প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা চেয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা

0
16
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান

শিল্প কারখানার নিরাপত্তার নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ চেয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে এ অনুরোধ জানান তারা। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন দাবিতে গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী নরসিংদীসহ শিল্প কারখানা অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় হামলা ভাঙচুর এবং শতাধিক পোশাক কারখানাসহ সব ওষুধ কারখানা বন্ধ থাকার প্রেক্ষিতে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। শিল্প উদ্যোক্তাদের দাবি, কারখানায় নারীর চেয়ে পুরুষ শ্রমিক বেশি নিয়োগ দেওয়াসহ অন্যান্য দাবিতে কিছু বহিরাগতরা ষড়যন্ত্রমূলক এসব কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। সাধারণ শ্রমিকরা এসব কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত নয়।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন ব্যবসায়ীদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশের (আইসিসিবি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, যারা হামলা করছে তারা কারখানার শ্রমিক নয়। এরা বহিরাগত। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্যই এ ধরনের কর্মকাণ্ড চলছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলেছেন তারা সরকারের সঙ্গে আছেন। গত কয়েক দিন বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিকাণ্ড ও ভাঙচুরের বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার নজরে আনা হয়েছে। উপদেষ্টা আশ্বস্থ করেছেন এ ব্যাপারে যৌথবাহিনীর নিরাপত্তা কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।

মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের এই ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলে ছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ. কে. আজাদ ও মীর নাসির হোসেন, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম এবং বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি–ফিকির সাবেক সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়।

জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশ এবং শিল্প পুলিশ এখনো পুরোপুরি সক্রিয় নয়। শিল্পের নিরাপত্তায় তাদের কাছ থেকে নিরাপত্তা সেবা ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়গুলোও প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছেন তারা। এ ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে বিষয়টি দেখা হয়। সব ধরনের শিল্প কারখানা তৈরি পোশাক এবং ওষুধ শিল্পসহ সব ধরনের শিল্প কারখানার নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। আসলে সরকার তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টাটা করছে।

বিজিএমইএ সভাপতি জানান, যৌথবাহিনী কার্যক্রম শুরু করার পর থেকেই পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার আশুলিয়ার ৪টি কারখানা বাদে সারা দেশের আর কোথাও কোনো কারখানায় সমস্যা হয়নি। আগামী দুই এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করেন খন্দকার রফিকুল ইসলাম।

বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টাকে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, যেসব কারখানার ভেতরে শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করছেন, সেই দাবিগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবেন ব্যবসায়ীরা। তবে কারখানার ফটকে বহিরাগত শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করছেন, ভাঙচুর চালাচ্ছেন। বহিরাগতরা কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের হুমকি দিয়ে রাস্তায় নামানোর চেষ্টা করছেন। এভাবে চলতে থাকলে কারখানা মালিকেরা লে–অফ (সাময়িক বন্দ) ঘোষণা করতে বাধ্য হবেন তারা। তখন পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করবে। আইন অনুযায়ী, লে অফে থাকা দিনের মজুরি পায় না শ্রমিকরা।

বিভিন্ন দাবিতে গত কয়েক দিন ধরে পোশাক কারখানায় হামলা–ভাঙচুর চলছে। নিরাপত্তার অভাবে সোমবার নতুন করে শতাধিক কারখানা হামলার ঘটনায় বন্ধ ঘোষণা করে মালিক কর্তৃপক্ষ। সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী এবং গাজীপুর এলাকার কারখানাই বেশি হামলার শিকরা হয়। আগের দিন গত রোববার  একইভাবে হামলা–ভাঙচুরের ঘটনায় ৫০টির মতো কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। ওষুধ শিল্পের শ্রমিকরাও বিভিন্ন দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছে। এ বাস্তবতায় সেনাবাহিনী, পুলিশ ও শিল্প পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনী গঠন করে সরকার। গত সোমবার থেকেই শিল্প অধ্যুষিত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারে কাজ করছে এ বাহিনী। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফট্যানেন্ট জেনারেল (অব.) এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে শিল্প এবং শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্দোলনকারী বগিরাগতদের নিবৃত্ত রাখতে কঠোর অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.