রা মোটামুটি সহনীয় ছিল। কিন্তু গত বুধবার থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। এ মাসে এত গরম কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলছিলেন, এই তাপমাত্রা মে মাসে একেবারে অস্বাভাবিক না। বৃষ্টি কমে গেলেই তাপমাত্রা বাড়ে। এপ্রিল মাসে গরম অপেক্ষাকৃত কম ছিল, কারণ পশ্চিমা লঘুচাপ সক্রিয় থাকার কারণে ওই মাসে মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাব আপাতত নেই। দুই থেকে তিন দিন পর পশ্চিমা বায়ু আবার সক্রিয় হবে। তার প্রভাবে বৃষ্টি বাড়তে পারে।