টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর অভিষেকটা ছিল দারুণ রঙিন। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসেই পেয়ে গিয়েছিলেন ৫ উইকেট। তাতে একটা রেকর্ডও গড়েছিলেন—প্যাট কামিন্সকে পেছনে ফেলে হয়েছিলেন সবচেয়ে কম বয়সে টেস্ট অভিষেকে ৫ উইকেট নেওয়া বোলার। কামিন্স কীর্তিটা গড়েছিলেন ২০১১ সালে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। পরে অবশ্য পাকিস্তানের নাসিম শাহ ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫ উইকেট নেন মাত্র ১৬ বছর ৩০৭ দিন বয়সে, নাসিম শাহর সেটা অভিষেক টেস্ট ছিল না, তবে টেস্ট ইতিহাসেই তাঁর চেয়ে কম বয়সে ৫ উইকেট নেননি আর কেউ।
অভিষেকে নাঈমের ওই কীর্তি তাঁকে এনে দিয়েছিল প্রথম আলোর সেরা উদীয়মান খেলোয়াড়ের পুরস্কারও। উদীয়মান হওয়া মানে বড় কিছুর সম্ভাবনা জাগানো—ভবিষ্যৎটা তাঁর উজ্জ্বলই হওয়ার কথা। কিন্তু ওই সুযোগ কতটা পেয়েছেন, সেই প্রশ্ন নাঈম চাইলেই তুলতে পারেন অবলীলায়।

৭ বছরেও তাঁর ক্যারিয়ার যে থমকে আছে কেবল ১২ টেস্টে। অথচ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৬৫ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ২৬৩টি উইকেট নাঈমের, ৫ উইকেট নিয়েছেন ১৭ বার। সেই নাঈম জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন কমই।
কতটা কম? তা বোঝা যাবে একটি উদাহরণ দিলেই—শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলমান এই গল টেস্টের আগে কখনো দেশের বাইরে বলই করেননি নাঈম। দেশের মাটিতে ১১ টেস্টে তিনবার ৫ উইকেট পেয়েছিলেন। বিদেশে যে টেস্ট খেলেননি, বিষয়টি যদিও তেমনও নয়। কিন্তু তাঁকে তখন হার মানতে হয়েছে ভাগ্যের কাছে।
২০১৯ সালে ইডেন গার্ডেনে ভারতের বিপক্ষে খেলতে নেমে প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে ১৯ রান করেছিলেন। কিন্তু মোহাম্মদ শামির বল হেলমেটে লাগার পর কনকাশন বদলি হয়ে যাওয়ায় ওই ম্যাচে আর বল করা হয়নি তাঁর। নাঈমের জায়গায় ওই ম্যাচে নেমেছিলেন তাইজুল।
টেস্টে বিদেশের মাটিতে বল করার প্রথম সুযোগটা তাই নাঈম পেলেন এবার গলে। সেই সুযোগটা রাঙালেন অভিষেক টেস্টের মতোই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন। টেস্ট ক্যারিয়ারে যা তাঁর জন্য চতুর্থ। ২০২২ সালে এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই সর্বশেষ ৫ উইকেট পেয়েছিলেন চটগ্রামে।
তবে গল টেস্টের আগেও তিনি আলোচনায় ছিলেন না খুব একটা। তাইজুল ইসলামকে নিয়ে কথা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে নাহিদ রানা–হাসান মাহমুদকে নিয়েও। মেহেদী হাসান মিরাজ খেলতে পারবেন কি না, তা নিয়েও তো কম কথা হয়নি।
সেসবের কোথাও ছিলেন না নাঈম। আড়ালে ছিলেন, এসেই ৫ উইকেট পেয়েছেন, আবার হয়তো আড়ালেই চলে যাবেন। এমন হলে যে কারোই একটু আফসোস হওয়ার কথা, নিজেকে ভাবার কথা দুর্ভাগাও। নাঈম কি তেমন মনে করেন? প্রশ্নের উত্তরটা আজ সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি দিলেন এভাবে, ‘দুর্ভাগ্য বলতে কিছু নেই, যা আল্লাহ ভাগ্যে রেখেছে, তা-ই হবে। সব স্পোর্টসম্যানের ক্যারিয়ার তো একরকম হয় না। আমারটা যে রকম, আলহামদুলিল্লাহ।’
তাঁর ৫ উইকেটের পর গল টেস্টে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে তারা ১০ রানের লিডও পেয়েছে। চতুর্থ দিন শেষে ৭ উইকেট হাতে রেখে এগিয়ে ১৮৭ রানে। শেষ দিনে জয়ের হাতছানিও আছে বাংলাদেশের সামনে।
নাঈমরাও খেলতে চান জয়ের জন্যই। আর কত হলে জেতার মতো রান হবে, তা নির্ভর করবে উইকেটের আচরণের ওপর। নাঈমের ভাষায়, ‘পঞ্চম দিনের উইকেট কী রকম হবে, সবাই তা জানে। উইকেটে ফাটল হচ্ছে, ওটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। তার আগে দলের জন্য যেটা ভালো মনে হবে, সে রকম একটা রানই করতে চাই, যাতে ওরা চাপে থাকবে।’