প্রকল্প পরিচালক অন্য কাজ করবেন না

একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

0
222
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালকরা অন্য কোনো দায়িত্ব পালন করবেন না। শুধু প্রকল্প পরিচালকের কাজই করবেন তাঁরা। উন্নয়ন প্রকল্প সময়মতো এবং মানসম্পন্ন বাস্তবায়নের স্বার্থে এই নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া আত্মনির্ভরশীলতা এবং আত্মমর্যাদার চেতনা থেকে বিদেশি গাড়ির পরিবর্তে দেশে উৎপাদিত গাড়ি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন তিনি। বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনা এবং একনেকের অন্যান্য সিদ্ধান্ত বিষয়ে বিস্তারিত জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালকদের অন্য কাজের ব্যস্ততাকে দায়ী করা হয়ে থাকে। মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য দাপ্তরিক কাজ থাকায় প্রকল্পে প্রয়োজনীয় সময় এবং মনোযোগ দিতে পারেন না অনেক প্রকল্প পরিচালক। একই কারণে একজন কর্মকর্তাকে একই সঙ্গে একাধিক প্রকল্পের দায়িত্ব না দেওয়ার নির্দেশনা আগেই দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর অন্যান্য নির্দেশনা সম্পর্কে এম এ মান্নান বলেন, কৃষি উৎপাদনে মনোযোগ দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। বিশ্ববাজারে রপ্তানির সুযোগ কাজে লাগাতে বলেছেন তিনি। ডাল উৎপাদন বাড়ানো এবং পতিত জমিতে চাষাবাদে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। দেশি মাছের উৎপাদন বাড়াতে নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পিরানহা ও আফ্রিকান মাগুর যেন আর দেশে আসতে না পারে। চিংড়ি চাষের পর প্রায়ই বালু জমে ঘেরের জমি ফসল উৎপাদনের উপযোগী থাকে না। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তিনি। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পে নির্মিত ভবন এবং যন্ত্রপাতি যাতে অব্যবহৃত না থাকে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

একনেকের বৈঠকে মূল্যস্ফীতিসহ সাবিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এতে জানানো হয়, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেড়েছে। এবার আমন ভালো হয়েছে। পেঁয়াজের উৎপাদনও সন্তোষজনক। সব মিলিয়ে সার্বিক অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি ভালো। তবে মার্চের মূল্যস্ফীতি আবার কিছুটা বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ঐতিহাসিকভাবেই বাংলা চৈত্র মাস এবং কার্তিক মাসে ফসল আসার আগে এ অবস্থা হয়ে থাকে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ছাড়াও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বৈঠকে অংশ নেন।

৯ প্রকল্প অনুমোদন : গতকালের একনেক বৈঠকে ৯টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদেশি ঋণ ১ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। সরকারের অর্থায়ন ৬৩৪ কোটি টাকা। বাস্তবায়নকারী সংস্থার অর্থায়ন দেড় কোটি টাকার মতো। সন্ত্রাস মোকাবিলা ও জননিরাপত্তায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী অনুমোদন করা হয়েছে। ৪০ কোটি টাকার প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২৩০ কোটি টাকা।

সংসদ সচিবালয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ১২২টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণে ৯৮ কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়েছে। সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী, পল্লি সড়কে সেতু নির্মাণ সমীক্ষা প্রকল্প, ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী, কারিগরি শিক্ষা প্রকল্প অনুমোদন করেছে একনেক।

এ ছাড়া ঢাকা কারিগরি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট নির্মাণ প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনীর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এবার অবশ্য ব্যয় কমানো হয়েছে আড়াই কোটি টাকা। প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন প্রকল্পের তৃতীয় সংশোধনীও অনুমোদন করা হয়েছে। এতে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ১৭৫ কোটি টাকার মতো। অনুমোদন হওয়া গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২৬ কোটি টাকা। এটি নতুন প্রকল্প।

‘বাংলাদেশ ভবিষ্যতে বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলবে’ : বাসস জানায়, এদিন প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রাইমারি স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাইমারি স্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ ভবিষ্যতে বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলবে এবং সেই সব খেলোয়াড় এই টুর্নামেন্টগুলো থেকেই বেরিয়ে আসবে। খেলাধুলার পাশাপাশি সংস্কৃতিচর্চা, গল্প, ইতিহাস, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক বই পড়ার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের টেক্সট বইও পড়তে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধুলা মানে শারীরিক ব্যায়াম। খেলাধুলা শারীরিক শক্তি জোগায় এবং উদার মন-মানসিকতা গড়ে তোলে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.