পুকুর পুনঃখননের টাকা জলে

0
157
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার এনায়েতপুর পুকুরটির পানি বিশুদ্ধকরণের পর ব্যবহারের জন্য পাশেই নির্মিত ট্যাংকি অযত্নে পড়ে আছে

সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য ২৬টি পুকুর খনন করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। সমীক্ষা না করেই খনন করায় এগুলো কোনো কাজে আসছে না

ভূ-উপরিস্থ পানি পানে অভ্যস্ত নয় গাইবান্ধার মানুষ, তারপরও গোবিন্দগঞ্জে ২৬টি পুকুর পুনঃখনন করে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। পুনঃখনন বাবদ দেড় কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়। পানি খাওয়ার উপযোগী করতে পুকুরের তীরে বসানো হয় ট্যাংক। এখান থেকে মানুষের সুপেয় পানি সংগ্রহের কথা। দৃশ্যত এসব পুকুরের পানি পান দূরের কথা, কেউ ব্যবহারও করছেন না। উল্টো এগুলো ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকায় পুকুরের চারপাশের কাঁটাতারের বেড়া, গেট, নলকূপ ট্যাংক চুরি গেছে। প্রকৃতপক্ষে সঠিক পরিকল্পনার অভাবে যথাযথভাবে সমীক্ষা না করেই পুকুরগুলো পুনঃখননে সরকারের দেড় কোটি টাকার এই প্রকল্প পুরোটাই অপব্যয় হয়ে গেছে।

গাইবান্ধা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সুত্র জানায়, অধিদপ্তরের পুকুর খনন, পুনঃখনন ও পুনরুদ্ধার প্রকল্পের আওতায় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সরকারি ২৬টি পুকুর পুনঃখনন করা হয়।

২০১৮ সালে এসব পুকুর পুনঃখননে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এ কাজ বাস্তবায়নে সরকার দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। ২০১৯ সালে পুনঃখননকাজ শুরু হয়। শেষ হয় ২০২০ সালে। ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুছ অ্যান্ড ব্রাদার্স কাজের দায়িত্ব পায়।

প্রতিটি পুকুর সংরক্ষণে চারদিকে ইট বিছানো রাস্তা, কাঁটাতারের বেড়া, প্রবেশপথে লোহার গেট, অধিদপ্তরের বিলবোর্ড স্থাপিত হয়। বিলবোর্ডে লেখা ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে পুনঃখনন করা সংরক্ষিত পুকুর। পুকুরে গোসল করা, কাপড় কাচা, হাত-পা ধোয়া ও মাছ চাষ সম্পূর্ণ নিষেধ। পুকুরের তীরে ফিল্টারের আদলে নির্মিত ইটের তৈরি ট্যাংক। সেখানে বালু ও পাথর দিয়ে পানি পরিশোধন ব্যবস্থা রাখার কথা। ট্যাংকে সংযুক্ত অগভীর নলকুপ। নলকূপ দিয়ে পুকুর থেকে ট্যাংকে পানি তোলার কথা। ট্যাংকের টেপ থেকে মানুষের এই পানি পান ও নানা কাজে ব্যবহার করার কথা।

গত বুধবার সকালে অন্তত ১০টি পুকুর ঘুরে দেখা গেছে, তদারকির অভাবে গত আড়াই বছরে কাঁটাতারের বেড়া, প্রবেশপথে লোহার গেট, বিলবোর্ড, নলকূপ, রাস্তার ইট, টেপকলসহ সবকিছু চুরি হয়ে গেছে। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে প্রকল্পের স্মৃতিচিহ্ন। এ সুযোগে স্থানীয় লোকজন কিছু পুকুরে মাছ চাষ করছেন।

গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক এম এ মতিন মোল্লা বলেন, এখানকার মানুষ ভূ-উপরিস্থ পানি পানে অভ্যস্ত নন। ব্যবহারেও আগ্রহ নেই। প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তাও ছিল না। কারণ, এখন মানুষের সক্ষমতা বেড়েছে। রুচির পরিবর্তন হয়েছে। পানির স্তর নিচে নামলেও নলকূপ স্থাপনের আর্থিক সামর্থ্য তাঁদের রয়েছে। তারপর স্থানীয় মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা সমীক্ষা না করেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখানো হয়।

তবে প্রকল্প তৈরির আগে এর প্রয়োজনীয়তার কথা ভাবা ও সমীক্ষা কেন করা হয়নি সেসব বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি গাইবান্ধা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেজওয়ান হোসেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.