পিসিওএস (পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম) একধরনের হরমোনজনিত রোগ। কিশোরী, তরুণী থেকে শুরু করে মেনোপজের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন, এমন নারীও পিসিওএসে ভোগেন। এই বিষয়ে আলোচনা করেন ওজিএসবি–এর সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ফেরদৌসী বেগম
আমাদের শরীরে ইনসুলিন নামের একটি হরমোন আছে, যা আমাদের খাদ্যের শর্করাকে হজম করে। পিসিওএসে আক্রান্ত নারীর এই হরমোনের প্রতি সংবেদনশীলতা কমে যায়। ফলে তাঁদের শরীরে শর্করা ঠিকমতো হজম হয় না। এতে ওজন বেড়ে যাওয়াসহ নানা রকম অসুবিধা দেখা যায়।
বৈজ্ঞানিকভাবে পিসিওএস হওয়ার কারণ আমরা এখনো খুব ভালো করে জানি না। তবে ব্যাকটেরিয়াজনিত, বংশগত, দেহে পুরুষ হরমোনের আধিক্য, ওজন বেড়ে যাওয়া, অন্ত্রের প্রদাহ, পরিবেশগত কারণ, অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও পানি কম পান করার মতো বিভিন্ন বিষয় পিসিওএসের জন্য দায়ী হতে পারে।
এটি প্রতিরোধ করতে চাইলে শিশুদের জন্য খেলাধুলা করার ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরেও নানা রকম খেলাধুলা ও ব্যায়াম করতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার না খেয়ে প্রাকৃতিক খাবার খেতে হবে। বাদাম, শাকসবজি, মাছ খুব উপকারী খাবার। অন্ত্রের যত্ন নেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ। অন্ত্রের যত্ন নিতে সপ্তাহে কমপক্ষে ১৯ ধরনের সবজি খাওয়া উচিত। যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করাও প্রয়োজন।
আজকাল শৈশব থেকেই পরীক্ষার ফলাফল ভালো করাসহ বিভিন্ন রকমের মানসিক চাপে থাকে শিশুরা। তার ওপর যখন পিসিওসের কারণে কিশোরীদের ওজন বেড়ে যায়, মুখে ব্রণ হয় কিংবা অতিরিক্ত লোম উঠতে থাকে তখন তারা মানসিকভাবে সংকুচিত হয়ে পড়ে। তাই আক্রান্ত কিশোরীর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
কারণ, একবার রোগটি বেড়ে গেলে কমিয়ে আনা মুশকিল। আমরা অনেক সময় ৮০ থেকে ৯০ কেজি ওজনের কিশোরীও দেখি। রোগটির ব্যাপকতা কমানোর জন্য অ্যান্টি-অ্যান্ড্রোজেন ও ইনসুলিন সেন্সিটাইজারের মতো কিছু ওষুধ আমরা দিয়ে থাকি।
পিসিওএস মানেই কিন্তু বন্ধ্যাত্ব নয়। আমাদের সমাজে একটি ধারা আছে, পিসিওএস হয়েছে তাই মেয়েকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দাও। আমাদের অনেক মায়েরা আছেন, যাঁদের মাসিক অনিয়মিত। এর মধ্যেই তাঁরা অন্তঃসত্ত্বাও হচ্ছেন।