যশোর প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা-ক্লাস বন্ধ করে দিল ছাত্রলীগ

0
89
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ দফা দাবিতে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ চলছে। আজ রোববার তারা ক্যাম্পাসে একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ২৬টি বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা ও পাঠদান বন্ধ করে দিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। আজ রোববার সকাল থেকে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার হল ও শ্রেণিকক্ষে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করেন। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফি কমানো; নবনির্মিত ভবনের লিফট স্থাপন ও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতি মামলায় অভিযুক্তদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যাহতিসহ ১২ দফা দাবিতে গতকাল শনিবার বিকেল থেকে আন্দোলন শুরু করে ছাত্রলীগ। সংগঠনের নেতা–কর্মীরা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। দাবি আদায় না হলে ক্লাস–পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন ছাত্রলীগ নেতারা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মেসি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি, ইংরেজি, ফিজিওফেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলেশন ও পদার্থবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল ও স্পেশাল সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। বিভাগের শিক্ষকেরা সকাল থেকে খাতাপত্র নিয়ে পরীক্ষার হলে অবস্থান করলেও শিক্ষার্থীদের কেউ পরীক্ষা হলে যেতে পারেননি। রুটিন অনুযায়ী ২৪ জুন পর্যন্ত পরীক্ষা চলার কথা রয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার হলে বসতে পারছেন না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

ছাত্রলীগের ১২ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—নবনির্মিত স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের লিফট স্থাপন; বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়াল ও ডেস্ক ক্যালেন্ডারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি বিকৃত মামলায় অভিযুক্তদের চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা; সুষ্ঠু তদন্ত ব্যতীত কোনো শিক্ষার্থীর ওপর শাস্তি আরোপ বা সরাসরি বহিষ্কার না করা ও বহিষ্কৃত সব শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রতাহার; বিশ্ববিদ্যায়ের যেসব উন্নয়নমূলক কাজে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সেসব বিষয় তদন্তের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠন করা এবং ওই কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউকে না রাখা; সেমিস্টার ফি কমানো, বিভাগ উন্নয়নের নামে অবৈধ টাকা নেওয়া বন্ধ করা, ছাত্রলীগের সাবেক এবং বর্তমান নেতা–কর্মীদের নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কটূক্তিকারীদের বহিষ্কার করা ইত্যাদি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ১২টি দাবির মধ্যে দুই–একটি দাবি পূরণ করা তাঁর এখতিয়ারে রয়েছে। অন্যগুলো বাস্তাবায়ন করবেন রাষ্ট্রপতি ও ইউজিসি। ২০১৯ সালে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি বিকৃত মামলার ১ নম্বর আসামি তাঁকে করা হয়েছে। তিনি নিজে ১ নম্বর আসামি হয়ে ২ ও ৩ নম্বর আসামিকে তো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা দিতে পারেন না। ওই মামলায় আসামি করার পর ২০২১ সালে রাষ্ট্রপতি তাকে দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য নিযোগ করেছেন। ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একুশে পদক দিয়েছেন।

তাহলে ছাত্রলীগের আন্দোলন আসলে কার বিরুদ্ধে, প্রশ্ন উপাচার্যের। ছাত্রলীগের দাবির বিষয়গুলো প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহদেমসহ বিশ্ববিদ্যালয় রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য এবং ইউজিসিকে জানানো হয়েছে বলে জানান উপাচার্য।

উপাচার্য বলেন, সেমিস্টার ফি কমানোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষা ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের বিষয়। ইউজিসির আয়-ব্যয় দেখাতে হবে। ভবনে লিফট স্থাপনের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা আছে। প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে সেটি করা হচ্ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.