বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপিত হলো বাংলাদেশ পুলিশের সবচেয়ে বড় ইউনিট ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ৪৮ তম প্রতিষ্ঠা দিবস। শনিবার বিকেলে ডিএমপি সদর দপ্তর থেকে বের হওয়া শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয় কর্মসূচি। পরে রাজারবাগে তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ হয়। অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা বরকত উল্লাহ বুলুর সঙ্গে করমর্দন ও কুশল বিনিময় করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই পুলিশের অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতাদের উপস্থিতি দেখা গেল।
অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বরকত উল্লাহ বুলুকে হাসিমুখে করমর্দন করতে দেখা যায়। এ সময় সেখানে ডিএমপি কমিশনারসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তা, ঢাকা-১৬ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ, ঢাকা-১৮ আসনের এমপি মোহাম্মদ হাবিব হাসান, রংপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির এমপি মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিয়া রহমান উপস্থিত ছিলেন।
পরে বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ডিএমপির আমন্ত্রণ পেয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। পুলিশ জনতার প্রতিপক্ষ নয় বন্ধু, তারা জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করবে- এই বার্তা দিতেই আমরা সেখানে যাই। এরমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসে কুশল বিনিময় করেন।
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, পুলিশ জনগণের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট থাকবে, সহায়তা করবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
ডিএমপি সূত্র জানায়, বিএনপির ১০ নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। প্রতি বছরই তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। এরপর প্রতিষ্ঠা দিবসের কেক কাটা, বিশেষ তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মূল অনুষ্ঠানের পর সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক আয়োজনে অংশ নেন দেশের খ্যাতিমান অভিনেতা, অভিনেত্রী, সংগীতশিল্পী ও নৃত্যশিল্পী এবং ডিএমপির শিল্পীগোষ্ঠী।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, এমপিসহ রাজনৈতিক নেতা, বিচারক, সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
রাজারবাগের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের ভূমিকা মুখ্য। পুলিশ সেই কাজটি ঠিকঠাক করতে পারছে বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। ঢাকায় দুই কোটি মানুষের বাস। এখানে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা সহজ নয়। তবে ডিএমপি ঢাকাবাসীকে নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের পুলিশকে জনগণের পুলিশ হওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন। আজ পুলিশ সে জায়গায়টিতে এসেছে। জনগণের আস্থার জায়গা, বিশ্বাসের জায়গায় এসেছে। পুলিশ আজ জনগণের বন্ধু। বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টাতেই ডিএমপির যাত্রা শুরু হয়েছিল।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ডিএমপি হলো বাংলাদেশ পুলিশের মুখচ্ছবি। ডিএমপিকে দেখলে বোঝা যায় পুলিশ বাহিনী কীভাবে কাজ করছে, কতটুকু সেবা দিচ্ছে, কতটা জনবান্ধব হয়ে উঠেছে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, নগরবাসীর সঙ্গে ডিএমপির সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখাই হবে মূল লক্ষ্য। ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আগুন সন্ত্রাস এবং জঙ্গি দমনে ডিএমপির ভূমিকা স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি জঙ্গি, সন্ত্রাস ও নাশকতা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালায়, তাহলে জনগণের নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।