বগুড়ার বিখ্যাত সরার দই এবার পেল ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) হিসেবে স্বীকৃতি। শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের (ডিপিডিটি) ২৬ জুনের সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এ সংবাদে উচ্ছ্বসিত বগুড়ার শেরপুরের দই ব্যবসায়ী ও কারিগরেরা। মূলত বগুড়ার শেরপুর থেকে প্রায় দেড় শ বছর আগে এই দই উৎপাদনের যাত্রা শুরু হয়েছিল।
বগুড়ার দইয়ের জিআই পণ্যের স্বীকৃতির জন্য বগুড়া রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি তাদের আবেদনে এর ইতিহাস তুলে ধরে। সেখানে বলা হয়, প্রায় ১৫০ বছর আগে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ঘোষ পরিবারের হাত ধরে বগুড়ার দইয়ের উৎপাদন শুরু হয়। শেরপুরে দই তৈরির প্রবর্তক ঘোষপাড়ার নীলকণ্ঠ ঘোষ।
নীলকণ্ঠ ঘোষের বংশধরেরা আজও দই ব্যবসা ধরে রেখেছেন। বগুড়ার দই জিআই পণ্যের মর্যাদা পাওয়া নিয়ে দই উৎপাদক গোপাল চন্দ্র ঘোষ বলেন, এই মর্যাদার মধ্য দিয়ে তাঁদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। দই উৎপাদনে গুণগত মান আরও বৃদ্ধি পাবে।
দই নিয়ে কথা হয় শেরপুরের সাউদিয়া ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপক আবদুল খালেকের সঙ্গে। তিনি জানান, দই উৎপাদনে বগুড়ায় প্রথম আসে শেরপুর। রয়েছে ঐতিহ্যের দেড় শ বছরের ইতিহাস। শেরপুরে থেকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক পরিসরে দই উৎপাদন শুরু করে সাউদিয়া ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টস। ১৯৮৩ সাল থেকে এই যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে শেরপুরের দই নামে ঢাকা শহরেও শোরুম খুলে ব্যবসায়ী যাত্রা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ধীরে ধীরে সেই দই দেশজুড়ে প্রশংসা পেয়েছে। পাশাপাশি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে শেরপুরের দই।
দই উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শেরপুরের দই প্রথম প্রথম বিভিন্ন জেলায় নিকটাত্মীয় এবং জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে সরবরাহ করা হতো। ওইটাও দইয়ের সুনাম ছড়িয়ে দেওয়ার কৌশল ছিল। এ কারণেই শেরপুরের দই দেশবাসীর কাছে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছিল। বগুড়ার দই জিআই পণ্যের মর্যাদা পাওয়ায় দীর্ঘদিনের পরিশ্রম ও চেষ্টা সার্থক হয়েছে বলে জানান দই ব্যবসায়ী ও কারিগরেরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শেরপুর উপজেলায় দই তৈরির কারখানা রয়েছে অন্তত ৫০টি। এসব কারখানায় নিয়োজিত কারিগর রয়েছেন অন্তত ৫০০ জন। এসব কারখানার উৎপাদিত দই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলা শহরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
শেরপুর পৌর শহরের সাউদিয়া ডেইরি অ্যান্ড ফুড প্রোডাক্টসের কারখানায় গতকাল বুধবার দই তৈরির সময় কথা হয় তিনজন কারিগরের সঙ্গে। তাঁরা জানান, বগুড়ার দই জিআই পণ্যের মর্যাদা পাওয়ার বিষয়টি তাঁরা শুনেছেন। তাঁদের পরিশ্রমের তৈরি এই দইয়ের এমন সম্মানের কারণে তাঁরাও অনেক খুশি।
বৈকালি দই মিষ্টি ঘরের স্বত্বাধিকারী পার্থ কুমার সাহা ও ভিআইপি দই তৈরি কারখানার মালিক সজল চৌধুরী জানান, শেরপুরের দই সারা বিশ্বে প্রসিদ্ধ এবং মানসম্পন্ন। এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে শেরপুরের দই ব্যবসায়ীরা আরও উৎপাদনে উৎসাহিত হবেন। দই তৈরি ব্যবসাতে নতুন উদ্যোক্তার সৃষ্টি হবে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রায়হান বলেন, শেরপুরে দই উৎপাদনে দুধের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে উপজেলায় গবাদিপশুর খামার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলায় ছোট, বড় ও মাঝারি দুগ্ধ খামার রয়েছে ৬ হাজার। এখান থেকে প্রতিদিন অন্তত ২ লাখ ২৫ হাজার লিটার দুধ উৎপাদিত হয়। দইসহ দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনে এসব দুধ ব্যবহার করা হয়। দুধ ও মিষ্টিজাত পণ্য তৈরিতে প্রতিদিন শেরপুরে লেনদেন হয় অন্তত ২ কোটি ৯২ লাখ টাকা।