ফরিদপুরে মহাসড়কের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া পাটকলশ্রমিক মনিরা আক্তার (২৬) হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ জানিয়েছে, ক্রমাগত পারিবারিক কলহ ও প্রথম স্ত্রীর প্ররোচনায় মনিরাকে খুন করেন স্বামী সাহেব আলী।
এ ঘটনায় জড়িত মনিরার স্বামী মো. সাহেব আলী (৩৮) ও তাঁর প্রথম স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগমকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
গত ২৩ এপ্রিল বেলা পৌনে ১১টার দিকে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে মানিকনগর সেতুর পাশে একটি পুকুরের পাড় থেকে মনিরার মৃতদেহ উদ্ধার করে নগরকান্দা থানা–পুলিশ। এ ঘটনায় মনিরার ফুফু ফুলজান খাতুন বাদী হয়ে একই দিন নগরকান্দা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
মনিরার বাড়ি নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ভোগডুবরি গ্রামে। তিনি ফরিদপুর সদরের বাখুন্ডা এলাকায় অবস্থিত জোবায়দা-করিম জুট মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। তিন বছর আগে তাঁর সঙ্গে নগরকান্দার তালমা ইউনিয়নের কোনাগ্রামের সাহেব আলীর বিয়ে হয়।
ফরিদপুরে সড়কের পাশে পড়ে ছিল নারী শ্রমিকের লাশ
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাহেব আলীর প্রথম স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগম। ১২ বছর আগে তাঁদের বিয়ে হয়। জ্যোৎস্নার বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের কহলদিয়া গ্রামে। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার কথা বলে তিনি মনিরাকে বিয়ে করেন। অটোরিকশাচালক সাহেব আলী মনিরাকে বিয়ে করলেও কোনাগ্রামে মায়ের সঙ্গে থাকতেন। অপর দিকে মনিরা বাখুন্ডা এলাকায় তাঁর ফুফু ফুলজান খাতুনের সঙ্গে থাকতেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন। তিনি বলেন, সাহেব আলীর সঙ্গে মনিরার পারিবারিক সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। তিনি মনিরাকে নানা বিষয়ে সন্দেহ করতেন। পাশাপাশি দীর্ঘদিন বিদেশে থেকে আসার পর সম্প্রতি প্রথম স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগমের সঙ্গে সাহেব আলীর সদ্ভাব গড়ে ওঠে।
মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন আরও বলেন, পারিবারিক কলহ ও প্রথম স্ত্রীর প্ররোচনায় সাহেব আলী মনিরাকে গত ২২ এপ্রিল বিকেলে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে মানিকনগর সেতুর পাশে একটি পুকুরের পাড়ে নিয়ে যান। সেখানে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে গলা, বুক ও পেটে ছুরি মেরে মনিরাকে হত্যা করে পালিয়ে যান তিনি। মনিরা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে গত শুক্রবার ভোরে ঢাকার দোহার থানা এলাকা থেকে সাহেব আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে ২৬ এপ্রিল মুকসুদপুর উপজেলার কহলদিয়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে জ্যোৎস্না বেগমকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বর্তমানে জেলহাজতে রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও তদন্ত) শেখ মো. আবদুল্লাহ বিন কালাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার, সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) মো. আসাদুজ্জামান, নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিরাজ হোসেন, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম, গোয়েন্দা পুলিশ ভাঙ্গা জোনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগরকান্দা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বিকাশ মণ্ডল বলেন, সাহেব আলীকে আদালতে সোপর্দ করা হবে। আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দিলে পরে রিমান্ডে এনে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।