পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি ১২৫০০ টাকাই থাকল

0
119
চূড়ান্ত ঘোষণায় অন্যান্য গ্রেডে মজুরি ১২৩ থেকে ৫২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে

পোশাকশিল্পের প্রবেশ স্তরের শ্রমিক-কর্মচারীর মাসিক ন্যূনতম মজুরি শেষ পর্যন্ত ১২ হাজার ৫০০ টাকায়ই বহাল থাকল। এই গ্রেডের অন্যান্য সুবিধার ক্ষেত্রেও কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। তবে মজুরি বোর্ডের যে খসড়া সুপারিশ ছিল, সে তুলনায় চূড়ান্ত ঘোষণায় অন্যান্য গ্রেডে মজুরি ১২৩ থেকে ৫২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গ্রেডের সংখ্যা আরও একটি কমিয়ে চারটি করা হয়েছে।

গতকাল রোববার নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চূড়ান্ত বৈঠকে সরকার, মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের সর্বসম্মত মতামতের ভিত্তিতে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে চূড়ান্ত মজুরি ঘোষণা করেন নিম্নতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা।

তিনি জানান, খসড়া সুপারিশের গেজেট প্রকাশের পর বিভিন্ন পক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ পেয়েছেন তারা। মজুরি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে এসব পর্যবেক্ষণ বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। গত ১১ নভেম্বর গেজেট প্রকাশের পর মোট ১৯৮টি পর্যবেক্ষণ এসেছে মজুরি বোর্ডে। এর মধ্যে  মালিকপক্ষ থেকে  ১৭৩টি এবং শ্রমিক সংগঠন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান থেকে ২৫টি পর্যবেক্ষণ এসেছে।

বৈঠকে নিম্নতম মজুরি বোর্ডে মালিকপক্ষের স্থায়ী প্রতিনিধি মকসুদ বেলাল সিদ্দিকী, শ্রমিকপক্ষের স্থায়ী প্রতিনিধি সুলতান আহম্মদ, নিরপেক্ষ প্রতিনিধি কামাল উদ্দিন, এবারের মজুরি বোর্ডে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এবং শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনী উপস্থিত ছিলেন।

ব্রিফিংয়ে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শ্রমিকদের মূল দাবি ছিল গ্রেডের সংখ্যা কমিয়ে চারটি করা। তা-ই করেছেন তারা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার ভিত্তিতে বিভিন্ন গ্রেডে মজুরি বাড়ানো হয়েছে। তাঁর দাবি, ঘোষিত মজুরি সর্বসম্মত। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন ইন্ডাস্ট্রিঅলের বাংলাদেশ কাউন্সিলসহ শ্রমিক ফেডারেশনগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। শ্রমিকদের অন্যান্য সুবিধা প্রসঙ্গে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই শ্রমিকদের রেশন সুবিধা চালুর চেষ্টা করবেন তারা। খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে তাঁর কথা হয়েছে। মজুরির কারণে বাড়ি ভাড়া যাতে না বাড়ে সে ব্যাপারেও স্থানীয় প্রশাসন এবং সংসদ সদস্যদের সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সিরাজুল ইসলাম রনী বলেন, শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত মজুরি কাঠামো মন্দের ভালো হয়েছে। বিশেষ করে গ্রেডের সংখ্যা কমানো এবং বিভিন্ন গ্রেডের মধ্যে মজুরির তফাত কমে আসায় শ্রমিকরা লাভবান হবেন। কারণ পোশাকশিল্পের ৪০ লাখ শ্রমিক-কর্মচারীর মধ্যে ৩৯ লাখ ৫০ হাজারই এসব গ্রেডে কাজ করেন। ন্যূনতম মজুরি বা প্রথম স্তরে শ্রমিক-কর্মচারী আছেন মাত্র ৫০ হাজার। নিত্যপণ্যের উচ্চদর বিবেচনায় চূড়ান্ত মজুরি যথেষ্ট কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজারের সঙ্গে মজুরি মেলানো কঠিন। তবে শিল্পের সক্ষমতাও বিবেচনায় নিতে হয়েছে।

গ্রেড বিভাজনে দেখা যায়, সর্বশেষ মজুরি কাঠামোয় গ্রেডের সংখ্যা ছিল সাতটি। এবারের মজুরি বোর্ডের খসড়া সুপারিশে এ সংখ্যা পাঁচটিতে নামিয়ে আনা হয়। মালিক এবং শ্রমিকপক্ষের সুবিধায় চূড়ান্ত ঘোষণায় তা আরও কমিয়ে চারটিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। এতে গ্রেড-৩ এবং গ্রেড-৪ একীভূত করা হয়েছে।

প্রবেশ স্তর অর্থাৎ গ্রেড-৪-এর নিম্নতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা। গ্রেড-৩-এ খসড়া ঘোষণার চেয়ে মজুরি বেড়েছে ৫২৫ টাকা। এই গ্রেডে নিম্নতম মজুরি দাঁড়াল ১৩ হাজার ৫৫০ টাকা। খসড়ায় যা ছিল ১৩ হাজার ২৫ টাকা। এই দুই গ্রেডের মজুরিতে পার্থক্য দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫০ টাকা। খসড়া ঘোষণায় গ্রেড দুটির শ্রমিকদের মজুরি পার্থক্য কম থাকায় তাদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। গ্রেড-২-এ খসড়া ঘোষণার চেয়ে মজুরি বেড়েছে ১২৩ টাকা। মোট মজুরি দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ২৭৩ টাকা। খসড়ায় যা ছিল ১৪ হাজার ১৫০ টাকা। গ্রেড-১-এ খসড়া ঘোষণার চেয়ে মজুরি বেড়েছে ২৮৫ টাকা। মজুরি দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩৫ টাকা। খসড়ায় যা ছিল ১৪ হাজার ৭৫০ টাকা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.