পোশাকের রপ্তানি আসলে কত

0
147
কাজ করছেন পোশাকশ্রমিকেরা

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পূর্ণাঙ্গ একটি অর্থবছর শেষ হলো গত জুনে। সরকারি হিসাবে, এই সময়ে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ১০ শতাংশ। অথচ ক্রয়াদেশ কমেছে, অধিকাংশ কারখানার ২০-৩০ শতাংশ উৎপাদন সক্ষমতা অব্যবহৃত। ফলে রপ্তানির প্রবৃদ্ধির সঙ্গে বাস্তবতার মিল খুঁজে পাচ্ছেন না তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা।

তৈরি পোশাকশিল্পের বেশ কিছু বড়-মাঝারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) গ্রাহক। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে এই ব্যাংকের মাধ্যমে ৩৫৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। সদ্য বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে তাদের রপ্তানি আয় প্রায় ১১ দশমিক ২০ শতাংশ কমে ৩১৭ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।

পোশাক ও বস্ত্র খাতে চারটি কারখানা রয়েছে উর্মি গ্রুপের। গ্রুপটি গত বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে প্রায় সাড়ে ৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে রপ্তানি কমে হয়েছে সাড়ে ৮ কোটি ডলার। ফলে অর্থের হিসাবে প্রায় ১ কোটি ডলার বা প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশি রপ্তানি হারিয়েছে গ্রুপটি।

ইপিবির পোশাক রপ্তানির পরিসংখ্যানের সঙ্গে আমরা বাস্তবতার কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছি না। গত অর্থবছরে আমার নিজের প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে। নারায়ণগঞ্জ বিসিকে আমার প্রতিষ্ঠানের আশপাশে যতগুলো কারখানা রয়েছে, সব কটিরই রপ্তানি কমেছে।

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম

মেশিনে কাজ করছেন নারী পোশাকশ্রমিক
মেশিনে কাজ করছেন নারী পোশাকশ্রমিক

এই যখন অবস্থা, তখন অর্থাৎ চলতি মাসের গোড়ার দিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তার মধ্যে ৮৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ অথবা ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলার এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। সামগ্রিকভাবে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৪ শতাংশ। ইপিবির তথ্যানুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে শীর্ষ ছয় খাতের মধ্যে শুধু তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে।

কয়েক মাস ধরেই পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তাদের কেউ প্রকাশ্যে, কেউবা ব্যক্তিগতভাবে তৈরি পোশাকের রপ্তানির পরিসংখ্যান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে আসছেন। তাঁদের যুক্তি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়, ফলে ক্রেতারা প্রয়োজনীয় নয় এমন পণ্য কেনা কমিয়ে দেন। তাতে কমে যায় পোশাকের বিক্রিও। আবার গত বছরের শেষ দিকে অধিকাংশ কারখানা ২০-৩০ শতাংশ কম উৎপাদন সক্ষমতায় চলছে। গ্যাস-বিদ্যুতের কারণেও উৎপাদন কম-বেশি ব্যাহত হয়েছে।

সবচেয়ে বড় দুই বাজারে পোশাক রপ্তানি কমেছে

বিদায়ী অর্থবছরের তৈরি পোশাকের রপ্তানির প্রকৃত চিত্র বুঝতে পক্ষ থেকে ৭টি ব্যাংক এবং অন্তত ১০টি বড়-মাঝারি তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা হয়।

ঢাকা ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতি মাসে ১৪-১৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হতো, গত এপ্রিলে থেকে তা ১০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।

ব্যাংকগুলো জানায়, ফেব্রুয়ারি-মার্চ সময় থেকে তাদের গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের পোশাক রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে কমেছে। জুনে কারও কারও একটু বেড়েছে। অন্যদিকে ১০টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটির উদ্যোক্তা জানান, তাঁদের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৪ শতাংশ। দুজন বলেছেন, রপ্তানি কমেনি, আবার বাড়েওনি। অর্থাৎ সমান সমান ছিল। বাকি সাতজন উদ্যোক্তা জানান, তাঁদের রপ্তানি কমেছে ১০-২০ শতাংশ।

নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ইপিবির পোশাক রপ্তানির পরিসংখ্যানের সঙ্গে আমরা বাস্তবতার কোনো মিল খুঁজে পাচ্ছি না। গত অর্থবছরে আমার নিজের প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি প্রায় ৫০ শতাংশ কমেছে। নারায়ণগঞ্জ বিসিকে আমার প্রতিষ্ঠানের আশপাশে যতগুলো কারখানা রয়েছে, সব কটিরই রপ্তানি কমেছে।’

৩০ শতাংশের বেশি রপ্তানি কমে গেছে। ক্রেতারা আগে যেসব পণ্য নিয়েছিল, তা বিক্রি করতে পারেনি। এ জন্য আদেশ দিলেও এখনই পণ্য নিতে চাইছে না।

ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক

ব্যাংকের তথ্য যা বলছে

সাউথইস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতি মাসে ৩০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হতো, এখন যা কমে ১৫-২০ কোটি ডলারে নেমেছে। ফলে ব্যাংকে আমদানি দায় পরিশোধ কমে গেছে। ব্যাংকটি ইতিমধ্যে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা আমদানি দায় ফোর্সড ঋণে রূপান্তর করেছে।

সিটি ব্যাংকের মাধ্যমে জানুয়ারিতে রপ্তানি ছিল ২৪ কোটি ডলার। এরপর প্রতি মাসে তা কমে এপ্রিলে এসে দাঁড়ায় ১৮ কোটি ডলারে ও মে মাসে ২০ কোটি ডলারে। একই অবস্থা বিদেশি ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি শাহ্‌জালাল ইসলামী ব্যাংকেরও।

তিন কারণে বাড়বে পোশাক রপ্তানি

ঢাকা ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতি মাসে ১৪-১৫ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হতো, গত এপ্রিলে থেকে তা ১০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমরানুল হক বলেন, ৩০ শতাংশের বেশি রপ্তানি কমে গেছে। ক্রেতারা আগে যেসব পণ্য নিয়েছিল, তা বিক্রি করতে পারেনি। এ জন্য আদেশ দিলেও এখনই পণ্য নিতে চাইছে না।

ডিসেম্বরের শেষে আমাদের দুই কারখানায় ২ হাজার ৭০০ শ্রমিক ছিল। স্বাভাবিকভাবেই প্রতি মাসে কিছু শ্রমিক চাকরি ছেড়ে চলে যায়। ক্রয়াদেশ কম থাকায় জানুয়ারি থেকে নতুন নিয়োগ বন্ধ। ওভারটাইমও অনেক দিন ধরে দিতে হচ্ছে না। বর্তমানে আমাদের শ্রমিক ২ হাজার ২০০ জনের কিছু বেশি

নারায়ণগঞ্জের নিট কারখানা প্লামি ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক

রপ্তানি কমেছে, বলছেন রপ্তানিকারকেরা

তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ পাওয়ার পর শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানির জন্য ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশনের (ইউডি) সনদের জন্য তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর কাছে আবেদন করে তাদের সদস্যপ্রতিষ্ঠানগুলো। সেই সনদের বিপরীতে শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করে কারখানা। ফলে ইউডির সংখ্যা দিয়ে পোশাকের ক্রয়াদেশের পরিস্থিতি বোঝা যায়।

বিকেএমইএ জানায়, তাদের সদস্যরা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৩০ কোটি পিস পোশাকের জন্য ইউডি নিয়েছিল, যার রপ্তানিমূল্য ১ হাজার ৩৯০ কোটি ডলার। আগের অর্থবছর ইউডি নেওয়া হয়েছিল ৮২৯ কোটি পিস পোশাকের জন্য, যার রপ্তানিমূল্য ছিল ১ হাজার ৭৩৩ কোটি ডলার। ফলে বিদায়ী অর্থবছরে নিট পোশাক রপ্তানি পরিমাণের দিক থেকে ২৩ শতাংশ এবং অর্থের হিসাবে ২০ শতাংশ কমেছে।

অন্যদিকে বিজিএমইএ জানায়, তারা গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২২ হাজার ৩৫২টি ইউডি দিয়েছিল। এর আগের অর্থবছরে ২৪ হাজার ৭৯৪টি ইউডি দিয়েছিল। তার মানে বিদায়ী অর্থবছরে ইউডি কমেছে ১০ শতাংশ।

নারায়ণগঞ্জের নিট কারখানা প্লামি ফ্যাশনস বিদায়ী অর্থবছরে আড়াই কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। আগের বছরের তুলনায় যা ১০-১২ শতাংশ কম। পরিমাণের দিক থেকেও তাদের রপ্তানি কমেছে ১২-১৫ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান কিছুটা দামি পোশাক উৎপাদন করে। ফলে আমাদের অবস্থা অতটা খারাপ না। অনেক প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি আরও বেশি কমেছে। ক্রয়াদেশ কমেছে। অন্যদিকে সুতার দামও বেশ কমেছে। ফলে পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়।’

এনবিআর থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে পোশাকের রপ্তানি আয় ছিল ৩ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকা। ইপিবির তথ্যে, গত অর্থবছরে ডলারের গড় বিনিময় মূল্য ছিল ৯৯ টাকা ৪৫ পয়সা। তাতে এনবিআরের হিসাবে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৮৫২ কোটি ডলারের। অথচ ইপিবি বলেছে, পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলারের।

আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার আল্পস অ্যাপারেলস গ্রুপের দুটি কারখানা রয়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে এই শিল্পগোষ্ঠীর তৈরি পোশাক রপ্তানি ছিল ৩ কোটি ডলারের। বিদায়ী অর্থবছর তাদের রপ্তানি ৩০ শতাংশ কমে ২ কোটি ১০ লাখ ডলারে দাঁড়ায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে আল্পস অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খান মনিরুল আলম বলেন, ‘ডিসেম্বরের শেষে আমাদের দুই কারখানায় ২ হাজার ৭০০ শ্রমিক ছিল। স্বাভাবিকভাবেই প্রতি মাসে কিছু শ্রমিক চাকরি ছেড়ে চলে যায়। ক্রয়াদেশ কম থাকায় জানুয়ারি থেকে নতুন নিয়োগ বন্ধ। ওভারটাইমও অনেক দিন ধরে দিতে হচ্ছে না। বর্তমানে আমাদের শ্রমিক ২ হাজার ২০০ জনের কিছু বেশি।’

দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ২৮ কোটি ৫৭ লাখ ডলার মূল্যের ৩ কোটি ৬২ লাখ পিস তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। গত বছরের একই সময়ে রপ্তানি ছিল ৩৭ কোটি ৩৯ লাখ ডলার মূল্যের ৪ কোটি ৯১ লাখ পিস পোশাক। অর্থাৎ অর্থের হিসাবে এই সময়ে রপ্তানি কমেছে সাড়ে ২৩ শতাংশ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, বিদায়ী অর্থবছরে তাঁদের রপ্তানি কমেছে ২০ শতাংশের কাছাকাছি।

পরিসংখ্যানে গরমিল

তৈরি পোশাক রপ্তানির তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে নিয়ে প্রকাশ করে ইপিবি। তবে এনবিআর থেকে পাওয়া তথ্য ইপিবির সঙ্গে মিলছে না। এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, গত অর্থবছরে টাকার হিসাবে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৬৯ শতাংশ। যদিও ডলারের হিসাবে রপ্তানি কমেছে ৪ শতাংশ। ইপিবি ও এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, পোশাক রপ্তানিতে গরমিল ৮৪৭ কোটি ডলারের।

এনবিআর থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে পোশাকের রপ্তানি আয় ছিল ৩ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকা। ইপিবির তথ্যে, গত অর্থবছরে ডলারের গড় বিনিময় মূল্য ছিল ৯৯ টাকা ৪৫ পয়সা। তাতে এনবিআরের হিসাবে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৮৫২ কোটি ডলারের। অথচ ইপিবি বলেছে, পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলারের।

এনবিআরের তথ্যানুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে পোশাকের রপ্তানি থেকে আয় ছিল ৩ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। ইপিবির তথ্যানুযায়ী, ওই বছর ডলারের গড় বিনিময় মূল্য ৮৬ টাকা ৩০ পয়সা হিসাবে রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ১৬ কোটি ডলারের পোশাক। ওই বছরে ইপিবি বলেছিল, পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ২৬১ কোটি ডলারের।

পোশাক রপ্তানির বাস্তব চিত্র কী, তা জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, ইপিবির রপ্তানি পরিসংখ্যানের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। বর্তমানে অধিকাংশ কারখানা কঠিন সময় পার করছে। পরিমাণের দিক থেকে পোশাকের ক্রয়াদেশ বেশ কমেছে। আমদানি করা কাপড় ও সরঞ্জামের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কিছু ওভেন পোশাকের রপ্তানিমূল্য সামান্য বেড়েছে। তবে তাতেও রপ্তানি বৃদ্ধির সুযোগ নেই।

রপ্তানি আয় আসছে না

এদিকে প্রতিবছর তৈরি পোশাক খাতের কয়েক শ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় দেশে প্রত্যাবাসন হচ্ছে না, কয়েক বছর ধরেই যার পরিমাণ বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ৪ হাজার ২৬১ কোটি ডলারের পোশাক। কিন্তু এ রপ্তানির বিপরীতে দেশে এসেছে ৩ হাজার ২৬৯ কোটি ডলার। আগের ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৩ হাজার ১৪৫ কোটি ডলারের পোশাক। দেশে আয় আসে ২ হাজার ৫০১ কোটি ডলার। এ ক্ষেত্রে অর্থ পাচারের সন্দেহটিও সামনে চলে আসছে।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই রপ্তানি পরিসংখ্যান ও রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসনে বড় তফাত থাকছে। সাম্প্রতিক সময়ে এটি বেড়েছে। এনবিআর, ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি পরিসংখ্যানে যে পার্থক্য, তাতে সরকারের চলতি হিসাব কিংবা রিজার্ভ নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হতে পারে। রপ্তানির প্রকৃত পরিস্থিতি লুকিয়ে রাখার এই প্রবণতা অর্থনীতির নাজুক সময়কে মোকাবিলা করা কঠিন করে তোলে।

গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, রপ্তানির প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ না করলে প্রকারান্তরে অর্থ পাচারের সুযোগ তৈরি হয়। তাতে রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঋণপত্র খোলা ও ঋণপত্র নিষ্পত্তির বিষয়গুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের খতিয়ে দেখা দরকার। অসংগতি পেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.