বছরের শেষ দিনে সেই পুরোনো আক্ষেপ বাংলাদেশের

0
132
বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়েছিলেন শরীফুল, এএফপি

আজ এত রান তো কাল এত রান-বাংলাদেশ দলের ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এমন আক্ষেপের কথা শোনা যায় প্রায়ই। কত রান কম হয়েছে, সে সংখ্যাটা বদলায় শুধু। মাউন্ট মঙ্গানুইতে আজ নিশ্চিতভাবেই যে বাংলাদেশ কম রান করেছে তা বলাই যায়। এ মাঠে এত কম রানে এর আগে অলআউট হয়নি কোনো দল। তবে বৃষ্টিবিঘ্নিত এ ম্যাচে সেই পুরোনো আক্ষেপটাই নতুন করে নিয়ে এলেন বাংলাদেশ বোলাররা!

১১০ রানের সম্বল নিয়ে ৪৯ রানেই এক সময় স্বাগতিকদের ৫ উইকেট নিয়েছিল বাংলাদেশ। মেহেদী হাসান, শরীফুল ইসলামরা দেখাচ্ছিলেন অসম্ভব এক ম্যাচ জয়ের স্বপ্নও! তবে সে স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছে, যেমন অধরা থাকল নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়ের স্বপ্নও। ডিএলএস পদ্ধতিতে ১৭ রানে জিতে ১-১ ব্যবধানে সিরিজ ড্র করেছে নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশ বোলারদের লড়াই হয়ে থেকেছে ২০ মিটার পেছনে থেকে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে দৌড়ানোর মতো।

এত কম রানের লক্ষ্যে নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল মোটামুটি একটি জুটি আর ইনিংসের। ফিন অ্যালেন ৩১ বলে ৩৮ রান করলেও জুটিটা পাচ্ছিল না নিউজিল্যান্ড। টিম সাইফার্ট মেহেদীর বলে হন স্টাম্পিং, সিরিজে দ্বিতীয়বারের মতো তাঁর শিকার ড্যারিল মিচেল। শরীফুলের বলে পরিষ্কার বোল্ড গ্লেন ফিলিপস ও ফিন অ্যালেন, এর মধ্যে অ্যালেন এ নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ষষ্ঠবারের মতো শরীফুলের শিকার।

বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে সেই পুরোনো আক্ষেপ
বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে সেই পুরোনো আক্ষেপ, এএফপি

ক্রিজের মধ্যে অ্যালেনের সঙ্গে ধাক্কা লাগার পর রানআউট মার্ক চ্যাপম্যান-নিউজিল্যান্ডও হয়ে পড়েছিল এলোমেলো। তবে জিমি নিশাম ও স্যান্টনার এনে দেন কাঙ্ক্ষিত জুটি। উইকেটের খোঁজে শরীফুল-মেহেদীকে আগেভাগেই বেশি ওভার করাতে হয়েছে নাজমুলকে, তানজিম হাসানের জায়গায় খেলানো তানভীর ইসলামকে ১ ওভারের পর আনেননি তিনি।

দুই বাঁহাতির সামনে নিজেকে এনেছিলেন অফস্পিনের জন্য হাত ঘোরানো নাজমুল, তবে সেটি কাজে লাগেনি। নিশাম ও স্যান্টনারের অবিচ্ছিন্ন ৪৬ রানের ম্যাচ-সর্বোচ্চ জুটিই মূলত নিশ্চিত করে নিউজিল্যান্ডের জয়। এ মাঠে পরে ব্যাটিং করা দল জিতল এই প্রথমবার।

এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। আগের দুই ম্যাচে বাংলাদেশের জয় ও লড়াইয়ের মূল শক্তি ছিল বোলিং, এবার ছিল ব্যাটসম্যানরা পালা। তবে টি-টোয়েন্টিতে কীভাবে ব্যাটিং করতে হয় না-বাংলাদেশের ইনিংস ছিল সেটিরই একটা উদাহরণ। ইনিংসে সর্বোচ্চ জুটিটি ২৭ রানের, সর্বোচ্চ ইনিংস ১৭ রানের। এরপর কোনো দলের বেশি দূর যাওয়ার কথা নয়, বাংলাদেশও যায়নি।

ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন বাংলাদেশ দলের সবাই
ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন বাংলাদেশ দলের সবাই, এএফপি

পাওয়ার প্লেতে ৩ পেসারকে দিয়ে ৬ ওভার করান স্যান্টনার, তবে কাউকেই টানা ২ ওভার করাননি। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে তাঁদের ব্যবহার করে সফলও হয় নিউজিল্যান্ড, ৩ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ চাপে পড়ে শুরুতেই। সৌম্য সরকার লেগ স্টাম্পে আম্পায়ার্স কলে এলবিডব্লিউ হয়ে নিজেকে অভাগা ভাবতে পারেন, তবে রনি তালুকদার রিভিউ না নিয়ে ভুল করেন। এ দুজনের মধ্যে অতি-আক্রমণাত্মক হতে গিয়ে থামতে হয় নাজমুলকে। তিনজন নিউজিল্যান্ডের তিন পেসার টিম সাউদি, বেন সিয়ার্স ও অ্যাডাম মিলনের শিকার।

মাঝের ওভারে এরপর ইশ সোধি ও মিচেল স্যান্টনারের স্পিন-যুগলের কবলে পড়ে বাংলাদেশ। সোধি উইকেট পাননি, তবে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের রান করতে দেননি সেভাবে। স্যান্টনার অবশ্য একের পর এক উইকেট নিয়ে গেছেন, সেটিও এমন প্রান্ত থেকে বোলিং করে, যেদিকে বাতাস তাঁর বিপক্ষে। গতির বৈচিত্র্যে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ধন্দে ফেলেছেন বারবার। সোধি ও স্যান্টনারের ৮ ওভারে আসে মাত্র ৩২ রান, শুরুতেই হোঁচট খাওয়া বাংলাদেশ ম্যাচের ওই পর্যায়ে পথ হারিয়ে বসে আরও।

সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ আফিফ
সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ আফিফ, এএফপি

৭ থেকে ১৬ ওভারের মধ্যে ৪৩ রান যোগ করতে আরও ৫ উইকেট হারায় তারা, এর মধ্যে ৪টিই নেন স্যান্টনার। তাওহিদ হৃদয়, আফিফ হোসেন, শামীম হোসেন ও মেহেদী হাসানকে আউট করে বাংলাদেশের মিডল অর্ডার গুঁড়িয়ে দেন তিনি। তাঁর বিপক্ষে কী করবেন, সেটিই যেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। পাওয়ার প্লের পর মাঝের ওভারে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডেথ ওভারেও আর কিছু পায়নি বাংলাদেশ। শুরুর মতো শেষের ৩ উইকেটও নেন নিউজিল্যান্ডের ৩ পেসার। বাংলাদেশ থামে যথেষ্টর চেয়েও অনেক কম রানে। যাতে বাড়ে আক্ষেপ, সেই পুরোনো আক্ষেপ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.