পোশাকের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশই পাঁচ পণ্যে

0
116
পোশাক রপ্তানি

পণ্যের বৈচিত্র্য কম থাকা দেশের রপ্তানি খাতের অন্যতম বড় দুর্বলতা। এ দুর্বলতা কাটাতে কিছু নীতিসহায়তা দিচ্ছে সরকার। রপ্তানিতে নগদ সহায়তা এবং আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি পর্যায়েও কিছু পদক্ষেপ আছে। তবে এসব উদ্যোগে আশাবাদী হওয়ার মতো সুফল মেলেনি এখনও। মোট রপ্তানি আয়ে তৈরি পোশাকের হিস্যা আরও বেড়ে এখন ৮৬ শতাংশ। আবার পোশাক এগোচ্ছে পাঁচ পণ্যের নির্ভরতায়। পোশাকের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশেরও বেশি আসে এ পাঁচ পণ্য থেকে।

পোশাকের এ পাঁচ পণ্য হচ্ছে– শার্ট, টি-শার্ট, ট্রাউজার, জ্যাকেট ও সোয়েটার। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ পণ্যগুলোর হিস্যা দাঁড়িয়েছে ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অর্থাৎ পোশাকের বাকি পণ্যগুলোর অবদান ১৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের হারমোনাইজড সিস্টেম (এইচএস) কোডের দুই ডিজিট অনুযায়ী রপ্তানি তালিকায় পোশাকের শতাধিক পণ্য রয়েছে।

পোশাক পণ্যে এই বৈচিত্র্যহীনতার কারণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, পোশাকের মধ্যে নতুন পণ্য রপ্তানিতে আলাদা নগদ সহায়তা নেই। আবার এ জাতীয় পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতেও কিছু শুল্ক বাধা আছে। মেশিনারিজ আমদানিতেও কিছু জটিলতা আছে। এটাও সত্য যে, ৩০ বছর ধরে উদ্যোক্তারা মৌলিক মানের পোশাক উৎপাদনে হাত পাকিয়েছেন। এ কারণে এই ধরনের পোশাকই বেশি উৎপাদিত হয়ে থাকে। অবশ্য প্রতিযোগিতার বিশ্ববাজারে টিকতে এখন মৌলিক পোশাকের পাশাপাশি উচ্চ মূল্যের এবং মূল্য সংযোজিত পণ্যের উৎপাদন ধীরে ধীরে বাড়ছে। লিনজারি এবং সিমলেসের মতো আইটেমও এখন উৎপাদন এবং রপ্তানি করছেন উদ্যোক্তারা। নতুন যত বিনিয়োগ হচ্ছে, সেগুলোর একটি বড় অংশই উচ্চ মূল্যের বৈচিত্র্য পণ্য আইটেমের।

তিনি বলেন, পাঁচ পণ্যের মধ্যেও বৈচিত্র্য আসছে। দামি আইটেমের বাজার ধরতে ব্যবসায়িক-কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। প্রচলিত বাজারের পাশাপাশি অপ্রচলিত বাজারেও যোগাযোগ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। বৈচিত্র্য আনার এসব প্রচেষ্টার সুফল পাওয়া যাবে একটি পর্যায়ে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এবং তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, পোশাকের পাঁচ পণ্যের মধ্যে আবার ট্রাউজারের দাপট নিরঙ্কুশ। পাঁচ পণ্যের মধ্যে ট্রাউজারের হিস্যাই ৩৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গত অর্থবছরে এ পাঁচ পণ্যের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৭৭৮ কোটি ডলার। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৯৫ কোটি ডলারের ট্রাউজার রপ্তানি হয়। গত অর্থবছরে পাঁচ পণ্যের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯ শতাংশ রপ্তানি আয় এসেছে টি-শার্ট থেকে, যার পরিমাণ ১ হাজার ৮৬ কোটি ডলার। তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রায় ১৬ শতাংশ এসেছে সোয়েটার রপ্তানি থেকে। রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ৫৯৪ কোটি ডলার। প্রায় ১০ শতাংশ আয় এসেছে ব্লাউজ থেকে। রপ্তানির পরিমাণ ৩৬৫ কোটি ডলার। পোশাকের মোট রপ্তানিতে এ পণ্যের অংশ চতুর্থ। এ খাতের পঞ্চম অবস্থান আন্ডারওয়্যারের। পোশাক রপ্তানিতে আন্ডারওয়্যারের অংশ ছয় শতাংশের কিছু বেশি। মোট ২৩৭ কোটি ডলারের আন্ডারওয়্যার রপ্তানি হয়েছে গত অর্থবছর।

গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকায় দীর্ঘদিন ধরে মৌলিক পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করে আসছে বাংলাদেশ। চীন এ ধরনের পণ্য থেকে সরে আসায় ইউরোপ-আমেরিকায় বাংলাদেশের রপ্তানির ভিত্তি আরও মজবুত হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উত্তরণের পর শুল্কমুক্ত সুবিধা যখন থাকবে না, তখন এ ধরনের পণ্য রপ্তানি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। এসব বিবেচনায় খুব গুরুত্ব দিয়ে উচ্চ মূল্যের পোশাকে যেতে হবে বাংলাদেশকে। বিশেষ করে কৃত্রিম তন্তুর পোশাকে গুরুত্ব দিতে হবে। চীন ও ভিয়েতনাম এই পণ্যে আগে থেকে এগিয়ে আছে। এই পণ্যে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.