ফুটপাতের খাবার হোটেলের ফেলা পানিতেও জন্মাচ্ছে মশা

0
156

রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় গত ছয় মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে আগের সব রেকর্ড। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপে বলা হয়েছে, রাজধানীর ৫৭টি ওয়ার্ডের মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্তের উচ্চ ঝুঁকিতে আছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্মীরা কোথাও কোথাও মশক নিধনে কাজ করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। নগরবাসীর মধ্যেও আছে সচেতনতার অভাব। খুঁজলেই বাসাবাড়ির বেজমেন্ট, ছাদ, বাগান, নর্দমায় মিলছে মশার লার্ভা। ঘরের ভেতর ফ্রিজের নিচে, এসির নিচে জমা স্বচ্ছ পানিতেও এডিসের লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সেখানে সিটি করপোরেশনের কর্মীদের পক্ষে যাওয়া সহজ নয়। ফলে প্রশাসনের উদ্যোগের পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে জনসাধারণকে সচেতন হয়ে এডিসের প্রজননস্থল ধ্বংসে নিজ থেকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিন রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে, সড়কের পাশে খালি জায়গায় বৃষ্টির জমা পানিতে ভাসছে মশার লার্ভা। খিলগাঁও রেলগেটের পশ্চিমে চৌরাস্তার সড়কের পাশে কয়েক স্থানে গত কয়েকদিন আগের বৃষ্টির পানি জমে আছে। এ ছাড়া ফুটপাতের ওপর বসা খাবারের দোকান থেকেও প্রায়ই পানি ফেলা হচ্ছে, যা জমে থাকছে খানাখন্দে। গতকাল সেখানে এমনই একটি খানাখন্দে মশার লার্ভা দেখতে পাওয়া যায়। এ বিষয়ে ফুটপাতে খাবারের দোকান বসানো ব্যক্তি নিজের নাম বলতে রাজি হননি। ফেলে দেওয়া পানি পরিষ্কার না করার বিষয়েও তিনি কোনো কথা বলেননি। পাশের ফুটপাতে পানের দোকানদার সজীব আহমেদ জানান, বৃষ্টি হলেই এখানে পানি জমে থাকে। আবার খাবারের দোকানের পানি সড়কের গর্তে পড়ে সেখানেই জমে থাকে। এ পানি খাবারের দোকানদার বা কেউ পরিষ্কার করে না।

 

এদিন বিকেলে খিলগাঁও রেলগেটের পশ্চিম এলাকায় বাসার হোল্ডিং ধরে ফগিং করছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মশক নিধন কর্মী হায়দার আলী। তিনি বলেন, গতকাল বুধবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মশক নিধন শুরু হয়েছে। সকালে লার্ভিসাইডিং ও বিকেলে ফগিং করা হচ্ছে। এ ওয়ার্ডের সড়কের বিভিন্ন জায়গায় জমা পানিতে লার্ভার ছবি দেখানো হলে হায়দার আলী বলেন, পানিতে যা দেখা যাচ্ছে তা আসলে মশার লার্ভা নয়। এসব বিভিন্ন পোকার লার্ভা। এর মধ্যেও লার্ভিসাইডিং করা হয়েছে।

ওই এলাকা, অর্থাৎ সংরক্ষিত মহিলা আসন-৪ এর কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তালিকায় আমার এলাকাকে ডেঙ্গু ঝুঁকিপূর্ণ বলা হয়েছে। মঙ্গলবারও এ এলাকায় তিনজন আর আজ (বুধবার) একজন আক্রান্ত হয়েছেন। আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। বাসাবাড়ির বিভিন্ন স্থানে জমাট বাঁধা পানি আছে কিনা দেখা হচ্ছে। এর মধ্যে খিলগাঁও বস্তির দিকে সড়কের পাশে খাবারের দোকানের পাশে জমাট পানি আমার নজরেও এসেছে। বৃহস্পতিবার এসব স্থান ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন স্থাপনায় লার্ভার অস্তিত্ব আছে কিনা তা দেখতে অভিযান চালানো হবে।’

ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, সরকারি ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন মশক নিধন কার্যক্রম চলছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে তিন দিন পরপর সকালে লার্ভিসাইডিং ও বিকেলে ফগিং করা হচ্ছে। এর মধ্যে এডিস মশার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়স্থল বাসা বাড়ির বেজমেন্ট, ছাদ রয়েছে। তবে ঘরের ভেতর ফ্রিজের নিচে বা এসির পানি জমলে সেখানে এডিস মশা জন্ম নেবে। কিন্তু এসব জায়গায় সিটি করপোরেশনের যাওয়া সম্ভব নয়। তাই মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে। আমরা বছরের শুরু থেকে এ বিষয়ে সচেতনতা কার্যক্রম শুরু করেছিলাম, এখন শক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে। বাসাবাড়িতে মশার লার্ভা পাওয়া গেলে জরিমানা করা হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.