বিগত মজুরি বোর্ডগুলোতে বেশ কিছু দুর্বলতা দেখা গেছে। এসব দুর্বলতা কাটাতে বৈঠকের কার্যবিবরণী প্রকাশ, বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ, আইএলওর সুপারিশ করা মজুরি নির্ধারণের পদ্ধতি গ্রহণ, কর্মীদের জীবনযাত্রার ব্যয়ের খাত নতুন করে নির্ধারণের মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় গত ৯ এপ্রিল রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড ঘোষণা করেছে। সার্কুলার অনুযায়ী, মালিক ও শ্রমিকপক্ষের মনোনীত প্রতিনিধিরা মজুরি বোর্ডের তিন স্থায়ী সদস্যের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা ও দর-কষাকষির মাধ্যমে নতুন ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করবেন। এ জন্য তাঁদের ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছে।
পরে তাঁদের প্রস্তাব শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে গেজেট আকারে জারি হবে। তার মানে আগামী অক্টোবর নাগাদ পোশাক খাতে নতুন মজুরি ঘোষণার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অবশ্য জরুরি ক্ষেত্রে আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন হলে সময় বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে।
বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে নিয়মিত বিরতিতে ২০০৬, ২০১০, ২০১৩ ও ২০১৮ সালে তৈরি পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষিত হয়েছে। সর্বশেষ তিনবার ঘোষণা করা হয়েছে বর্তমান রাজনৈতিক সরকারের মেয়াদকালে। এ সময়ে মজুরি নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় যেমন আংশিক উন্নতি হয়েছে, তেমনি মজুরি নির্ধারণে দুর্বলতাও দেখা গেছে; বরং বলা চলে, মজুরি নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় দুর্বলতার পাল্লাই ভারী।
বিগত দশকের অভিজ্ঞতার বলা যায়, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন-পরিবর্ধন জরুরি। নতুন মজুরি বোর্ড এ ক্ষেত্রে উদ্যোগ নিতে পারে। এপ্রিলে মজুরি বোর্ড ঘোষণার পর কেবল একটি বৈঠক হয়েছে। আরও কয়েকটি বৈঠকের পর মজুরিসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে বোর্ড। মজুরি নির্ধারণে দুর্বলতাগুলো প্রচলিত কাঠামোর মধ্যেই বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। আলাপ-আলোচনা করে তারা এগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নিতে পারে।
বোর্ডের সভার কার্যবিবরণী প্রকাশ
মজুরি বোর্ডে মালিক, শ্রমিক ও সরকারের প্রতিনিধি কী আলাপ করেছেন, কোন পক্ষের প্রতিনিধি কী বক্তব্য দিয়েছেন, তার ভিত্তিতে বোর্ডের চেয়ারম্যান কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তা জনসমক্ষে জানার সুযোগ থাকে না। এতে বিভিন্ন পক্ষ দর-কষাকষিতে কী ভূমিকা নিচ্ছেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। এমনকি যৌক্তিকভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে কি না, নাকি কোন কোন পক্ষের অবাঞ্ছিত চাপ সিদ্ধান্ত গ্রহণকে প্রভাবিত করছে—তা সংশ্লিষ্ট সবার জানা উচিত। তাই, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির দৃষ্টিতে মজুরি বোর্ডের উচিত প্রতিটি বৈঠকের কার্যবিবরণী প্রকাশ করা।
বোর্ডে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে মতামতের জন্য আমন্ত্রণ
শ্রম আইন অনুযায়ী ন্যূনতম মজুরি ১২টি বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে নির্ধারণের কথা বলা হলেও প্রায় প্রতিবারই মজুরি নির্ধারণসংক্রান্ত আলোচনা মাত্র তিন বা চারটি বিষয়ের মধ্যে আটকে থাকে। যেমন মূল্যস্ফীতি, রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, রপ্তানির পোশাকমূল্য ও শ্রমিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় ইত্যাদি। এর বাইরে আরও যে সাত–আটটি সূচক নিয়ে পর্যালোচনা করার কথা আইনে বলা আছে, তা বিবেচনা করা হয় না। এর মধ্যে রয়েছে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা, অন্যান্য তুলনীয় খাতের মজুরি, অন্যান্য দেশের ন্যূনতম মজুরি, মজুরিজনিত উৎপাদন ব্যয় ও মালিকপক্ষের মুনাফা ইত্যাদি। এসব বিষয়ের ক্ষেত্রে তথ্যের ঘাটতি ও গবেষণালব্ধ উপাত্তের ও বিশ্লেষণের যে প্রয়োজন, তা মজুরি বোর্ডের কাছে প্রায়ই থাকে না। এসব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত দিতে সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা গবেষককে আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে।
সঠিক তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন ও যৌক্তিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন
বোর্ডের আলোচনা সম্পর্কে জানা যায়, বিভিন্ন পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্ধারিত সূচকের ওপর সীমিত পরিমাণ তথ্য-উপাত্ত আলোচনায় উপস্থাপন করা হয়। এসব তথ্য-উপাত্ত প্রায়ই আংশিক বা খণ্ডিত থাকে। পাশাপাশি যৌক্তিক অন্যান্য বিচার্য সূচকের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন ও বিশ্লেষণ করা হয় না। ফলে আলোচনায় প্রায়ই ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপনের ব্যাপারে চেয়ারম্যানের নির্দেশনা দেওয়া জরুরি।
মজুরি নির্ধারণে গ্রহণযোগ্য হিসাবপদ্ধতি ব্যবহার
বর্তমানে বোর্ডে যে প্রক্রিয়ায় মজুরি নির্ধারিত হয়, তাতে কোনো নিয়মবদ্ধ হিসাবপদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না। ফলে নির্ধারিত মজুরির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। এ ক্ষেত্রে আইএলওর সুপারিশ করা মজুরি নির্ধারণের পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে। এ পদ্ধতিতে মজুরি নির্ধারণে চার সদস্যের একটি পরিবারের খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত মাসিক আর্থিক প্রয়োজন এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ সঞ্চয়ের সুযোগ বিবেচনা করা হয়। পরিবারের উপার্জনকারী সদস্য একাধিক হলে তা–ও বিবেচনা করা হয়। পদ্ধতিটি আন্তর্জাতিকভাবে ‘অ্যাংকর পদ্ধতি’ হিসেবে পরিচিত।
সিপিডি ২০১৩ ও ২০১৮ সালে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে গ্রেড–৭–এর শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরির প্রাক্কলিত হিসাব করেছিল। মজুরি বোর্ড তাদের আগামী বৈঠকে এই হিসাবপদ্ধতি গ্রহণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
দেখা যায়, আমাদের দেশে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার পাশাপাশি গ্রেডভিত্তিক ন্যূনতম মজুরি স্কেল ঘোষণা করা হয়। কারখানার সক্ষমতা, শ্রমিকের দক্ষতা, পণ্যপ্রতি বাড়তি আয় ইত্যাদি বিবেচনা করে স্কেলের বাইরে শ্রমিকদের ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার সুযোগ থাকলেও বর্তমান কাঠামোয় তা বিবেচনা করা হয় না। এ ক্ষেত্রে মজুরি স্কেলের বাইরে কারখানার নিজস্ব বিবেচনায় ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার সামর্থ্য থাকলে তা বাস্তবায়নের সুযোগ থাকা প্রয়োজন। বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও সরকারের কলকারখানা অধিদপ্তরের এসব সুবিধা বাস্তবায়নে সার্বিক সহযোগিতা দরকার।
মজুরিকাঠামো ক্রমে দুর্বল হয়েছে, নজরে আনা দরকার
আগে মজুরিকাঠামো বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শ্রমিকদের সার্বিক মজুরি বাড়লেও মজুরিকাঠামো দুর্বলতর হয়েছে। ২০০৬ সালে মজুরিকাঠামোতে সপ্তম গ্রেডের শ্রমিকদের মূল মজুরি সামগ্রিক মজুরির ৬২ শতাংশ নির্ধারিত হলেও ২০১৮ সালের মজুরিকাঠামোতে তা কমে ৫১ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
এতে শ্রমিকদের অতিরিক্ত কাজের পাওনা, যা মূল মজুরির ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়, তা ইউনিটপ্রতি কমে গেছে। শুধু তাই নয়, মূল মজুরির ভিত্তিতে নির্ধারিত অন্যান্য পাওনা, যেমন মাতৃত্বকালীন আর্থিক সুবিধা, গ্র্যাচুয়িটি ইত্যাদিও আগের তুলনায় কমে গেছে। তবে ২০১৮ সালের মজুরিকাঠামোয় মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সংগতি রেখে প্রতিবছর ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক।
তবে বর্তমানের উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় এই হার যথেষ্ট নয়। আবার এই ইনক্রিমেন্ট পেতে তিন বছর টানা একই কারখানায় কাজ করার শর্ত শিথিল করে ছয় মাস করা যেতে পারে।
শ্রমিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় মজুরিকাঠামোয় থাকতে হবে
১৯৮০ বা ১৯৯০–এর দশকে একজন শ্রমিকের জীবনযাত্রার ব্যয়ের মূল অংশ খাদ্য খাতে ব্যয় হলেও এখন খাদ্যবহির্ভূত খাতে বেশি ব্যয় হচ্ছে। ২০১৮ সালে সিপিডি পরিচালিত জরিপে পোশাকশ্রমিকদের খাদ্যবহির্ভূত ব্যয় পাওয়া গেছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
এ ধারা অব্যাহত থাকলে, ভবিষ্যতে খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ই প্রধান হয়ে উঠবে। অথচ বিগত মজুরি কাঠামোগুলোতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। যেমন মূল বেতন, খাদ্য ভাতা, বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা অপরিবর্তিত খাত হিসেবে রয়ে গেছে।
সিপিডির জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে একজন শ্রমিকের পরিবারে সন্তানের শিক্ষাব্যয়, পরিবহন ও যাতায়াত ব্যয়, যোগাযোগ ও বিনোদন ব্যয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যয় হিসেবে যুক্ত হয়েছে। সন্তানের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা এবং শ্রমিকের বিশেষত, নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যজনিত ব্যয় অনেক বেড়েছে। বর্তমান মজুরি কাঠামোয় এসব বিষয় একেবারে অনুপস্থিত। আশা করি, মজুরি বোর্ড এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে মজুরি কাঠামো পুনর্নির্ধারণ করবে। একই সঙ্গে শ্রমিকদের বিভিন্ন খাতে পরিবর্তিত ব্যয়ের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখবে।
গ্রেড–৭-এর নিচে বেতন ঘোষণা বন্ধ করা উচিত
বিগত দুটি সার্কুলারে দেখা গেছে, গ্রেড–৭ সর্বনিম্ন গ্রেড ঘোষণার পর নিচে একটি নোট যুক্ত করে ‘শিক্ষানবিশ’ হিসেবে আরেকটি গ্রেড যুক্ত করা হয়েছে। ২০১৮ সালের মজুরিকাঠামোয় সপ্তম গ্রেডে ৮ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি ছিল, ‘শিক্ষানবিশ’ ক্যাটাগরিতে ৫ হাজার ৯৭৫ টাকা মাসিক মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। উপরন্তু ২০১৮ সালে শিক্ষানবিশ ক্যাটাগরিকে একটি পূর্ণাঙ্গ স্কেলে রূপান্তর করা হয়েছে। শিক্ষানবিশকে আলাদা গ্রেড হিসেবে বিবেচনার সুযোগ নেই। এর সময়কাল কোনোভাবেই এক মাসের বেশি হওয়া উচিত নয়। নতুন মজুরি ঘোষণাকালে এ নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে।
নিয়মবহির্ভূত সাব–গ্রেড বন্ধ করা
তৈরি পোশাক খাতে সাতটি গ্রেড চালু রয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন গ্রেডে বিশেষ করে ৫, ৪ ও ৩ নম্বর গ্রেডে সাব–গ্রেডের প্রচলন দেখা যায়। যেমন এ, বি, সি ইত্যাদি নামে একই গ্রেডে সাব–গ্রেডের প্রচলন প্রকৃত অর্থে শ্রমিকের পরবর্তী গ্রেডে উত্তরণকে শ্লথ করার নামান্তর। এতে শ্রমিকেরা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী প্রাপ্য গ্রেড বা স্কেল থেকে বঞ্চিত হন। উপরন্তু পোশাক খাতে বিভিন্ন গ্রেডে দক্ষতার পার্থক্য খুব বেশি নয়। বিশেষত ৬ ও ৫ নম্বর গ্রেডের শ্রমিকদের দক্ষতাজনিত পার্থক্য বেশি না থাকায় এ দুটি গ্রেড একত্র করে একটি গ্রেড ঘোষণা করা যায়।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের কারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের এসব বিষয় ঘনিষ্ঠভাবে তদারক করে সাব–গ্রেড বন্ধের ব্যবস্থা নিতে পারে। এ
ক্ষেত্রে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সার্বিক সহযোগিতা দরকার। মজুরি বোর্ড এ ক্ষেত্রে অনুশাসন দিতে পারে।
সরকারঘোষিত আইনি কাঠামো পরিপালনে বিদেশি ক্রেতারা (ব্র্যান্ড বা বায়ার) নীতিগতভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। ইতিপূর্বে দেখা গেছে, অনেক ক্রেতা সরকারঘোষিত নতুন মজুরি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেন না।
সুতরাং নতুন ঘোষিত মজুরি কাঠামো আইনগতভাবে পরিপালনে ক্রেতাদের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা থাকা প্রয়োজন। স্থানীয়ভাবে সব আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের প্রতিনিধি, বায়ার্স ফোরাম এবং ব্র্যান্ডগুলোর কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া উচিত। ২০১৮ সালে মজুরি ঘোষণার পর কিছু ক্রেতা এমন ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
ঘোষিত নতুন মজুরির বাড়তি অংশের ব্যয় এককভাবে যেন মালিকদের ওপর চাপানো না হয়, সেই ঘোষণা ক্রেতারা দিতে পারেন। একই সঙ্গে ক্রেতাদের দেওয়া বাড়তি মজুরির মূল্যাংশ যেন শ্রমিকের পান, সেটি নিশ্চিত করার ঘোষণা থাকা প্রয়োজন। এসব বিষয় যথাযথভাবে বাস্তবায়নে শ্রমিকদের মজুরিসহ পাওনা ডিজিটাল বা অনলাইনভিত্তিক হওয়া জরুরি।
শ্রমিক–অধ্যুষিত এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও বিনোদনকেন্দ্র
শিল্পশ্রমিক–অধ্যুষিত এলাকায় বিশেষ করে গাজীপুর, সাভার, টঙ্গী, শ্রীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও চট্টগ্রাম ইত্যাদি এলাকায় সরকারি স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ইত্যাদি কম। ফলে শ্রমিকদের বাড়তি ব্যয়ে বেসরকারি স্কুল, কিন্ডারগার্টেন, কলেজ, কারিগরি শিক্ষা কেন্দ্র, মাদ্রাসা ইত্যাদিতে সন্তানদের পড়াশোনা করাতে হয়। বেশি ব্যয়ে বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে স্বাস্থ্যসেবা নিতে হয়।
জনঘনত্বের কারণে এসব এলাকায় সরকারি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান বেশি বেশি প্রয়োজন। এসব সরকারি প্রতিষ্ঠান থাকলে, কম খরচে সেবা পেলে শ্রমিকদের পারিবারিক ব্যয় অনেক কমে যাবে। এসব সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফলে তাদের বেশি মজুরির প্রয়োজন পড়ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় শ্রমিক–অধ্যুষিত এলাকার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের লক্ষ্যে বিশেষ উদ্যোগ নিতে পারে। এ বিষয়ে মজুরি বোর্ডের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে অনুরোধ জানানো যেতে পারে।
- ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম গবেষণা পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)