প্রথমবারের মতো বাংলাদেশেই তৈরি হবে বাণিজ্যিক ড্রোন, হবে রপ্তানিও

0
11
ড্রোন

বাংলাদেশের একটি কারখানাতেই এবার তৈরি হবে মনুষ্যবিহীন আকাশযান বা ড্রোন। স্কাই বিজ লিমিটেড নামে বাংলাদেশি একটি কোম্পানি রপ্তানিমুখী এই হাইটেক ড্রোন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।

সাধারণত বাণিজ্যিক ও সেবামূলক বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত এসব ড্রোন বিশ্বজুড়ে আনম্যান্ড এরিয়াল ভেহিকেল বা ইউএভি নামে পরিচিত। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, দেশে বাণিজ্যিক ও রপ্তানির উদ্দেশ্যে এ ধরনের ড্রোন তৈরি এটাই প্রথম।

ইউএভি তৈরির জন্য স্কাই বিজ চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রায় দুই একর জায়গায় এ কারখানা স্থাপন ও ড্রোন উৎপাদন শুরু করতে স্কাই বিজ বিনিয়োগ করবে প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকা।

স্কাই বিজের কর্মকর্তারা জানান, তাঁরা মোট ১০টি মডেলের ইউএভি তৈরি করবেন। এর মধ্যে আগামী জানুয়ারি মাসেই দুটি মডেলের উৎপাদন শুরু হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তাঁরা। কারখানাটি পুরোপুরি চালু হলে এখান থেকে বছরে ১৬ কোটি ৯০ লাখ বা ১৬৯ মিলিয়ন ডলারের ড্রোন রপ্তানি হবে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এটি প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার সমান।

স্কাই বিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসীম আহমেদ জানান, প্রায় দুই বছর আগে দেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী একাডেমিক কাজের অংশ হিসেবে ড্রোন তৈরির উদ্যোগ নেন। এ কাজে তাঁরা বেশ খানিকটা সফলও হন। তবে বাদ সাধে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের অভাব; তবে তাঁরা হাল ছাড়েননি। একসময় ওই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় জসীম আহমেদের। এরপর তিনি ইউএভি তৈরিতে পর্যাপ্ত গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। এ জন্য বিদেশেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এ পর্যায়ে কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসে।

জসীম আহমেদ জানান, প্রাথমিকভাবে তাঁরা দুটি মডেলের ড্রোন তৈরি করতে সক্ষম হন এবং বুঝতে পারেন যে আন্তর্জাতিক বাজারে এটির বেশ সম্ভাবনা রয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় গত বছরের জুন মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করেন স্কাই বিজ লিমিটেড নামে কোম্পানি। স্কাই বিজ অর্থ হলো আকাশে মৌমাছি; অর্থাৎ আকাশে মৌমাছির মতো ড্রোন ওড়াকে মনে করেই এ নাম দেওয়া হয়েছে।

কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পর তাঁরা বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের পণ্য ও বিনিয়োগ পরিকল্পনার কথা জানান। একই সঙ্গে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এতে রাজি হয় বেপজা।

বেপজার সঙ্গে চুক্তি

মিরসরাইয়ে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে দুই একর জায়গায় কারখানা স্থাপন করবে স্কাই বিজ লিমিটেড। এ লক্ষ্যে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেপজা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি একটি চুক্তি স্বাক্ষর করবে।

যেসব ড্রোন তৈরি হবে

বেপজাকে দেওয়া বিনিয়োগ প্রস্তাবে স্কাই বিজ জানিয়েছে, তারা ফিক্সড ও রোটারি উইংয়ের (পাখা) মোট ১০টি মডেলের ইউএভি উৎপাদনে যাবে। এগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন পেলোড ও এনডোরেন্স থাকবে। পুরোপুরি চালু হলে তাদের কারখানায় বছরে বিভিন্ন মডেলের ৭ হাজার ৩১৪টি ইউএভি উৎপাদিত হবে।

তবে প্রাথমিকভাবে কোম্পানিটি অগ্নিনির্বাপণের জন্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন রোটারি উইং ইউএভি তৈরি করবে। একই সঙ্গে সিনেমাটোগ্রাফি, ম্যাপিং ও সার্ভিলেন্স উপযোগী ফিক্সড উইং বা ভিটল বানানো হবে। দুটি মডেলেরই বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে আগামী জানুয়ারি মাসে।

স্কাই বিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসীম আহমেদ জানান, কৃষিক্ষেত্রে কীটনাশক স্প্রে, অগ্নিনির্বাপণ, পণ্য সরবরাহ, দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা প্রভৃতি সেবামূলক কাজে ব্যবহার করা যাবে তাঁদের তৈরি ইউএভি। ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এ ধরনের ড্রোনের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

জসীম আহমেদ আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিটি ইউএভি মূলত বেসামরিক ব্যবহারের জন্য নকশা করা। স্কাই বিজের সব কটি মডেলের ডিজাইন, সফটওয়্যার, ফ্লাইট কন্ট্রোল নিজেদেরই উদ্ভাবিত। তবে যন্ত্রাংশ ও কাঁচামাল আপাতত আমদানি করতে হচ্ছে। পর্য়ায়ক্রমে এগুলো স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’

স্কাই বিজের মূল কোম্পানি সুনামকো এটায়ার্স। এটির প্রতিষ্ঠাতাও জসীম আহমেদ। ঢাকা ও ঈশ্বরদী ইপিজেডে তাঁদের বস্ত্র ও পোশাক উপকরণ তৈরির কারখানা রয়েছে। পাশাপাশি তৈরি পোশাকশিল্পেও বিনিয়োগ করেছেন জসীম আহমেদ। এ ছাড়া ইপিজেডভিত্তিক শিল্পকারখানা গ্লোবাল লেভেলস বাংলাদেশ লিমিটেড (স্পেন-বাংলাদেশ যৌথ বিনিয়োগ) এবং জিংকি গ্লোবাল টেক্সটাইল বাংলাদেশ লিমিটেডের (চায়না-বাংলাদেশ যৌথ বিনিয়োগ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.