দেশজুড়ে পাঁচ দিন পুরোপুরি বন্ধ ছিল ইন্টারনেট। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ রেখে গত মঙ্গলবার রাত থেকে স্বল্প পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়। অফিস-আদালত, গণমাধ্যম ও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সংযোগ দেওয়া হয়।
গতকাল বুধবার রাত থেকে পর্যায়ক্রমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাসা-বাড়িতে পরীক্ষামূলকভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হওয়ার কথা। আগামী সপ্তাহে মোবাইল ইন্টারনেট চালু হতে পারে।
ধীরে ধীরে সচল হতে থাকলেও ৫ দিনের ইন্টারনেট ব্ল্যাক আউটে ই-কমার্স বিশেষ করে ফ্রিল্যান্সিংয়ে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে দেশের বাইরে অফিস সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। অনেকে ইতোমধ্যে কাজের একটা বড় অংশ অন্য দেশে স্থানান্তর করেছে। ইন্টারনেট না থাকায় সফটওয়্যার রপ্তানি, ফ্রিল্যান্সিং, ই-কমার্সসহ প্রযুক্তি খাতের লোকসান ইতোমধ্যে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সারাদেশের বাসা-বাড়িতে আজ রাত (বুধবার) থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ব্রডব্যান্ড চালু হবে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত আমরা পর্যবেক্ষণ করব। আর মোবাইল ডেটা আগামী সপ্তাহের মধ্যে চালুর চেষ্টা করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে অনেক এলাকায় বাসাবাড়িতে ব্রডব্যান্ড চালু হয়েছে। বাকি এলাকায়ও দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। তারপরও কিছু জায়গায় বাকি থাকবে; কারণ আমাদের ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কে অনেক জায়গায় সমস্যা। তা ঠিক করা হচ্ছে। এক-দু’দিনের মধ্যে সব জায়গায় পুরোপুরি সচল হবে।
প্রযুক্তি খাতে বিপর্যয়
ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ছেদ পড়ে ডিজিটাল জীবনযাত্রায়। থমকে যায় অনলাইনভিত্তিক আর্থিক কার্যক্রম। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) জানিয়েছে, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে পাঁচ দিনে সফটওয়্যার খাতের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০০ কোটি টাকার ওপরে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ফ্রিল্যান্সাররা। কেননা এ খাতের পুরোটা ইন্টারনেটনির্ভর। কয়েক দিন ইন্টারনেট না থাকায় ফ্রিল্যান্সাররা গ্রাহকের সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারেননি। মঙ্গলবার রাত থেকে ব্রডব্যান্ড চালু হলেও তা ছিল সীমিত পরিসরে। ফলে দেশের ৫-৬ লাখ ফ্রিল্যান্সার এখনও অনলাইনে ফিরতে পারেননি। তারা কাজ বাতিলের শঙ্কায় রয়েছেন। পাশাপাশি রেটিং কমে যাওয়ার ভয় পাচ্ছেন তারা। এতে নতুন কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংস পরিস্থিতির উদ্ভব হলে গত ১৭ জুলাই বুধবার ফোরজি (মোবাইল ইন্টারনেট) বন্ধ করা হয়। ১৮ জুলাই রাত থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও বন্ধ হয়ে যায়। যদিও সরকার দাবি করছে, সহিংসতায় ইন্টারনেট অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়েছে। তবে খাতসংশ্লিষ্টদের দাবি, অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলে ইন্টারনেট সেবা সীমিত হবে, স্পিড কমবে কিন্তু কোনভাবেই পুরো সেবা বন্ধ হবে না। কারণ, দেশের ইন্টারনেট সেবা সচল রাখতে বিকল্প অনেক উপায় রয়েছে।