সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন হতে বাকি আর সাত দিন। মেয়র প্রার্থীরা এখন গণসংযোগের পাশাপাশি মতবিনিময় সভা আর উঠান বৈঠক করে ভোটারদের কাছে নানা পরিকল্পনার কথা বলছেন। স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে এলাকার সমস্যাগুলো শুনে সেসব সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। মেয়র প্রার্থীদের সমর্থনে তাঁদের কর্মীরাও পৃথকভাবে পাড়া-মহল্লা চষে বেড়াচ্ছেন।
গতকাল সোমবার আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী চারটি পথসভা, একটি মতবিনিময় সভা করেন। এসব কর্মসূচিতে তিনি ভোটারদের নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচিত হলে তিনি রাস্তাঘাটের উন্নয়ন থেকে শুরু করে জলাবদ্ধতা নিরসন, সুপেয় পানির সংকট দূর, শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, সুরমা নদী খনন ও নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন।
দুপুর ১২টার দিকে আনোয়ারুজ্জামান দক্ষিণ সুরমার বাবনা পয়েন্ট এলাকায় গণসংযোগ করেন। সিলেটের ব্যবসায়ীরা নানা সমস্যায় জর্জরিত বলে উল্লেখ করেন তিনি। আনোয়ারুজ্জামান বলেন, নির্বাচিত হলে ব্যবসায়ীদের অসুবিধা দূর করা হবে। সাধারণ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
পথসভা শেষে গণসংযোগকালে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে সিলেট জেলা ট্রাক পিকআপ কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম হাদী সয়ফুল, জেলা বাস-মিনিবাস-কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মইনুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মুহিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম ওরফে বাবুলের সমর্থনে গতকাল বেলা দেড়টা থেকে পর্যায়ক্রমে ৩৭, ৩৮, ৩৯ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে জাপা সিলেট মহানগরের সদস্যসচিব আবদুস শহীদ লস্কর বশিরের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা গণসংযোগ করেন। সন্ধ্যায় মাছিমপুর এলাকায় এবং রাতে লালদিঘিরপার এলাকায় পৃথক দুটি নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় অতিথির বক্তব্য দেন জাপার প্রার্থী নজরুল। এর আগে গত রোববার রাতেও তিনি নগরে একাধিক পথসভায় বক্তব্য দেন।
কয়েক দিন ধরে নজরুল ইসলাম তাঁর বক্তৃতায় নগরে খেলার মাঠ স্থাপন, জলাবদ্ধতা নিরসন, নগরের সৌন্দর্যবর্ধন, শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন, যানজট দূর, নিয়মিত মশক নিধন ও সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের বিষয়ে ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মাহমুদুল হাসান গতকাল নগরের গৌরীপুর, টুকেরগাঁও, হায়দরপুর, কালীগাঁও, তালতলা, কাজিরবাজার, কালীঘাট, ছড়ারপাড়, সোবহানীঘাট, নাইওরপুল, বারুতখানা, দরগামহল্লা, দপ্তরিপাড়া, উপশহর আই ব্লকসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি একাধিক পথসভা ও মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন।
পথসভায় মাহমুদুল বলেন, সিলেট নগরের উন্নয়ন নিয়ে তাঁর রয়েছে কিছু আলাদা পরিকল্পনা। তিনি এ নগরকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে সাজাতে চান। জনগণের উন্নয়নের জন্য মাঠে নেমেছেন। নির্বাচিত হলে এই শহরকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে সব ধরনের উদ্যোগ নেবেন।
মাহমুদুল হাসান তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমি এই নগরে অতিথি হয়ে আসিনি। আমার চলে যাওয়ারও কোনো পথ নেই। ভিনদেশে আমার কোনো বাড়ি নেই। আমার ব্যাপারে উড়ে এসে জুড়ে বসার কোনো কথা নেই। আমি এখানে রাজনীতি করি। এখানে রাজনীতি করেই বড় হয়েছি। এই নগরের জনগণের সঙ্গেই আমার চলাফেরা। তাই মেয়র নির্বাচিত হলে এই নগরের উন্নয়নে কোনো ছাড় দেব না।’
গণসংযোগকালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিলেট মহানগরের সহসভাপতি রিয়াজুল ইসলাম, সেক্রেটারি ইমাদ উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল ফাহাদ, প্রচার সম্পাদক সোলায়মান আহমদ শাহী, শফিক আহমদ, সাদেক আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট সিটিতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ছাড়াও জাকের পার্টির প্রার্থী মো. জহিরুল আলম এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আবদুল হানিফ, মো. ছালাহ উদ্দিন, মো. শাহ্ জামান মিয়া ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নগরে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন।