ফিরে দেখা ১৬ জুলাই: আবু সাঈদের মৃত্যুতে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ রূপ নেয় স্ফুলিঙ্গে

0
9
আবু সাঈদ

১৬ জুলাই ২০২৪ — অকুতোভয় রাষ্ট্রের প্রতীক হয়ে উঠেন রংপুরের আবু সাঈদ। পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীর মৃত্যু একতাবদ্ধ করে গোটা দেশকে। এদিন কঠোর রূপ নেয় কোটা আন্দোলন; শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। ছাত্রলীগের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করেই শিক্ষার্থীরা ঘুরে দাঁড়ায়। সারাদেশ থেকে আসে ৬ জনের মৃত্যুর সংবাদ। মোতায়েন করা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বন্ধ হয়ে যায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান; কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হল। স্থগিত হয় এইচএসসি পরীক্ষাও।

শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা-নিপীড়নের পর, ১৬ জুলাই আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কোটা আন্দোলনের পরিস্থিতি। দুপুর থেকেই শুরু হয় অবরোধ ও সংঘর্ষ। সায়েন্সল্যাব মোড়ে কোটার পক্ষে আন্দোলনকারী এবং ছাত্রলীগের মধ্যে হয় দফায় দফায় সংঘর্ষ। সন্ধ্যার দিকে মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে উভয় পক্ষ। আন্দোলনকারীরা হামলা চালায় পুলিশ বক্সে। এসব ঘটনায় বিকেলে দুই জন নিহতের খবর জানায় পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিজিবি মোতায়েন করা হয় ঢাকা কলেজের সামনে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েও (জবি) চলছিল সংঘর্ষ; গুলিবিদ্ধ হয় ৪ শিক্ষার্থী। আহত হয়ে সেদিনই ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নেন দেড় শতাধিক। কোটা আন্দোলনকারীদের পদচারণা ও স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় আন্দোলনকারীরা।

এদিকে সারাদেশে দিনভর চলতে থাকে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ। চট্টগ্রাম, রংপুর, বরিশাল—সব জায়গাতেই উত্তেজনা; পাওয়া যায় ৬ জনের প্রাণহানির খবর। এরইমধ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যু নাড়িয়ে দেয় সরকার ও প্রশাসনের প্রতি জনগণের বিশ্বাসের ভিত। ক্ষোভ রূপ নেয় স্ফুলিঙ্গে।

অন্যদিকে, বরিশালে সংঘাত চলাকালে হামলার শিকার হয় যমুনা টেলিভিশনের গাড়ি। বগুড়ায় আহত হন ব্যুরো প্রধান মেহেরুল সুজন। চট্টগ্রামে শিক্ষার্থী ও পথচারীসহ ৩ জন নিহত হন, আহত হয় অর্ধশতাধিক। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যরাতের হামলায় আহত হন শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী। সেই তালিকায় ছিলেন ৫ সংবাদকর্মীও।

এদিন বিকেল ৩টায় দেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ-মিছিলের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের পরই, সব শিক্ষাঙ্গণে প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয় ছাত্রলীগ। পরস্পরবিরোধী অবস্থানে বিরাজ করে চরম উত্তেজনা। পরিস্থিতি নিরসনে, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বন্ধের ঘোষণা আসে। ওই রাতেই হলচ্যুত করা হয় ছাত্রলীগ নেতাদের; ভাঙচুর করা হয় কক্ষে কক্ষে।

এদিন একাত্মতা প্রকাশ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন স্কুল-কলেজ। ঘটে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও। আন্দোলনে যোগ দেয় ইউআইইউ, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মোহাম্মদপুরে অবরোধ করে ছাত্রছাত্রীরা। কোটার যৌক্তিক সংস্কার এবং হামলার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসে।

এদিকে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে চালানো হামলার প্রতিবাদে বিবৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। জানায়, সহিংসতা নতুন মাত্রা পেতে পারে। মার্কিন মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের এমন মন্তব্যে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আক্রমণাত্মক বক্তব্য অব্যাহত রাখেন আওয়ামী লীগ নেতারাও।

কোটা আন্দোলনের পক্ষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় বিনিয়োগ বাতিল করে সরকার। কারণ জানতে চাইলে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বেড়েছে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা।

এদিন কোটা আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করে ছাত্রদল। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলও তার বক্তব্যে তুলে ধরেন সরকারের পৈশাচিক নির্যাতনের চিত্র।

আন্দোলনের মেঘ যে ক্রমান্বয়ে ঘনীভূত হচ্ছিল, সেটি আঁচ করতে পেরেছিলেন মন্ত্রীরা। তাই, নমনীয়তার বদলে কঠোর অবস্থানে যায় সরকার। বিপরীতে, জীবন বাজি রেখে দাবি আদায়ে সোচ্চার ছিল শিক্ষার্থীরা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.