ফ্লাইট এক্সপার্ট হঠাৎ বন্ধ, মালিক ও কর্মকর্তার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

0
8
বন্ধ হওয়ার খবর শুনে ফ্লাইট এক্সপার্টের কার্যালয়ে ভুক্তভোগীদের ভিড়। শনিবার (২ আগস্ট ২০২৫) সন্ধ্যায় রাজধানীর মতিঝিলে

উড়োজাহাজের অনলাইন টিকিট বুকিংয়ে দেশের অন্যতম প্ল্যাটফর্ম ‘ফ্লাইট এক্সপার্ট’-এর ওয়েবসাইট হঠাৎই বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো গ্রাহক ও টিকিট বিক্রেতা এজেন্সি, যাঁরা অগ্রিম টিকিট বুকিংয়ের জন্য অর্থ পরিশোধ করেছিলেন।

ফ্লাইট এক্সপার্টের একাধিক কর্মকর্তার অভিযোগ, প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে মালিকপক্ষ দেশ ছেড়েছে। এতে গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের কোটি কোটি টাকা ফেরত পাওয়া অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

আজ শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মতিঝিলে ফ্লাইট এক্সপার্টের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অনেক মানুষ সেখানে ভিড় করেছেন। তাঁদের অনেকেই বিভিন্ন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও টিকিট বিক্রেতা এজেন্সির প্রতিনিধি, যাঁরা নিজেদের কেনা টিকিটগুলো কী হবে, তা জানতে চান। কিন্তু কার্যালয়ে গিয়ে অধিকাংশই হতাশ।

এ সময় ইউনিয়ন ট্রাভেলস নামের একটি এজেন্সির মালিক কাঁদতে কাঁদতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব শেষ ভাই, আমার ভাই ২৫-৩০ লাখ টাকা নাই। আমি শেষ।’ তিনি জানান, তার সবগুলো টিকিটই ফ্লাইট এক্সপার্টের মাধ্যমে কাটা ছিল। তবে এসে শুনেছেন, সেগুলো ফ্লাইট এক্সপার্টের সরাসরি টিকিট নয়, অন্য দুটি এজেন্সির মাধ্যমে নেওয়া।

২০১৭ সালের মার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ফ্লাইট এক্সপার্ট। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এয়ারলাইনসের টিকিট বুকিং, হোটেল রিজার্ভেশন (কক্ষ সংরক্ষণ), ট্যুর প্যাকেজ ও ভিসা প্রক্রিয়াকরণের মতো বিভিন্ন সেবা দিত তারা। বিশেষ করে কম খরচে সহজে টিকিট বুকিংয়ের সুবিধার কারণে প্ল্যাটফর্মটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ফ্লাইট এক্সপার্ট নিজেরা সরাসরি উড়োজাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে টিকিট না নিয়ে দুটি মধ্যস্থতাকারী এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করত। এখন ওই দুটি এজেন্সি নিজেদের কেনা টিকিটগুলো রিফান্ড (ফেরত) করে অর্থ তুলে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে।

ফ্লাইট এক্সপার্টের অভ্যন্তরীণ একটি ফেসবুক গ্রুপে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সালমান বিন রশিদের একটি বার্তার স্ক্রিনশট পেয়েছে প্রথম আলো। সেখানে তিনি দাবি করেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তা তাঁর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তিনি নিজেকে হুমকি ও অপবাদ থেকে রক্ষা করতেই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দিচ্ছেন এবং দেশ ছাড়ছেন।

সালমান অভিযোগ করেন, ফ্লাইট এক্সপার্টের দুই কর্মকর্তা তিন কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন। পরিকল্পিতভাবে তাঁর ওপর দোষ চাপানো হয়েছে।

হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে ফ্লাইট এক্সপার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান টাকা নিয়ে পালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ক্রেতারা টাকা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই টিকিট পান। এখানে পালানোর সুযোগ নেই। বরং সাঈদ আহমেদ সরবরাহকারীদের টিকিট রিফান্ড করতে বলে তাঁদের বিপদে ফেলেছেন। এখানে গ্রাহকদের টাকার ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। কেননা তাঁরা টাকা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিকিট পেয়ে যান।

হোয়াটসঅ্যাপে জানতে চাইলে ফ্লাইট এক্সপার্টের হেড অব কমার্শিয়াল সাঈদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মালিকপক্ষই টাকা নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে গেছে। এখন অসংখ্য এজেন্সি ও গ্রাহক কোটি কোটি টাকার টিকিট নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন।

সাঈদ আহমেদ জানান, তাঁরা মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন।

মতিঝিল থানায় করা জিডিতে সাঈদ আহমেদ অভিযোগ করেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান শনিবার কাউকে কিছু না জানিয়ে পরিবারসহ বিদেশে পালিয়ে যান। তিনি কর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের কথা জানান।

মতিঝিল সিটি সেন্টার ভবনের নিরাপত্তাকর্মীরাও জানান, ফ্লাইট এক্সপার্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান বিন রশিদ নিয়মিত অফিসে আসতেন। তবে তিন দিন ধরে তিনি অনুপস্থিত।

সেখানে থাকা একটি এজেন্সির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ছোট এজেন্সিগুলো টিকিট বুকিংয়ের জন্য বড় প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর নির্ভর করতে বাধ্য। এই নির্ভরতাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.