ময়ে মরে: সার্বিয়ার যে গানে মজেছেন বাংলাদেশি শ্রোতারাও

0
185
গানের শিল্পী তেয়া দোরা, গানের কথা ও সুরও তাঁর, ছবি: ইনস্টাগ্রাম

একটি গানের অংশবিশেষ ‘ময়ে মরে’ ছড়িয়েছে টিকটকে; এটি নিয়ে ভিডিও বানানোর হিড়িক পড়ে যায়। সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে তা হাওয়ার বেগে ফেসবুক রিলস, ইউটিউব শর্টসেও ছড়িয়ে পড়ে।

ফেসবুকে ‘ময়ে ময়ে’ (উচ্চারণটি আসলে ‘ময়ে মরে’ হবে) লিখে পোস্টও করছেন অনেকে, শব্দটি নিয়ে হাস্যরসও করছেন কেউ কেউ। শব্দটি দিন দুয়েক ধরে ফেসবুকের সার্চলিস্টে ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে।

‘ময়ে মরে’ অর্থ না জানলেও গানটির সুরের মায়াজালে আটকে পড়েছেন বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের নানা প্রান্তের সংগীত–অনুরাগীরা। ২ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের এই আলোচিত গানের শিরোনাম ‘ড্যানাম’।

গানের ভিডিওচিত্রে মডেলিংও করেছেন তেয়া দোরা
গানের ভিডিওচিত্রে মডেলিংও করেছেন তেয়া দোরা, ছবি: ইনস্টাগ্রাম

সার্বীয় ভাষার গানটি গেয়েছেন সার্বিয়ান গায়িকা, সুরকার তেয়া দোরা; গানের ভিডিওচিত্রে মডেলিংও করেছেন তিনি। সার্বিয়ার র‍্যাপার ও গীতিকার কোবির সঙ্গে যৌথভাবে গানটি লিখেছেন তেয়া দোরা; লোকা জোভানোভিকের সঙ্গে সুরও বেঁধেছেন দোরা।

সার্বিয়ার সংগীত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রেইম ও জুনির ভেতারের ব্যানারে গত ২২ মার্চ গানটি ইউটিউবে, স্পটিফাইয়ে প্রকাশিত হয়। জুনির ভেতারের ইউটিউব চ্যানেলে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত গানটি ৪৫ মিলিয়নেরও বেশি বার শোনা হয়েছে।

প্রকাশের প্রায় ছয় মাস পর টিকটকে এই সপ্তাহে গানের অংশবিশেষ ‘ভাইরাল’ হওয়ার পর হু হু করে গানের ‘ভিউ’ বাড়ছে। ইউটিউবে পুরো গানটি শুনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন শ্রোতারা।

ইউটিউবে গানের কমেন্ট বক্সে সিরাজুম মুনিরা নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘গানটি বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গানের কথার মাঝে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছি। ফলে গানটি ভাষার ব্যবধান ভাঙতে পেরেছে।’

স্পটিফাইয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাত কোটিবার শোনা হয়েছে ‘ড্যানাম’। এর আগে স্পটিফাইয়ে তেয়া দোরার আরও সাতটি গান প্রকাশিত হয়েছে। সব গান মিলিয়েও দেড় কোটির বেশি শোনা হয়নি। অ্যাপল মিউজিক, অ্যামাজন মিউজিকেও ঝড় তুলেছে ‘ড্যানাম’।

এটা তো গেল পুরো গানের পরিসংখ্যার, গানের ‘ময়ে মরে’ অংশটুকু কত কোটি বার শোনা হয়েছে—সেই হিসেব টানা দুরূহ। এই সময়ে টিকটকে, ফেসবুক রিলসে ও ইউটিউব শর্টসে বহুল ব্যবহৃত গানের অংশবিশেষ এটি।

বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে শ্রোতাদের ভালোবাসা পাচ্ছেন গায়িকা তেয়া দোরা। সামাজিক মাধ্যম থ্রেডসে এক পোস্টে শ্রোতাদের উদ্দেশে তিনি লিখেছেন, ‘গানটিকে ভালোবাসায় আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। সার্বিয়া থেকে গানটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে, এটা দেখে খুবই ভালো লাগছে। প্রতিদিনই বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ভালোবাসা পাচ্ছি। আপনাদের জন্য ভালোবাসা রইল।’

গানটি নিয়ে টিকটকে ভিডিও বানানোর হিড়িক পড়েছে
গানটি নিয়ে টিকটকে ভিডিও বানানোর হিড়িক পড়েছে, ছবি: টিকটক থেকে নেওয়া

গানজুড়ে বিষাদের ছায়া
সার্বীয় ভাষায় ‘মরে’ শব্দের অর্থ দুঃস্বপ্ন। গানের কথা ও সুরে বিষাদ ছড়ানো আছে। এতে না পাওয়ার যন্ত্রণা আছে, সেই যন্ত্রণা নিজেকে বয়ে বেড়াতে হয়। যন্ত্রণার মধ্যেও সুন্দর একটা জীবনের স্বপ্নের কথা বলা হয়েছে গানে। তবে ভাগ্যের ওপর ভরসা রাখতে পারেন না।

শিল্পী গানে বলছেন, তাঁকে দিনের পর দিন দুঃস্বপ্ন (মরে) তাড়া করে বেড়ায়। দুঃস্বপ্ন হতাশা ও বিচ্ছিন্নতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। দুঃস্বপ্নের ঘোরে নিজেকে ফেলনা মনে করেন। এর মাঝেও খড়কুটো ধরে বাঁচতে চান। তিনি চান, কেউ তার পাশে এসে দাঁড়াক। তাঁকে কেউ বুঝুক, মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিক।

তেয়া দোরার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সার্বিয়ার বেলগ্রেডে
তেয়া দোরার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সার্বিয়ার বেলগ্রেডে, ছবি: ইনস্টাগ্রাম

কে এই তেয়া দোরা
এই গানের স্রষ্টা তেয়া দোরার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সার্বিয়ার বেলগ্রেডে। তাঁর বাবা একজন লোকসংগীতশিল্পী। বাবাকে দেখেই সংগীতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে পিয়ানো শেখেন। ১৬ বছর বয়সে বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলে কলেজ অব মিউজিকে পড়তে যান। পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে সুরকার ও গীতিকার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন।

২০১৯ সালে ‘ডা না মেনি জে’ শিরোনামে একটি গান দিয়ে কণ্ঠশিল্পী হিসেবে অভিষেক ঘটে তেয়ার। সার্বিয়ার সিনেমায়ও গান করেছেন তিনি। ‘ড্যানাম’ গান দিয়ে সার্বিয়া ছাপিয়ে দুনিয়াজোড়া পরিচিতি পেলেন ৩২ বছর বয়সী এই শিল্পী।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.