খননকাজ শেষ হওয়া খালটি দেড় বছর যেতে না যেতেই আবার ভরাট হয়ে গেছে। বর্তমানে বদ্ধ খালটিতে ফেলা হচ্ছে শহরের আবর্জনা।
সাতক্ষীরা শহরের বুক চিরে বহমান খালটির নাম প্রাণসায়ের। এই প্রাণসায়ের খাল ঘিরে গড়ে উঠেছিল একসময় সাতক্ষীরা শহর। বর্তমানে খালটি সাতক্ষীরার শহরের ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে ইচ্ছেমতো। খালের কালো পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে সর্বত্র। খালের পাড়ের সড়ক দিয়ে লোকজনকে চলতে হয় নাক চেপে।
স্থানীয় লোকজন জানান, ১৮৫০ সালের দিকে সাতক্ষীরার জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরী নদীপথে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা ও শহরের শ্রীবৃদ্ধির জন্য খালটি খনন করেন।
মরিচ্চাপ নদের সঙ্গে বেতনা নদীর সরাসরি যোগাযোগ রক্ষার জন্য সাতক্ষীরা শহরের ওপর দিয়ে ১৪ কিলোমিটার এ খাল খনন করা হয়। খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম ছিল এ খাল। এ খালের মাধ্যমে সহজ হয়ে উঠেছিল জেলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগও। জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরীর নাম অনুসারে খালটির নামকরণ করা হয় প্রাণসায়ের খাল।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো, বিভাগ-২) নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরার সদর উপজেলার এল্লারচর থেকে খেজুরডাঙ্গী পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার খাল পুনঃখননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা। খাল খননের কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০১৯ সালের ১ আগস্ট। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের ৩০ জুন। কিন্তু শেষ হয় ২০২১ সালে জুনে। খননকাজ শেষ হওয়া খালটি দেড় বছর যেতে না যেতেই আবার ভরাট হয়ে গেছে।
সাতক্ষীরা পাউবোর (বিভাগ-২) নির্বাহী প্রকৌশলী শামিম হুসনাইন মাহমুদ জানান, খালটি পাউবো খনন করলেও জমির মালিক পৌর কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসন। তাদেরই এটি রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা।
সাতক্ষীরা শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসনে জাহিদ জজ বলেন, খালটির মরিচ্চাপ নদের মুখে এলারচর ও বেতনা নদীর মুখে খেজুরডাঙ্গীতে নব্বই দশকে দুটি জলকপাট নির্মাণ করা হয়। এতে খালটি স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হতে থাকে। জলকপাট দুটি পরবর্তী সময়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খালের জোয়ার–ভাটা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। ২০২১ সালের জুনে খননকাজ শেষ হওয়া খালটি দেড় বছর যেতে না যেতেই আবার ভরাট হয়ে গেছে। বর্তমানে বদ্ধ খালটিতে ফেলা হচ্ছে শহরের আবর্জনা। খালের পচা পানিতে আবর্জনা মিশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। খালপাড় দিয়ে লোকজনকে চলাচল করতে হয় মুখে রুমাল দিয়ে।
খালপাড়ের বাসিন্দা আবেদুর রহমান বলেন, প্রতিদিন ভোরে খালপাড়ের এ সড়ক দিয়ে কয়েক শ মানুষ হাঁটাহাঁটি করেন। তাঁদের নাক চেপে ধরে দিয়ে চলাচল করতে হয়। খালে আশপাশের বাসিন্দারা ছাড়াও বড় বাজারে ব্যবসায়ীসহ অন্য ব্যবসায়ীরা ময়লা ও আবর্জনা ফেলে দুর্গন্ধময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। এতে সাতক্ষীরা শহরের পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র ফিরোজ হাসান বলেন, মানুষ যাতে খালটিতে ময়লা–আবর্জনা না ফেলেন, সে জন্য বারবার বলা হচ্ছে। কিন্তু কেউ শুনছেন না। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলাপ করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির জানান, প্রাণসায়ের খালপাড়ের বাসিন্দা ও দোকানদারদের নোটিশ করে নিষেধ করা হবে। তাঁরা না শুনলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় দেখছেন না। খাল রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।