পিআর পদ্ধতির পক্ষে দেশের ৭১ শতাংশ মানুষ: জরিপ

0
18
পিআর পদ্ধতির পক্ষে দেশের ৭১ শতাংশ মানুষ: জরিপ

প্রস্তাবিত জাতীয় সনদ চূড়ান্তকরণে জনমত যাচাইয়ের তথ্য উপস্থাপন করেছে নাগরিক সংগঠন ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন’। জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৭১ শতাংশ মানুষ আনুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠনের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন।

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই জরিপের ফল উপস্থাপন করা হয়।

এতে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ (নিম্নকক্ষ) ও সিনেট (উচ্চকক্ষ) নিয়ে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে মত দিয়েছেন জরিপে অংশ নেওয়া ৬৯ শতাংশ মানুষ। আনুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) উচ্চকক্ষের আসন বণ্টনের পক্ষে ৭১ শতাংশ মানুষ। এছাড়া একই ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকার বিধানের পক্ষে ৮৯ শতাংশ।

সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়, ২০১৩ সালে কতগুলো মৌলিক বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি খসড়া ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়ন করে সে বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে সংগঠনটি। সুজনের পক্ষ থেকে কাঙ্ক্ষিত জাতীয় সনদের একটি খসড়া তৈরি করে জনমত যাচাইয়ের লক্ষ্যে সারাদেশে ১৫টি সংলাপের আয়োজন করে। এই সনদ চূড়ান্তকরণের জন্য মে থেকে জুন মাসে ৪০টি প্রশ্ন সম্বলিত একটি জনমত যাচাই জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। এতে ১ হাজার ৩৭৩ জন অংশগ্রহণ করেন। যাদের মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৩৩ জন, নারী ৩৩৫ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ ৫ জন।

জরিপে আইনসভা সংস্কারের প্রস্তাবের বিষয়ে বলা হয়, নিম্নকক্ষে নারীদের জন্য ১০০টি সংরক্ষিত আসনে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৬৩ শতাংশ মানুষ। নিম্নকক্ষে বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার নিয়োগের পক্ষে ৮৬ শতাংশ মানুষ। এ ছাড়া সুজন প্রস্তাবিত সিনেটে নারীদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসনের পক্ষে ৬৯ শতাংশ, বিরোধী দল থেকে উচ্চকক্ষে ডেপুটি স্পিকার নিয়োগের পক্ষে ৮২ শতাংশ এবং একই ব্যক্তির একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান না হতে পারার বিধানের পক্ষে ৮৭ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছেন।

শাসন পদ্ধতির পরিবর্তনের বিষয়ে জরিপে বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকারের পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৭ শতাংশ মানুষ। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য নির্বাচকমণ্ডলীর (ইলেক্টরাল কলেজ) পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৬ শতাংশ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধির পক্ষে ৮৮ শতাংশ, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধনের পক্ষে ৮৭ শতাংশ এবং রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ‘সাম্য’, ‘মানবিক মর্যাদা’, ‘সামাজিক সুবিচার’, ‘গণতন্ত্র’ এবং ‘ধর্ম নিরপেক্ষতা ও সম্প্রীতি’-এর পক্ষে ৯০ শতাংশ মানুষ।

জরিপে আরও বলা হয়, মৌলিক অধিকারের পরিধি বৃদ্ধির পক্ষে ৮৮ শতাংশ, মৌলিক অধিকার শর্তহীন করার পক্ষে ৮৪ শতাংশ এবং সকল সাংবিধানিক পদ ও তিন বাহিনীর প্রধানদের নিয়োগের জন্য একটি সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের পক্ষে ৮০ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন ও প্রস্তাবিত স্থানীয় সরকার কমিশনকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতির পক্ষে ৯০ শতাংশ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে ৮৩ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছেন।

নির্বাচনী সংস্কারের অগ্রাধিকার ও রূপরেখার বিষয়ে বলা হয়, নির্বাচনকালে নির্বাহী বিভাগের সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের অনুমতি গ্রহণের বিধানের পক্ষে মত ৮৭ শতাংশ মানুষের। স্বাধীন সীমানা নির্ধারণ কর্তৃপক্ষ চান ৮৪ শতাংশ মানুষ। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনের সুষ্ঠুতা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রত্যয়ন করে গণবিজ্ঞপ্তি আকার প্রকাশের বিষয়ে ৮৬ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছেন। নির্বাচনী ব্যয় নিরীক্ষণ চায় ৮৮ শতাংশ অংগ্রহণকারী। অন্যদিকে, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিগ্রস্ত ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দলের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য করার বিষয়ে একমত ৯২ শতাংশ মানুষ। পূর্ববর্তী নির্বাচনের অনিয়মের তদন্ত চান ৭৯ শতাংশ মানুষ। প্রবাসী ভোটারদের নিবন্ধন চান ৮৭ শতাংশ মানুষ। না ভোটের বিধান পুনঃপ্রবর্তন চান ৮৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। এছাড়া জাতীয় ডেটা নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ গঠনের পক্ষে ৮৮ শতাংশ মানুষ।

রাজনৈতিক দলের সংস্কারের বিষয়ে জরিপে বলা হয়, পাঁচ বছর পর পর দলের নিবন্ধন নবায়ন করার পক্ষে ৭৬ শতাংশ মানুষ। দলগুলোর আর্থিক লেনদেনে ব্যাংকিং চ্যানেল ও অডিট হিসাব প্রকাশের পক্ষে ৯১ শতাংশ অংশগ্রহণকারী। গোপন ভোটে নির্বাচিত দলীয় মনোনয়ন প্যানেল নির্বাচিত করে প্রার্থী মনোনয়নের পক্ষে ৮৩ শতাংশ মানুষ। এছাড়া সংবিধান সংশোধনের পক্ষে ৮৫ শতাংশ, দলের লেজুড়বৃত্তিক সংগঠন না থাকা ও বিদেশী শাখা না থাকার পক্ষে ৮০ শতাংশ এবং স্থায়ী স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের পক্ষে ৯০ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছেন।

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনতা ও বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে জরিপে বলা হয়, বিভাগীয় শহরগুলোতে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের পক্ষে ৮৮ শতাংশ, শক্তিশালী স্থানীয় সরকারের পক্ষে ৮৪ শতাংশ, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রবর্তনের পক্ষে ৮৫ শতাংশ, উপজেলা উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপনের পক্ষে ৮১ শতাংশ এবং স্থানীয় সরকার কমিশন গঠনের পক্ষে ৯০ শতাংশ মানুষ মত দিয়েছেন।

সুজনের কেন্দ্রীয় সদস্য জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্য ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। জনমতের ফল উপস্থাপন সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য মো. একরাম হোসেন।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.