ফিফা অনূর্ধ্ব–২০ বিশ্বকাপ মেসিভক্তের জোড়া গোলে আর্জেন্টিনাকে কাঁদিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন মরক্কো

0
11
আর্জেন্টিনার বিপক্ষে অনূর্ধ্ব–২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে জোড়া গোল করেছেন মরক্কোর ইয়াসির জাবিরি, ছবি: ফিফা

আর্জেন্টিনা ০–২ মরক্কো

কদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল। স্টেডিয়ামের টানেলের প্রবেশমুখে দাঁড়িয়ে এক সাংবাদিক ইয়াসির জাবিরির কাছে তাঁর পছন্দের ফুটবলারের নাম জানতে চাইছেন।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো নাকি মেসি? মেসি নাকি রোনালদো নাজারিও? মেসি নাকি ম্যারাডোনা? মেসি নাকি পেলে? মেসি নাকি রোনালদিনিও?

এবার সাংবাদিক একটু চালাকি করে জাবিরির স্বদেশি দুই ফুটবলারের নাম বললেন।

মেসি নাকি (আশরাফ) হাকিমি? মেসি নাকি (হাকিম) জিয়েশ?

কিন্তু প্রতিবারই জাবিরির উত্তর একই—মেসি।

মেসির পাঁড় ভক্ত জাবিরির জোড়া গোলেই আজ কাঁদতে হলো ফিফা অনূর্ধ্ব–২০ বিশ্বকাপে রেকর্ড ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে।

চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোর এস্তাদিও নাসিওনাল হুলিও মার্তিনেজ প্রাদানোসে অনুষ্ঠিত ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে ২–০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতল আফ্রিকার দেশ মরক্কো।

ডিয়েগো ম্যারাডোনা, লিওনেল মেসি, পল পগবা, আর্লিং হলান্ডের মতো ফুটবলারদের ফুটবল বিশ্বের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে ফিফা অনূর্ধ্ব–২০ বিশ্বকাপ। এই সিঁড়ি বেয়েই ওপরে উঠতে উঠতে তাঁরা বনে গেছেন তারকা। তাঁদের সঙ্গে এবার ইয়াসির জাবিরির নামটাও যোগ করতে পারেন।

আর্জেন্টিনার বিপক্ষে অনূর্ধ্ব–২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে জোড়া গোল করেছেন মরক্কোর ইয়াসির জাবিরি
আর্জেন্টিনার বিপক্ষে অনূর্ধ্ব–২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে জোড়া গোল করেছেন মরক্কোর ইয়াসির জাবিরি

টানা ছয় ম্যাচ জিতে ফাইনালে ওঠা আর্জেন্টিনা ‘সপ্তস্বর্গে’ যাওয়ার খুব কাছাকাছি ছিল। শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে দিয়েগো প্লাসেন্তের দলকেই ফেবারিট ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু ৭৬% বলের দখল আর ২০টি শট নিয়েও জালের দেখা পেল না আর্জেন্টাইনরা।

উল্টো যতবারই বল পায়ে এসেছে, প্রায় ততবারই আর্জেন্টাইনদের চাপে ফেলেছে মরক্কানরা। বিশেষ করে প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগকে তটস্থ করে তুলেছিলেন ইয়াসির জাবিরি, ওথমান মাম্মা, জেসিম ইয়াসিনরা।

মরক্কোর গোল দুটিও এসেছে প্রথমার্ধে। ম্যাচের শুরুর দিকে দারুণ গোছালো এক আক্রমণে গোলটা প্রায় পেয়েই গিয়েছিলেন জাবিরি। তবে বিপদ আঁচ করতে পেরে বক্সের ঠিক বাইরে এসে তাঁকে ফাউল করেন আর্জেন্টাইন গোলকিপার সান্তিয়াগো বারবি।

ফাইনালে মরক্কোর কাছে হারের পর আর্জেন্টাইনদের কান্না
ফাইনালে মরক্কোর কাছে হারের পর আর্জেন্টাইনদের কান্না, ছবি: এএফপি

ভিএআর যাচাইয়ের পর বাবরিকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। সেই সঙ্গে মরক্কোকে ফ্রি কিক নেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই সুযোগটাই কাজে লাগান জাবিরি। বাঁ পায়ে জোরালো শটে প্রথমবার আর্জেন্টিনার জাল কাঁপান পর্তুগিজ ক্লাব ফামালিকাউয়ের এই ফরোয়ার্ড।

ম্যাচের বয়স তখন সবে ১২ মিনিট। তাই ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচে ফেরার জন্য আর্জেন্টিনার হাতে পর্যাপ্ত সময় ছিল। কিন্তু দিনটা আক্ষরিক অর্থেই আজ মরক্কানদের ছিল।

চিলি প্রতিবেশী দেশ হলে কী হবে, স্টেডিয়ামে আজ আর্জেন্টিনার সমর্থক তেমন ছিল না বললেই চলে। গ্যালারির বেশিরভাগ অংশে মরক্কোর সমর্থকদের সরব উপস্থিতি, যা দেখে মরক্কান তরুণদের ঘরের মাঠে খেলার অনুভূতি হওয়ার কথা।

২৯ মিনিটে জাবিরি দ্বিতীয়বারের মতো দলকে এগিয়ে দেওয়ার পর স্টেডিয়াম যেন এক টুকরো মরক্কো হয়ে উঠল। তবে জাবিরি আনন্দের আতিশয্যে না ভেসে সিজদা করতে লাগলেন। শুরুর একাদশের সতীর্থরা তো বটেই, ডাগআউটে থাকা সতীর্থরাও মাঠে ঢুকে তাঁকে অভিনন্দন জানাতে লাগলেন।

অবশ্য জাবিরির এই গোলে বড় কৃতিত্ব ওথমান মাম্মার। ইংলিশ ক্লাব ওয়াটফোর্ডেরর এই উইঙ্গার চিতার বেগে আর্জেন্টিনার বক্সে ঢোকার পর ডিফেন্ডার হুয়ান ভিয়ালবাকে কাটিয়ে জাবিরির উদ্দেশে যে ক্রস বাড়ান, তা ছিল চোখে লেগে থাকার মতো।

দুই গোলে পিছিয়ে পড়া আর্জেন্টিনা বিরতির পর ঘুরে দাঁড়ানোর অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু মরক্কোর জমাট রক্ষণের সামনে তাদের সব প্রচেষ্টা আজ ব্যর্থ হয়েছে।

রেফারি শেষ বাঁশি বাজাতেই তাই হতাশায় মাঠে লুটিয়ে পড়েছেন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়েরা। বিপরীতে মরক্কানরা আনন্দে দিগ্বিদিক ছোটাছোটি করেছেন। যিনি যাঁকে সামনে পেয়েছেন, আবেগে জড়িয়ে ধরেছেন। বয়সভিত্তিক এই বৈশ্বিক আসরে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়া বলে কথা!

মরক্কোর অধিনায়ক হোসাম ইসাদাকের হাতে ট্রফি তুলে দিচ্ছেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো
মরক্কোর অধিনায়ক হোসাম ইসাদাকের হাতে ট্রফি তুলে দিচ্ছেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো

উৎসবের মাত্রা আরও বেড়েছে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো মরক্কান অধিনায়ক হোসাম ইসাদাকের হাতে ট্রফিটা তুলে দেওয়ার পর।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.