ছেলেকে হারিয়ে বাক্‌রুদ্ধ তাহমিনা, জানানো হয়নি স্বামীর মৃত্যুর খবর

0
82
বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে তেলের ট্যাংকার বিস্ফোরণে নিহত ছেলে ফারদিন আরাফাত ও বাবা কুতুব উদ্দিন

বিস্ফোরণে নিহত ছেলের লাশ যখন বাড়িতে, তখনো স্বামী একই দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে শুরুতে একাধিকবার মূর্ছা গিয়েছিলেন তাহমিনা বেগম। লাশ দাফনের পর থেকেই বাক্‌রুদ্ধ তিনি। ছেলেকে কবরে শুইয়ে দেওয়ার এক দিন যেতেই মারা গেলেন স্বামীও। এত শোক সইতে পারবেন না, তাই পরিবারের সদস্যরা তাহমিনাকে জানাননি তাঁর স্বামীর মৃত্যুর খবর।

তাহমিনা বেগম বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে তেলের ট্যাংকার এমটি ইবাদি-১–এ বিস্ফোরণে নিহত ফারদিন আরাফাতের (২২) মা। গত বৃহস্পতিবার দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থলেই ফারদিন আরাফাতের মৃত্যু হয়। শনিবার রাতে তাঁকে দাফন করা হয়। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় রোববার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান তাহমিনার স্বামী কুতুব উদ্দিন।তাহমিনার শ্বশুরবাড়ি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়নের নিউ রাজাপুর গ্রামে। গতকাল সোমবার বিকেল চারটার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের ভেতর শোকাবহ পরিবেশ। প্রতিবেশী ও স্বজনেরা ভিড় করে আছেন ঘরে। তাহমিনা বেগমকে সান্ত্বনা দিতে দেখা যায় তাঁদের। ঘরের উঠানে টানানো হয়েছে শামিয়ানা। সেখানে পেতে রাখা চেয়ারে বসে আলাপে ব্যস্ত ৮-১০ জন।

কুতুব উদ্দিনের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর বাড়িতে জড়ো হয়েছেন স্বজনেরা। গতকাল বিকেলে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরায়
কুতুব উদ্দিনের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর বাড়িতে জড়ো হয়েছেন স্বজনেরা। গতকাল বিকেলে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরায়

ঘরের উঠানে কথা হয় তাহমিনার ভাই নিয়াজ মোরশেদের সঙ্গে। তিনি  বলেন, তাঁর ভগ্নিপতির মৃত্যুর খবর বোনকে জানানো হয়নি। রাতে বাড়িতে লাশ পৌঁছালে তখন জানানো হবে। সন্তানের পর স্বামীর মৃত্যুর খবর সইতে পারবেন না, তাই পরিবারের সদস্যরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বোনের অগোচরেই তাঁর ভগ্নিপতির কবর খোঁড়াসহ লাশ দাফনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান নিয়াজ মোরশেদ।

তাহমিনার তিন মেয়ে রয়েছেন, সবাই বিবাহিত। বড় মেয়ে ইসরাত জাহানের শ্বশুর নুরুল করিম বলেন, কুতুব উদ্দিন তেলের ট্যাংকারটিতে প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন। ৯ মে ছেলে ফারদিন আরাফাত বাবার তেলের ট্যাংকারে বেড়াতে যান। একই দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলে দুজনই না–ফেরার দেশে চলে গেলেন।

নুরুল করিম বলেন, ফারদিন ডেক ক্যাডেটের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। জাহাজে চাকরি করার ইচ্ছা ছিল তাঁর। কুতুব উদ্দিন চেয়েছিলেন, একটি ঘর নির্মাণ করে ছেলেকে বিয়ে করাবেন। ঘর করতে বাড়ির পাশে কিছু জায়গাও কিনেছিলেন। দুজনের কারও ইচ্ছা পূরণ হলো না।

কুতুব উদ্দিনের লাশ দাফনের খবর নিতে আসেন তেলের ট্যাংকারটির তত্ত্বাবধায়ক মো. শওকত হাসান। তিনি বলেন, ‘১৮ বছর ধরে কুতুব উদ্দিন ওই জাহাজে চাকরি করছেন। জাহাজটি কেন বিস্ফোরিত হয়েছিল, তিনি এবং দ্বিতীয় প্রকৌশলী রুবেল হোসেন ভালো জানার কথা। দুর্ঘটনায় দুজনেরই মৃত্যু হয়েছে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.