‘পুতিনকে খারাপ মানুষ বলে মনে করি না। তিনি সুপার স্মার্ট’—বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। ট্রাম্পপন্থী সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত টাকার কার্লসনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন তিনি। শুধু তা–ই নয়, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে তিনি যে ‘পছন্দ’ করেন, তা–ও সাক্ষাৎকারে জানিয়ে দিয়েছেন উইটকফ।
১০ দিন আগেই পুতিনের সঙ্গে দেখা করেছেন উইটকফ। কার্লসনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ‘অমায়িক ও অকপট’ ব্যক্তি বলে উল্লেখ করেন। উইটকফের ভাষ্যমতে, পুতিন তাঁকে বলেছেন, গত বছর ট্রাম্প হত্যাচেষ্টার শিকার হওয়ার পর তিনি তাঁর জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। উপহার হিসেবে ট্রাম্পের একটি প্রতিকৃতিও আঁকিয়েছেন। এটা নিশ্চিতভাবে ট্রাম্পের ‘হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল।’
ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে রাশিয়ার উত্থাপন করা বিভিন্ন যুক্তি আবার তুলে ধরেন ট্রাম্পের দূত। রাশিয়ার মতো তিনিও ইউক্রেনকে ‘একটি মিথ্যা দেশ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। পাশাপাশি ইউক্রেনে দখল করা অঞ্চলগুলো রাশিয়ার ভূখণ্ড বলে বিশ্ব কখন স্বীকৃতি দেবে—সে প্রশ্নও রাখেন স্টিভ উইটকফ।

ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে দেশটিতে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। সাক্ষাৎকারে তা বাতিল করে দেন উইটকফ। স্টারমার ও ইউরোপের অন্য নেতাদের দেওয়া প্রস্তাবটি ‘অতিসরল’ ধারণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনায় যুদ্ধবিরতির যে আলোচনা চলছে, তাতে মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উইটকফ। এ নিয়ে তিনি রাশিয়া ও ইউক্রেন—দুই দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছেন। তবে রাশিয়ার সেনাসদস্যরা ইউক্রেনের যে পাঁচটি অঞ্চল অধিকৃত করেছে বা আংশিক দখলে নিয়েছে, সাক্ষাৎকারে সেগুলোর নাম বলতে পারেননি উইটকফ।
সাক্ষাৎকারে স্টিভ উইটকফ বলেন, ‘তথাকথিত চারটি অঞ্চলই এই সংঘাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দনবাস, ক্রিমিয়া—কী জানি নাম, আপনি তো জানেনই এবং আরও দুটি অঞ্চল।’ আসলে রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনের পাঁচটি অঞ্চল বা প্রশাসনিক এলাকা হলো লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝঝিয়া, খেরসন ও ক্রিমিয়া। লুহানস্ক ও দোনেৎস্কের অধিকাংশ অঞ্চল দনবাসের অন্তর্ভুক্ত।

যুদ্ধবিরতি নিয়ে এরই মধ্যে রাশিয়া ও ইউক্রেনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌদি আরবে বৈঠক করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। একই বিষয়ে সৌদি আরবে আজ রোববার ও আগামীকাল সোমবারও বৈঠকের কথা রয়েছে। এর আগে গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে কিয়েভে রুশ বাহিনী ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন। এতে পাঁচ বছরের এক শিশুসহ তিনজন মারা গেছে। আহত আটজন।
আগের দিন শুক্রবার ইউক্রেনের দক্ষিণের শহর জাপোরিঝঝিয়ায় রাশিয়ার হামলায় একই পরিবারের তিনজন প্রাণ হারান। এরই মধ্যে আজ রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা নিজেদের দক্ষিণাঞ্চল ও ক্রিমিয়ার আকাশ থেকে ৫৯টি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। ক্রিমিয়া উপদ্বীপটি ২০১৪ সালে অবৈধভাবে দখল করে নেয় রাশিয়া।

সাক্ষাৎকারে রাশিয়া কী কারণে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় সামরিক অভিযান শুরু করেছিল, তা নিয়েও কথা বলেছেন স্টিভ উইটকফ। এ প্রসঙ্গেও তিনি ক্রেমলিনের সুরে কথা বলেন। কৃষ্ণসাগর যুদ্ধবিরতি ‘আগামী সপ্তাহ বা তার কাছাকাছি সময়ে কার্যকর হবে’ বলে জানিয়েছেন উইটকফ। আর ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি ‘বেশি দূরে নয়’ বলেও মন্তব্য করেন ট্রাম্পের এই বিশেষ দূত।
সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার পর ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে কীভাবে মিলেমিশে কাজ করতে চান, সেই বিষয়েও বিস্তারিত কথা বলেছেন উইটকফ। অনেকটা জিজ্ঞাসার সুরে তিনি বলেন, ‘এমন একটি বিশ্ব কে না চায়, যেখানে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে মিলে ভালো ভালো কাজ করবে, আর্কটিকে নিজেদের জ্বালানিনীতিতে কীভাবে সমন্বয় আনা যায়—সে বিষয়ে চিন্তা করবে, সম্ভব হলে জলপথ ভাগাভাগি করবে, একসঙ্গে ইউরোপে এলএনজি গ্যাস পাঠাবে, আর হয়তো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিষয়েও সহযোগিতা করবে।’
বিবিসি